পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কিন্তু কি অপব্ব সৌন্দৰ্য্য হোল পাৰ্ণিমার চন্দ্রকরোক্তজবল সে বনভূমির। গম্ভীর অরণ্যানী, চতুদিকে পাহাড় আর বনাবত উপত্যকা। পদে পদে বন্যহস্তী ও ব্যান্ত্রের ভয় সে সৌন্দয্যকে যেন আরও বাড়িয়ে তুলেচে। চলে আসচি, গম্পভীর বনে কুকুর-ডাকার মত শব্দ। মিঃ গগুপ্ত বল্লেন, ও কুকুর নয়, লোকালয় নেই, কুকুর কোথা থেকে আসবে ? ও বাকিং ডিয়ার, এক প্রকার হরিণ। কে বর্ণনা দিতে পারে এ জ্যোৎস্নাসনাত বনভূমির ? গম্ভীর অরণ্যে দরের কোন পাব্বিত্য নদীর অবিশ্রান্ত জলপতনধবনি ও ঝিঝি” পোকা এবং নৈশ পাখীর কজনন্দবারা বিখন্ডিত সেই গম্ভীর নৈঃশব্দ্য বর্ণনার জিনিস নয়, উপলব্ধি করার জিনিস। না দেখলে উপলব্ধি হবেই বা কেমন করে। বনের মধ্যে পাষাণময় তীরভূমির মধ্যে দিয়ে কোইনা নদী বয়ে যাচ্ছে, জ্যোৎস্নালোকে আজ আমরা সেখানে রাত্রে পিকনিক করতে যাবো ঠিক হয়েচে। এ অঞ্চলের সব্বোচ্চ পৰ্ব্বতশিখর শশাংদাবর ৩o৩৮ ফন্ট উচ্চ। সারা সকল ধরে বনের মধ্যে দিয়ে গিয়ে পরশ আমরা এই শিখরে উঠেছিলাম। অত্যন্ত দরারোহ ও ঘন বনে আচ্ছন্ন সর, পথ দিয়ে উঠচি, উঠাঁচ, তার যেন আর শেষ নেই। এক একটা শাল গাছ কলের চিমনির মত ঠেলে উঠেচে আকাশে, কোথাও বন্য দেবকাঞ্চন ফলের মেলা, আরও কত কি বনকুসম ফটে আছে লোকচক্ষর অন্তরালে, কে তাদের নাম জানে ? কোথাও ঝরে ঝর করচে পাহাড়ী ঝরণা—শশাংদাবির শিখরদেশ থেকে খাড়া নীচে পড়াচে, বনে বনে প্রতিধবনিত হচ্ছে তার শব্দ। কোথাও বনের মধ্যে বনো রামকলা গাছ, কে খায় সে কলা হাতী আর বাঁদর ছাড়া। এই সারান্ডা অরণ্য অবিচ্ছেদ্য। soo বগ মাইল, জনহীন, শােধ বন বিভাগের বাংলো ছাড়া কোনো থাকবার জায়গা নেই, বনবিভাগের তৈরি মোটর রোড ছাড়া রাস্তা নেই। উঠতে উঠতে ঘন ঘন হাঁপাচ্চি, বকের মধ্যে যেন হাতুড়ির ঘা মারচে, পা সামান্য তুলতেও কািট হচ্চে। আবার বনের মধ্যে এত বেলাতেও সায্যের আলো পড়েনি, সে নিবিড়তা ও গাম্ভীয্যের তুলনা কোথায় ? ধর্মপান করবার জন্যে সেই খাড়া পথের এক জায়গায় বসলাম, সামনের দশ্য আরও স্পষ্ট করবার জন্যে ফরেস্ট গান্ড কুড়ােল দিয়ে একটা আমলকী গাছের ডাল কাটলে। তখন দেখি অনেক উচিতে উঠে গিয়েচি, কত নীচে উপত্যকা—দরে দরে শাধাই বননীল শৈলশিখর। যেদিকে চাই, পাহাড় আর বন, বন! বড় বড় কেলিকদম্বের পাতা বিছিয়ে বসেচি খাড়া বাঁকা পথটার গায়ে, গড়গড়িয়ে যদি পড়ি, তবে ২oo০ ফন্ট নীচ উপত্যকারী পাষাণময় ভূমিতে পড়ে চণ্য হয়ে যাবো। ওপরে উঠে গেলাম তখন বেলা দটাে। ওপরে উঠে দেখি, বা রে, যেন খয়রামারির মাঠ। অনেকখানি সমতল মাঠ ২ মাইল লম্বা, প্রায় দেড় মাইল চওড়া। বা রে মজা! মাঠের মাঝে মাঝে কেলিকদম্ব, দেবকাঞ্চন ও শাল। এক জায়গায় একটা জলাশয়। তার তীরে নরম কাদায় বহ গর, ও মহিষের পদচিহ্ন। আমি বল্লম এখানে গর, চরে কাদের ? রেঞ্জ অফিসার গপ্ত হেসে বল্লেন, গর, কোথা থেকে আসবে। এ জনহীন অরণ্যে ৩ooo ফাট উচ্চ পাহাড়ের মাথায়? ওগলো বাইসন আর সম্পবের হরিণের পায়ের দাগ। ফরেস্ট গাড়া হো-জাতীয় বন্য লোক, সে সব পায়ের দাগ দেখে বল্লে, বনো শওর, বাইসন আর সম্পবরের পায়ের দাগ। হাতীও আছে। বাঘ ? এখানে জল খায় না। ক্ষধায় শরীর অবসন্ন। সঙ্গে খাবার নিয়ে উঠেছে দজন ফরেস্ট গাড়ী।। এক পাথরে বসে পেট পরে খেলাম। শকানো ডালপালা কুড়িয়ে চা হোল। ওঁরা তাড়াতাড়ি করতে লাগলেন, চলন, বন্ড বাইসন আর হাতীর ভয়। আবার নামি সেই উত্তঙ্গ পৰ্ব্ববতশিখর থেকে নিম্পেনর ঘন বনের মধ্যেকার সারা দগম পথ দিয়ে। ওঠাও GV