পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

থলকোবাদে একরান্ত্রি [ "বনে-পাহাড়ে' রচনার পাঠ্যপট সারাডা অরণ্যে ভ্রমণের সময় বিভূতিভূষণ বনগ্রামবাসী মন্মথনাথ চট্টোপাধ্যায় মহাশয়কে পত্রিকারে তাঁহার এই ভ্ৰমণ-অভিজ্ঞতাটি লিখিয়া পাঠান। এই পত্রটি “পল্লীবাতা' নামক সাপ্তাহিক পত্রে প্রকাশিত হয়। বস্তুত ইহাই “বনে-পাহাড়ে'র সলিটকেন্দ্র। তৎসত্ত্বেও এই রচনার একটি স্বতন্ত্র সম্ববাদ আছে, সেই এটি পথক রচনা হিসাবে এই গ্রন্থে মাদ্রিত করা হইল।—সম্পাদক বিভূতিরচনাবলী । ] নিবিড় বনমধ্যস্থ এক বনবিভাগের বাংলো থেকে লিখছি এ চিঠি। গত ৯ই তারিখে ঘাটশিলা থেকে বেরিয়ে রেলে এসেচি চাইবাসা, তারপরে মিঃ সিংহের সঙ্গে মোটরে এসেছি ৬.৭ মাইল কুমডি বাংলোতে। গয়া ও নোয়ামনিড হয়ে। গয়া ছাড়িয়ে এই ২৭ মাইলের মধ্যে লোকালয় নেই- সারণি ডা অরণ্য, ছোটনাগপরের সবাপেক্ষা নিবিড়তম অরণ্য। ১৬ দিন এই গভীর অরণ্যের মধ্যে বনবিভাগের বাংলোতে ও তাঁবতে থেকে সারােন্ডা অরণ্য সবটাই ঘরবো। কোথাও ডাকঘর বা লোকালয় নেই— এই চিঠি বনবিভাগের পেয়াদা ২০ মাইল হোটে বনপথে জেরাইকোলা নিয়ে গিয়ে ডাকে দেবে। যেতে লাগবে ২ দিন ডাকঘরে। কবে চিঠি পান দেখবেন তো ? ক’দিনে বনগাঁ যাবে। এ বড় কৌতহ'লজনক। কাল গিয়েচে প’ৰ্ণিমা। বাংলো একটা বনাবািত ছোট পাহাড়ের চড়ায়, মধ্যে একটা উপত্যকা। যেদিক থেকেই দেখি নিবিড় অরণানী ও শৈলচ ডা ঘিরে আছে। চারিদিকে। গভীর রাত্রে কাল জ্যোৎস্নার্সনাত অরণে। যখন ময়র ও সম্পবের হরিণের ডাক শািনলাম, তখন সত্যই মনে হোল কোথায় আছি ? বন্য হস্তীর উপদ্রব সব্বত্র । যেখানে সেখানে হাতীর নাদ পড়ে আছে। কাল বড় মজা হয়েচে। চা খেয়ে আমি, মিঃ সিংহ ও রেঞ্জ অফিসার মিঃ গঞ্জ তিনজনে বাংলা থেকে নেমে বনপথে বেড়াতে গোলাম হোটে। কি সন্দির অপরাহের ছায়াবত সে অপব্ব বনকান্তার! ময়র-নিনাদিত বনভূমি বালিমীকির রামায়ণের অরণ্যকান্ডের বনবৰ্ণনা সমরণ করিয়ে দেয়। সন্ধ্যার অন্ধকার নেমে এল দেখে মিঃ গািপ্ত বল্লেন, চলন, অন্ধকারে হাতী বেরবে। যদিও পণিমা কিন্তু এ বনে চতুদিকের শৈলমালা ভেদ করে চাঁদের আলো পড়তে এক ঘণ্টা দেরি হয়ে যানো। এই এক ঘণ্টা নিবিড় অন্ধকারে আবতে বনের মধ্যে এক পাথরের ওপর বসে থাকা নিরাপদ নয়। এমন সময় মানষের গলা শোনা গেল পায়ে চলা সর পথটার ওপ্রান্তে। যারা আসচে। তারা আমাদের দেখে ভয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েচে । আমরা ডাক দিলাম, দজন হো জাতীয় লোক। তারা বল্লে-বালজড়ি থেকে চাল কিনে আসচি। হো ভাষায় বল্লেী, মিঃ গগুপ্ত জানেন এ ভাষা। বালজাড়ি কোথায়? ওরা বল্লে, বোনাইগড় স্টেট। কখন বেরিয়েচ ? বল্লে, বেলা দশটায়। দক্ষিণ-পশ্চিমে এই অরণ্যভূমির ওপারে উড়িষ্যায় বোনাইগড় করদরাজ্য। সেখানে চাল ছ' সের টাকায়। লোক দটি সেখানকার সীমান্তরক্ষীদের চোখ এড়িয়ে লকিয়ে বনে বনে পালিয়ে আসচে সস্তা চাল নিয়ে। আমাদের ভেবেচে সারাশডা বনের সীমান্তরক্ষী। তাই এই ভয়। 66