পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লাগলো। পরীক্ষণেই কি নিবিড় বন শার হোল রাস্তার দদিকে, কি দর সমতলভূমির দশ্য। ওই দরে মনোহরপর ইন্টিশান, ওই ট্রেনের ধোঁয়া উড়চে, ওই সেই কোল-বোংসা গ্রামে ছোট্ট পাহাড়ের ওপর গোসাঁইয়ের কুটির ও খামার। এক এক জায়গায় বনের গম্ভীর দশ্য মনে ভয়ের সম্প্রচার করে, তবও আমরা মোটরে চলচি, সঙ্গে এতগলো লোক। কিন্তু একটি অনভিজ্ঞ যােবক যেদিন এই বন্যজন্তু-অধ্যুষিত অরণ্যভূমির মধ্য দিয়ে একা সাইকেলে গিয়েছিল, তার সেদিনকার মনের অবস্থা বেশ বৰ্ব্বতে পারলাম। মিঃ সিংহ বললেন—এই সেই পথ, দাদা। —বেশ বক্যতে পারাচি। —এখনও কিছ দেখেন নি। আরও আগে চলন। চৈতন্যদেবের সেই “এহ বাহ্য, আগে কহ আর” ! বন কি নিবিড় হয়ে উঠেচে, কাছির মত মোটা চীহড়। লতা (Bonhivia Vallai) বিশাল বনস্পতির সঙ্গে জড়ােজড়ি করে দাভেদ্য ও অন্ধকার লতাকুঞ্জের সন্টি করেচে পদে পদে, অত বেলাতেও সায্যের আলো পড়ে নি। একটা জায়গা দেখিয়ে মিঃ সিংহ বললেন, এখানে এসে এমন হতাশ হয়ে পড়ে ছিলাম যে ভাবলাম একটা উইল লিখি ও পকেটে একখানা পরিচয় রাখি। * আমি বললাম-বন্যজন্তু আছে। এইখানে ? --সারান্ডাতে বন্যজন্তু নেই? বাঘ বলেন, বিনো হাতী বলেন, ভালক বলানঅভাব কি ? বাইসন, সম্পবের হরিণ পৰ্য্যন্ত। বাদ নেই কিছ। দেড় ঘণ্টা মোটর চালানোর পর বন একটা পরিস্কার হোল। দরে দেখা গেল লাল টালির দ-চারখানি ঘরবাড়ি। মিঃ সিংহ বললেন-ওই হোল পোংসা— পোংসাতে বি. টি. টি. কোম্পানীর (ব্রিটিশ টিল্সবার ট্ৰেডিং কোম্পানী) বড় আড়া। এই কোম্পানীর অংশীদারেরা হচ্ছে বিলাতের বড় লোকেরা, এমন কি পালামেন্টের মেম্পাবার পয্যন্ত আছে। এদের মধ্যে। বিদেশীর সবাথে আমাদের দেশের বন্যসম্পদ সব লাঠিত হচ্ছে। গত ত্ৰিশ বৎসরে সিং ভুমের এই অপব্ব অরণ্যভূমি অনেক নষ্ট হয়ে গিয়েচে। এই ব্যবসায়ের সংবিধা ভোগ করচে বিলাতের বড় মানষেরা, আর বনভূমির, আদিম অধিবাসী হো ও মডারা কুলিগিরি করে দাসত্বের অন্ন ভোজন করচে। মাত্র। সেই বনাবত সন্থানে ছোট একটি গ্রাম। একখানা সাহেবী ফ্যাসানের খড়ের বাংলো ঘরের মধ্য থেকে একজন সাহেব বার হয়ে এল আমাদের মোটরের শব্দ শনে । মিঃ সিংহ বললেন—শনি বি. টি. টি. কোম্পানীর ওয়াকাস ম্যানেজার মিঃ লকানার ভালো লোক। একদিকে একটা লম্বা খড়ের ব্যারাক-মত বাড়ী।। একটি বাঙালী বিধবা মহিলা একখানা ঘর থেকে বার হয়ে এলেন মোটরের আওয়াজ পেয়ে। শািনলাম ও বাড়ীখানা কেরানীরদের থাকবার জায়গা। এতদরে এই বনের মধ্যে দ-একটি বাঙালী পরিবার কি ভাবে নিতজান জীবন যাপন করচেন চাকুরির খাতিরে -ভাবতে ভালো লাগে। মিঃ লাকনারের মোটর আছে, তিনি মোটরে মনোহরপর যেতে পারেন মানষের মািখ দেখতে, কিংবা যেতে পারেন। একশ মাইল দরবত্তীর্ণ দধিয়া ও চিড়িয়া খনিতে. সেখানে শোবতকায় ম্যানেজার আছেন। কিন্তু এই বাঙালী কেরানীদের বাড়ীর মেয়েছেলেরা জেলে আবদ্ধ অবস্থায় এখানে কিভাবে দিন কাটান, কি করে বলবো ? আমার বড় ইচ্ছা হচ্ছিল এই মহত্তে গাড়ী থেকে নেমে ওই বাঙ্গালী বাবদের বাড়ীতে চলে যাই, ওদের সঙ্গে গলপগজব করে ওদের নিঃসঙ্গতা কাটিয়ে দিই।-- Y9