পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এ অঞ্চলে শঙ্খচড় বা king cobraার সাক্ষাৎ পাওয়া যায় বনে-জঙ্গলে-এ কথা মুমি পথেও শুনেছি। কিন্তু অত বনে বনে বেড়িয়েও কখনো আমার চোখে পড়ে যান। একদিন আমি রাস্তা থেকে কিছদরের একটা পাহাড়ে বেড়াতে যাই ; পাহাড়টার নাম উলদাডুংরি। ওদিকের ওসব পাহাড়ে গর, চরে, লোকজন ওঠে নামে, কিন্তু দর থেকে এ পাহাড়ের দশ্য দেখে আমার মনে হল এ পাহাড়টাতে কেউ ওঠে না। সন্ধ্যা হয়ে আসছিল। ভাবলাম, পাহাড়টাতে উঠে কোনো শিলাখন্ডে বসে সন্ধ্যার শোভা দেখা যাক । সামান্য খানিকটা উঠে লক্ষ্য করলাম পাহাড়টাতে বেজায় কাঁটাবন । ওপরে আরি উঠবার উপায় নেই। অনেকগলো ঝরা শকিনো পাতা সেই কটিৗগাছগালো থেকে ঝরে আমার আশেপাশে সব্বত্র পড়ে সাতপাকার হয়ে আছে পাথরের ওপরে। কাঁটাগাছ যে খব বড় তা নয়, আমাদের দেশের ছোট ছোট বৈচি গাছের মত। বড় চমৎকার শোভা হয়েছে। পশ্চিম আকাশের, সেদিকে সবণ রেখার ওপারে পাহাড়শ্রেণীর পিছনে সযদেব অস্ত যাচ্চেন। শালবনের মাথায় রাঙা সােয্যাস্তের হা হা, হাওয়া বইছে। ওদিক থেকে। নিজজন জায়গা, কেউ কোনোদিকে একমনে দেখতে দেখতে বেশ একটি অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছি, এমন সময় ঝাপ করে কি একটা শব্দ হোল। শব্দটা একটি অদ্ভুত ধরনের। শকিনো লতাপাতার উপর ঝাঁপ করে যেন একটা ভারি জিনিস পড়লো। পিছন ফিরে দেখি শকিনো ঝরা পাতার রাশির ওপর একটা বড় মোটা মিশ-কালো সাপ। কিন্তু সাপটার মাখ আর লেজটিার দিক চোখে পড়ছে না। আমি মাত্র তার মাঝখানটা দেখতে পাচ্ছি। আমি যেখানে বসে, সাপটা সেখান থেকে হাত আন্টেক দরে। ও-ধরনের মোটা সাপ আমি আর কখনো দেখি নি। হঠাৎ আমার বড় ভয় হলো। এই নিজজন পাহাড়ে সন্ধ্যার অন্ধকারে এই ভীষণদশন সাপের হাতে পড়লে নিজেকে বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়বে। তাড়া যদি করে। পালাতে পারবো না। এই কাঁটাগাছ ঠেলো। আমার হােত পা আড়ম্পট হয়ে গেল। তাড়াতাড়ি উঠে নামতে যাবো, এমন সময় সাপটা যেন পাশের দিকে অগ্রসর হয়ে আমার কাছে এসে পড়লো। এখনও ওর মািখ দেখা যাচ্ছে না, সতরাং ও আমাকে টের পায় নি। নামতে গিয়ে মনে হোতে লাগল পাহাড়ের প্রত্যেক ফাটলে অসংখ্য ভীষণদর্শন সাপ বাসা বেধেছে। তখন বেশ অন্ধকার হয়ে এসেচে ; ভালো কিছ দেখতেও পাচ্ছি। নে। কাঁটাগাছে হাত-পা ছড়ে রান্তপাত হতে লাগলো। প্রাণভয়ে সব অগ্রাহ্য করে কোনো রকমে নামতে লাগলাম। পথও যেন, ফরোয় না। ওঠবার সময় বেশ উঠেছিলাম। এখন সেই পথ দগম ও কঠিন হয়ে পড়েছে। অন্ধকারও এখন বেশী। যা হোক অতি কন্টে এক রকম করে তো নামা গেল ! ছটতে ছািটতে শালবনের মধ্যে এসে পড়লাম। উলদাডুংরি আর চাইবাসার রাস্তার মধ্যে (জায়গাটা রাখা মাইনস ও চন্দ্ররেখা গ্রামের কাছাকাছি) এই চারা শালবন। আদরে পথ। গালডির হাট থেকে কয়েকজন বনো লোক ফিরছিল। তারা আমাকে ওভাবে শালবনের মধ্যে হাঁটতে দেখে অবাক হয়ে গেল। বললে--কি বাবা ? তখন তাদের খালে বললাম। 3)