পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বসেই বটে ! মিঃ সিংহ বললেন-তারপর এক জায়গায় আমার সত্যিই মনে হোল পোংসা নামক জায়গাতে বেচে থাকতে আর বোধ হয় পৌছবো না। তখন নতুন বিয়ে করেছিা! মনে হোল এখানে বসে পকেটের কাগজ নিয়ে একটা উইল লিখে রাখি। এই যেন হাতী কি বাঘ এসে ঘাড়ে পড়লো বলে। আর কোন আশাই নেই। শােধ দাঁতে দাঁত চেপে মনের জোরে পথ চললাম। অবশেষে বন ক্ৰমে যেন একটা পাতলা হয়ে এল। একটা পাহাড়ের ওপর একটা ছোট বাংলো পাওয়া গেল। লোকালয় দেখে ধড়ে প্রাণ এল। তখন বোলা তিনটে । জিজ্ঞেস করে জানলাম আমার গন্তব্যস্থান। এখান থেকে আরও মাইল। ছয়েক। কোল-বোংসায় যে বলেছিল দশ মাইল, সেটা সম্পণে ভুল। এদের দীরত্ব সম্পবন্ধে কোনো ধারণা নেই। আবার বন। তবে আমার মনে অনেকখানি ভরসা হয়েছে। আমি বললাম—কখন পৌছলেন— — প্রায় সন্ধ্যার সময়। ওপরওয়ালা কম্পমচারী ছিলেন এক পাঞ্জাবী, তাঁর সঙ্গে দেখা করলাম-তিনি বাসা দিলেন, প্রায় আধ মাইল দরে এক ছোট্ট খড়ের ঘরে। সারাদিন সাইকেল চড়ার পরিশ্রমের পরে সেই ঘরে দড়ির খাটিয়ার ওপর বিনা বিছানাতে বিনা লেপে শয়ে রইলাম। দন্দান্ত শীত। অনেক রাত্রে পাঞ্জাবী কৰ্ম্মচারীর চাকর আমায় খানকতক রাটি আর একটা ডাল দিয়ে গেল। পরদিন দাপরের সময় আমার প্লাচক এসে পৌছলে আমার জিনিসপত্র নিয়ে। সে না কি ঐ রাস্তায় একটা বাঘকে শয়ে থাকতে দেখেছিল। বিচিত্র নয়! মিঃ সিংহ গলপ শেষ করলেন। আমরা আবার মোটরে উঠে। সৈন্দবার পথে বরকেলা পাহাড়শ্রেণী থেকে নেমে এসে রাঁচি-চক্ৰধরপর-রোড ধরলাম। রাত দশটায় চাইবাসা। আমি বললাম।--পোংসায় আর কিছ ঘটে নি। আপনার চাকরির প্রথম দিনে ? মি সিংহ বললেন--আর বিশেষ কিছ নয়, তবে রাত্রে ভাল ঘািম হয় নি। কেবল ভাবি, যেমন বন-জঙ্গল দেখচি, হয়তো বাঘ-ভালকে ঢাকেই পড়বে ঘরের মধ্যে। তার উপর ভীষণ শীত, আমার সঙেগ একখানা মাত্র আলোয়ান এবং সেই একমাত্র শীতবস্ত্র। এত অসবিধের মধ্যে ঘাম যতটা হওয়া সম্পভব ততটা হয়েছিল। —কোথায় শোবার জায়গা দিয়েছিল ? —একটা ছোট ঘরে। তার একদিকে জঙ্গল ও ক্ষদ্র একটি পাহাড়ী ঝর্ণা। গ্রাম থেকে সিকি মাইল দারে। এ সব প্রশন সেদিন অত খাঁটিনাটি ভাবে জিজ্ঞেস করেছিলাম এবং তার উত্তর এত আগ্রহের সঙ্গে মনোযোগ দিয়ে শানেছিলাম যে, গাহ ও পরিবারবগের অণ্ডক থেকে সদ্যবিচ্যুত একটি অনভিজ্ঞ যাবকের সেই দিন ও রাত্রির তিন্তু অভিজ্ঞতা আমার মনে দঢ়রপে অঙ্কিত হয়ে গিয়েছিল। সতরাং পথের পাশে অন্ধকার রাত্রে গাছের তলায় চা পানের পরের বৎসর আমি নিজে যখন মিঃ সিংহের সঙ্গে মোটরে মনোহরপর থেকে কোল-বোংসা হয়ে পোংসা এলাম, এমন কি ছোটনাগরা গ্রামের সেই কুড়েঘর দেখলাম যেখানে মিঃ সিংহ রাত কাটিয়েছিলেন—তখন আমার কলপনায় অঙ্কিত সব ছবির সঙ্গে এত গরমিল হোল, যে নিজেই অবাক হয়ে গেলাম। গত ১৯৪৩ সালের নভেম্বর মাসে আমি মিঃ সিংহের সঙ্গে সিং ভূমের বিখ্যাত সারাণচূড়া ফরেস্ট ভ্ৰমণ করি। মিঃ সিংহ তিন মাসের জন্যে সারাপডা বিভাগে বদলি, ల్సి