পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঘাটশিলার হাসপাতালে আনবার পথে বন্ধও মারা গেল। একবার আমরা এক অদ্ভুত কথা শনি। সৌরীনবাব বলে আমাদের একজন রাত্রে গিয়ে দেখোঁচ ময়রেরা এসে নাচে! —কি রকম ? —-একটা পরিস্কার জায়গা আছে বনের মধ্যে। সেখানে এসে ওরা গভীর রাত্রে নাচে। পণিমার রাত্রে কিন্তু। অন্য রাতের কথা আমি বলি নি। —ময়রেরা যে এমন কবি, তা জানা ছিল না। দেখাবেন আপনি ? -খবা! চলন না। সোর, ঝর্ণা কোথায় কতদরে সে সন্ধান দিতে পারলেন না সৌরীনবাব। তিনি সাঁওতালদের সঙ্গে গিয়েছিলেন, তাঁর কোন ধারণাই নেই। তবে সবণরেখা পার হয়ে সিদ্ধেশবর ডুংরি পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে বনের মধ্যে এটা তিনি ঠিক জানেন । সে বড় দাগম জায়গা। আমরা এক রবিবারের সবণ রেখার ওপারে পিকনিক্য করতে গেলাম। আমার ভাই নট, তার বন্ধ সরেশ, আরও দ-তিনজন। চৈত্রের প্রথম। মহীয়া গাছে ফল ফটে টপটপ গাছের তলায় পড়চে, লতাপলাশের ফল ফটেচে। গাছের ডালে ডালে জড়িয়ে উঠেচে পলাশের সুলতা। গোলগোলি গাছে হলদে ফল। দই পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে আমরা কতদাের চলে গেলাম। এই সময়ে কে দফল পাকে, সিং ভূমের বনের বড় সমিন্ট ফল। আমরা উঠিয়ে দিলাম। একটা লোককে গাছে। সে উঠে। গাছ ঝাড়া দিয়ে অনেক কেন্দ্যফল পাড়লো। সস্থানীয় হাটে পাকা কেদফল শালপাতার ঠোঙায় বিক্লি হয়। আট-দশটা ফল এক পয়সায়। পাহাড়ের মধ্যে ঢকে আমরা একটা অনাব্যত উপত্যকা বেয়ে চলেচি, কতদাের। চৈত্রের রোদ চড়চে যতই, ততই টপটপ করে মহীয়া ফােল ঝরে পড়াচে গাছতলায়। ঝাঁটিফলের মদ দগন্ধ বাতাসে, একস্থানে একটি ক্ষদ্র ঝর্ণা উপত্যকার মাঝখান দিয়ে বয়ে চলেচে। ঝর্ণার দােপাশে বন্য জামবক্ষের সারি। ছায়া পড়েচে জলে। আমরা এই জায়গাটা পিকনিকের জন্যে ঠিক করে ফেললাম। গরর গাড়ী থেকে জিনিসপত্র নামানো হোল। সবাই বললে, এখানে ছায়া আছে। এখানেই রাক্কাবান্না হোক। সবাই মিলে লেগে গেলো কাজে । আমি একটা পরে সামনের ক্ষীণ পথ-রেখা বেয়ে সামনের দিকে চললাম। দেখি না, ওদিকে কি আছে। আপন মনে পথ চলেচি, বড় রোদ, পাথর তেতে উঠেচে রোদে, মহীয়া ফােল কুড়িয়ে খেতে খেতে চলেচি। পাহাড়শ্রেণী চলেচে এই ক্ষদ্র পথটির সমান্তরাল ভাবে বামে ७ प्रक्रिge । অনেক দরে এসে একটা গ্রাম পাওয়া গেল। গ্রাম বলতে যা বোঝায় তা নয়, একটা বড় কুসমী গাছের তলায় ঘর-পাঁচ-ছয় লোক বাস করচে। গ্রামের একটা লোক গাছের তলার ছায়ায় বসে পাহাড়ি চীহড়লতার ঝড়ি বনচে। আর শালপাতার পিকার ধর্মপান করচে। পিকা অর্থাৎ কাঁচা শালপাতা জড়ানো খানিকটা তামাকপাতা। এক রকম বিড়ি বলা যেতে পারে। কাছে একটা মস্ত কুকুর। কুকুরটাকে দেখে মনে হোল, সেটা বাঘকেও ভয় করে না। করবার কথাও নয়। 60 দিনলিপি-৫/বনে পাহাড়ে-৪