পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেরি নেই, বম্বে মেল পাওয়া যাবে তো ? চক্ৰধরপর সেন্টশনের বাইরে আমরা মোটর থামােলম, বন্ধটি নেমে গেলেন। মিঃ সিনহা বললেন-একটা দধের যোগাড় করলে হোেত। সকাল হোলেই তো চা চাই। দধি নেই সঙ্গে। সবোধ বললে—শেষ রাত্রে এখানে দধি পাওয়া যাবে বলে মনে তো হয় না। চেন্টা করতে পারেন। কিন্তু সবোধের কথাই ঠিক হোলো। কোথাও দধি মিললো না চক্ৰধরপর সেন্টশনে। আমরা মোটর ছাড়লাম। আরও আধঘণটা পরে আমরা কিছর দরে টেবো পাহাড়শ্রেণী দেখতে পেলাম। কেউ কেউ এটাকে সেরাইকেলা পাহাড়শ্রেণীও বলে। পাহাড়ের ওপর ঘরে ঘরে রাঁচি রোড উঠেছে ওপরে। পাহাড়ে উঠবার কিছ আগে রাস্তার ধারে ইংরেজিতে লেখা আছে। এখান থেকে ঘাট আরম্পর্ভ'---পাহাড়ী রাসক্ততাকে এদেশের ভাষায় “ঘাট" বলে। অনেকদিন আগের কথা, তখন আমি এসব দিকে আসি নি। আমাদের এক গ্রামের বন্ধ ভদ্রলোক চক্ৰধরপরে কি কাজ করতেন। তাঁর মাখে শানেছিলাম চক্ৰধরপরে রাঁচি রোডের দশ্য অপবর্গ, বিশেষ করে রাস্তা। যখন ঘরে ঘরে পাহাড়ের ওপর ওঠে। মনে আছে, আমি তাঁকে এ পথের দশ্যের কথা খাটিয়ে খাটিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি তত বৰ্ণনা দিতে পারেন নি, মোটামটি বলেছিলেন, ‘ভালো’। কিন্তু শািন্ধ "ভালো” বা চমৎকার’ শনে আমার মন তৃপ্ত হয় নি, আমি চেয়েছিলাম যা, তিনি তা আমায় দিতে পারেন নি। সে আজ অন্ততঃ সতেরো-আঠারো বছর আগের কথা। তখন জানতাম না, একদিন শরৎকালের শেষরাত্রের জ্যোৎস্নায় বন্ধ বান্ধবের সঙ্গে মোটরে সেই অরণ্য-পব্বতের পথে প্রমোদ-ভ্ৰমণ আমার আদলেট ঘটবে। সেই ভদ্রলোকের কথা মনে পড়লো এতদিন পরে। তিনিই প্রথম এ রাস্তার সৌন্দয্যের কথা আমায় বলেন, এ পথ সম্পবন্ধে আমার কৌতহল জাগিয়ে তোলেন। যতদর জানি, তিনি এখন আর ইহলোকে নেই, শেষ বয়সে বিদেশে কোথায় কণট্রাক্টারি করতেন, (२[[/क भाट् शाकप । তিনি কিছমাত্র বাড়িয়ে বলেন নি দেখলাম। পথ ঘরে ঘরে যখন উঠতে লাগলাম টেবো পাহাড়ে, তখন মনে হলো, এ পথে সবারই একবার বেড়িয়ে যাওয়া উচিত। অপব্ব দশ্য। পথের দাধারে বড় বড় গাছপালা, বড় বড় পাথর, মায়াময় শিখরদেশ জ্যোৎস্নামাখা, বনের আড়ালে লকোচরি খেলচে। প্রকৃতিরসিক পরে।শাবাব দীঘনিঃশ্ববাস ফেলে বললেন---চমৎকার! আমরা সকলেই এক বাক্যে তাঁর কথায় সায় দিলাম। পাহাড়ের ওপরে রাস্তার দাধারে জ্যোৎস্নালোকিত বনভূমির কি অপবর্ণ শোভা ! কে’দ গাছের কালো কালো পাতায় জোৎস্না পড়ে চকচক করছে। ঘন, নিজ জন বনানীর নৈশ নিস্তব্ধতা মনে ভয়-মিশ্রিত রহস্যের উদ্রেক করে। আমি বললাম - এখানে মোটর থামিয়ে একটা বনটা দেখা যাক— সবোধ আপত্তি করলো—এখানে বাঘের ভয়, বিশেষ করে এই রাতের বেলায়। মোটর থামিয়ে নামা উচিত হবে না। মিঃ সিংহ বললেন--কিছু হবে না। নামা যাক। 89