পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লালমনিরহাটে এলম রাত। তখন ১১টা। এখানে খাকুর খড়তুতো ভাই থাকেকিন্তু এত রাত্রে কে তার খোঁজ করে ? বেজায় ভিড় ট্রেনে, তবও শোবার একটি জায়গা পাওয়া গেল। গোপোঁকগঞ্জ স্টেশন, বাংলার সীমানা পার হয়ে আসামে পৌছলাম। ভোর হোল রঙ্গিয়া জংশনে। নিম্পন আসামের ভূমি জলমগ্ন, নলখাগড়ার বনে পরিাপণ্য। আমিনগাঁওতে কামাখ্যা দেবীর মন্দিরের পান্ডারা এসে জটলো। কোন রকমে তাদের হােত এড়িয়ে পান্ডাঘাটে উঠলাম সন্টীমারে। তারপর মোটরে গৌহাটি হয়ে শিলং, রওনা হলাম। এ পথের বন-বনানী ও খাসিয়া জয়ন্তিয়া পাহাড়ের দশ্য ভারি সন্দর। এ পথের উপযক্ত বর্ণনা কেউ করেনি। শােধ মাইলের পর মাইল দধারে উক্তজবল শৈলমালা, * মধ্যে মধ্যে ঝরণা বা পাব্বিত্য নদী, নদীখাতে ঘন বন, কত বনফল, কত বিচিত্র গাছপালা, মোটা মোটা লতা গাছে গাছে ঝলছে, শেওলা জমেচে বড় বড় গাছের গায়ে, নিবিড় অন্ধকার বনানীর তলদেশে সত্যিকার ট্রপিক্যাল জঙ্গল। ছোটনাগপাের অঞ্চলের পাহাড় এর তুলনায়, উচ্চতায় বা বনশোভায় কিছই নয়। এরকম নিবিড় ট্রপিক্যাল বন সেখানে নেই, সম্পভবও নয়। আর একটা আশচযা ব্যাপার, আমাদের কুঠীর মাঠের সেই ছোট এড়াঞ্চির বন। এখানে পাহাড়ের সব্বাত্র-অন্ততঃ তিন হাজার ফািট উচিতেও আমি ঐ গাছের বন দেখেচি। আসামের পাহাড়েই কি ছোট এড়াঞি, গাছের আদি दामन्थान्म ? বৈকালে সপ্রভার সঙ্গে দেখা করতে গেলাম লাবানে। পথে দেখি অবিকল সপ্রভার মত একটি মেয়ে যাচ্ছে। ভাবলাম কে না কে! একটা পরে দেখি মেয়েটি পিছন ফিরে আমার দিকে বার বার চাইচে। তারপর সে হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ল। বলে উঠল—আপনি ! চেয়ে দেখি সপ্রভা। সে বললে-ওবেলা মোটর-স্টেশনে লোক পাঠিয়েছিলাম আপনার জন্যে—সে ফিরে এসে বল্লে, আপনি আসেননি। আসন। “সনৎ কুটীরে’ ও থাকে। সেখানে বীণাও এল দেখা করতে। চা খেয়ে ওর সঙ্গে বেড়াতে বেরই। সঙ্গে রইল। তার ভাইপো। প্রথমে ক্লিনোলাইন, ফলস, দেখে ও বল্লেী, চলন Spread Eagle falls দেখিয়ে আনি। তাই দেখাতে গিয়ে ও পথ হারিয়ে ফেললে। কতদার শহরের বাইরে নিবিড় পাইনবনের দিকে বিজন পথে চলে গেল। তখন সন্ধ্যা হয়ে এসেচে। পথে খাসিয়া দস্যর ভয়। ওর মািখ দেখি শকিয়ে গিয়েচে, যখন দেখা গেল। সত্যিই ষণ্ডডামােকা গোছের দজন লোক অন্ধকারে আমাদের দিকে এগিয়ে আসচে। ও বল্লে-আমার ভয় করচে। কি বিপদ! ছেলেমানষের কার্ড। তবে বলেছিল। কেন যে আমি জানি Spread Eagle falls-এর পথ ! যাই হোক, অবশেষে নিরাপদে শহরে পৌছে ট্যাক্সি করে ওকে লাবানে পৌছে দিয়ে আমি হোটে হোটেলে ফিরি। কারণ ও ছেলেমানষে, আর হাঁটতে পারবে না। দেখলাম। শােধ আমায় দশ্যাবলী দেখাবার উৎসাহেই ও অতটা গিয়েছিল। বড় ভাল লাগল। এই বেড়ানোটা আজকার। জীবনে এ একটা সন্মরণীয় দিন। যেন অন্য জগতে এসে গিয়েচি। শিলং-এর শোভা তো অদভুত বটেই।--তা ছাড়া সম্প্রভার মত মমতাময়ী মেয়ের সাহচৰ্য্য ও সহানভূতি ক'জন পায় ? হোটেলে এসেই কালকের সেই গরীব রিকশাওয়ালার কথা মনে এসে দঃখে৷ চোখে জল এল। যদি আবার তার দেখা পাই! আমার নিম্ঠরতার প্রায়শিচত্ত করব ? বাসতবিকই অন্যায় হয়ে গিয়েচে । কিন্তু কী ভালই লেগেছে আজ। সন্ধ্যায় বনফল-ফোটা পাইন বনের পথে সম্প্রভার c