পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দিকচক্রবালের অনেকটা জড়ে। সদীঘ বরকেল পাহাড়শ্রেণী, তারই পেছনে এখন টকটকে রাঙা সৰ্য্যেটা অস্ত যাচ্চে। চারিপাশের সেই সব অদ্ভুত-দর্শন পাহাড় দেখে মনে হয় আমেরিকায় কোনো ছন্নছাড়া মরভূমির মধ্যে বসে যেন Space-এর সমাদে ডুবে আছি, থৈ থৈ space-এর সমদ্র, কুলকিনারা দেখা যায় না। মনে হয়। কলকাতার সর, এদো গলির মধ্যে আলোবাতাসশান্য একতলা ঘরে যারা বাস করে, দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, যারা সৰ্য্যোস্ত দেখবার সহযোগ পায় না, মক্তর-পা ধরণীর সৌন্দৰ্য্য, প্রসারতা, অপরাহের ছায়া-নেমে-আসা বিরাট প্রান্তরের ছবি যারা কখনো দেখে নি, নিতজান পাহাড়ের সমতল শিলাসনে বসে দরের গিরিমালার দিকে চেয়ে থাকে নি কখনো যারা, তাদের নিয়ে আসি, তাদের সব দেখাই। এমন অনেক গরীব গােহস্থের কথা আমার মনে হয়। এই সব মন্ত স্থানে বসলেই। আমি জানি তাদের, কি ভাবে তারা থাকে। ওদেরই মধ্যে একটি বধ্য আমাকে বলেছিল--দাদা, তারকেশবের কোন দিকে ? --কেন ? — সেখানে একবার যেতে ইচ্ছে করে--- --গেলেই হয়। বেশি দীর তো নয়। --তাই তো দাদা, পয়সায় যে কুলোয় না ! উনি যা পান তাতে এই ঘরভাড়া দিয়ে খেয়ে দেয়ে কি থাকে বলন। কতদিন থেকে ভাবচি-- -এই বাসায় কতদিন আছ তোমরা ? হয়ে গেল সাত বছর। আমার ঐ খাকির বয়েস, দাদা। - কোথাও যাওনি এই সাত বছরের মধ্যে ? - -হ্যা, যাচ্ছি! কোথায় যাবো ? আপনি পাগল! পয়সা কোথায় ? যখন কোথাও যাই, কোনো ভাল জিনিস দেখি, তখন আমার দর সম্পকের আত্মীয়া সেই বন্ধটির কথা মনে পড়ে। পরেশাবাব, একটা গলপ জড়ে দিলেন। আমরা খাবারের হাঁড়ি খালে শালপাতায় খাবার ভাগ করে দিতে থাকি। তারপর সবাই খাই, আর চারিদিকে চাই। এ ঠিক আরিজোনার মরভূমি, নিস্তবন্ধ সন্ধ্যায় এখনি দরে কোথাও কোয়াট ডেকে উঠবে, যার ছন্নছাড়া চীৎকার। শনলে নিজজন মরপ্রান্তরে অতি বড় সাহসী পথিকেরাও হৃদিকম্প উপস্থিত হয়। সেই পাহাড়টিতে আমরা বসে রইলাম সন্ধ্যার একপ্রহর পর পয্যন্ত । হাসি গলেপ সময় কাটলো। মোটরে চাইবাসা ফিরবার পথে আমরা জলপনা-কলপনা করলাম, একটা জ্যোৎস্না রাত দেখে। শীগগির আবার একদিন ঐ পাহাড়টাতে এসে পিকনিক করতে হবে। বড় সন্দের প্রান্তর, বড় সন্দর পাহাড়টি। এ ধরনের জলপনা অনেকক্ষেত্রে অনেক রার হয়, কিন্তু আর কায্যে পরিণত হয় না। কোনো ভাল জায়গায় বেড়িয়ে ফিরবার পথে মনে হয়-ও, এই তো। এখানে আবার কতবার আসবো, এই এতো কাছে। কিন্তু ওই পৰ্যন্তই। যাওয়া আর ঘটে না। এখানেও তাই। সেরাইকেলা ভ্রমণের পরে দ’বছর কেটে গিয়েচে--অথচ সেই নিজজন শৈল সন্দর্শনের সৌভাগ্য। আর কখনো ঘটে নি। আমাদের। চক্ৰধরপর থেকে রাঁচীর পথে বিখ্যাত হিডনি জলপ্রপাত। অনেকদিন থেকে আমাদের দেখবার ইচ্ছে ছিল। গত বৎসর ভাদ্র মাসে (১৩৫০ সালের ভাদ্র) আমি SS