পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বললাম-এটা কি গাঁ রে ? -বালজাড়। —ক’ ঘর আছিস রে ? সে হাত দিয়ে দেখিয়ে বলল—এই যে ক’ঘর দেখােচস রে। —তোর নাম কি ? —চকল। —কি করচিস ? —দেখতে তো পাচ্চিস। ঝড়ি বাঁধাঁচ। —এখানে তো চারিদিকে বন, থাকিস কি করে ? —হোই। বেশ থাকি । --হাতী আছে রে ? —হাতী আছে, বাঘ আছে, ভালক আছে। বলেই চকল, আমার চোখের সামনে একটা আশচয্য ব্যাপার করলে। অতিথিসৎকারের জন্যে একটা কাঁচা শালপাতার পিকা জড়িয়ে সে দাখানা কাঠ ঘষে আমার সামনে আগন জবালাল। বললে-ধরও— আমি অবাক! এই যন্ধের বাজারে দেশলাই কবে পাওয়া যায় না যায়। এ কৌশলটি শিখে রাখলে মন্দ কি ? আমি কৌশল শিখতে চাইলাম। চকল হোসে সামনের পড়শি গাছের ডাল একটা ভেঙে এনে তার মধ্যে দা দিয়ে ছোট্ট একটা ধিঙ্ধ করলে। আর একটা সর, ডালের এক দিক ছািচলো মত করে, সেই বিধে বসিয়ে দল হাত দিয়ে ঘোরাতে লাগলে। বিধিওয়ালা কাঠখানার তলায় রাখলে কয়েকটি শকিনো শালপাতা। দেখতে দেখতে শকিনো পাতা দিয়ে ধোঁয়া বেরতে লাগলো। চকল ফা দিতেই দপ করে আগােন জীবলে উঠলো। বিড়ি ধরিয়ে নিলাম। আমি ওখানে বসে পড়লাম। আমার উদ্দেশ্য হচ্চে সোর ঝর্ণার সন্ধান নেওয়া। জায়গাটিও চমৎকার লাগচে । চৈত্র দাপরের রোদ ঝাঁ ঝাঁ করচে চারিদিকে। দদিকে পাহাড়-শ্রেণী, মধ্যে এই সংকীর্ণ বনাবত উপত্যকা। প্রথম বসন্তে পাহাড়ের বনে কোকিল ডাকচে। মহীয়া ফলের মদির গন্ধ গরম বাতাসে। চকলার দরখানা কাঠ ঘষে আগনি জবালা। কাঁচা শালপাতার পিকা জড়িয়ে খাওয়া। মক্ত জীবনের ছন্দে মােখর দলভ মধ্যাহটি। ওকে বলি-চকল, ময়র দেখেচ বনে ? --মজর ? আছে, অনেক আছে। মজার কত নিবি ? --সোর, ঝর্ণার নাম শনেচিস ? —হাঁ, ক্যানে শািনবেক না। -- ওখানে ময়র আছে ? —মজর সব বনেই আছে। এই সব পাহাড়েও আছে। এখানে বোস, সাঁজের সময় কত মজার দেখবি। কিন্তু পণিমায় সোর, ঝর্ণার শিখী নিত্য ? সেটা উপকথা না কিংবদন্তী ! তার মলে কিছ আছে কি না, সে সন্ধান। এখানেই আমার আজ নিতে হবে। সে সন্ধানেই বেরিয়েছি আজ। ck 8