পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সঙ্গে বেড়ানোটা। আর কি সন্দির দশ্য চারিধারে, এমন ঢেউখেলানো ঘন সবজি শৈলশীর্ষ অন্য কোন জায়গায় দেখিনি। ছোটনাগপরের পাহাড়ের চেয়ে শিলং-এর পাহাড়রাজি অনেক বেশী সন্দর। অনেকদিন আগে একবার ডায়েরীতে লিখেছিলাম যে, ছোটনাগপরের পাহাড় আর বাংলা দেশের বনানী এই দলটোর একত্র সমাবেশ হয়েচে এমন কোন জায়গা যদি থাকে, তবে তার সৌন্দয্যের তুলনা হবে না। আমার একটি স্বপ্ন ছিল, ঐ দইয়ের একত্র সমাবেশ আছে এমন একটা জায়গা দেখব। কুঠীর মাঠে বেড়াতে গিয়ে পেছনের মেঘস্তােপগীলোকে পাহাড় কলপনা করে কতবার নিজের সে আকাঙ্ক্ষা পণ করবার চেন্টা করেচি। কিন্তু এখানকার বনানী দেখে বাকলিম সর্বপ্নলোকের সন্ধান পেয়েচি। লতা, ঝোপ, জঙ্গল, নিবিড় undergrowth, পরগাছা, চণগুলি উচ্ছল ঝরণাধারা, শিলাখণ্ডড, বিরাট বনস্পতির দল, বড় বড় নদীখাত—সব রয়েছে এখানে, অনেক বেশী রয়েচে—আর কী বাঁশবন, পাহাড়ের সব্বাত্ৰ-শধই বাঁশ-আর নতুন কোঁড় বেরচ্ছে সোনার সড়কির মত হেমন্তের প্রথমে—কি শোভা সে নবোদগত তরণ বেণদন্ডের, কি তার ছায়া, কি তার শনশন মন্মর ধবনি, বাংলার গাছগালোর মত সেই স্নিগ্ধ হৈমন্তী সম্রাণটি, পথে পথে। অবিশ্যি তিন হাজার ফটের ওপরে আর ও-প্রকৃতির ট্রপিক্যাল অরণ্য নেই, শািন্ধই পাইন আর পাইন। সকালে উঠোঁচি, এমন খাব কিছ শীত নয়। বাংলাদেশের পৌষ মাসের শীত। এর চেয়েও বেশী হয়। সপ্রভাদের ওখানে যাব বলে বেরিয়েচি, দেখি সপ্রভা ও আরও দটি মেয়ে আসচে, পথে দেখা হোল। একটি মেয়ে আসামী, নাম উষা ভট্টাচাৰ্য্য, ফিলজফিতে এম-এ পাস করেচে। সে প্রথমে বললে-আসামী ভাষা ছাড়া সে জানে না। তার খানিকটা পরে বেশ বাংলা বলতে লাগল। পাইন মাউণ্ট স্কুলের পথে আমরা উঠলম একট, পাহাড়ের মাথায়—সেখানে একটা চমৎকার পাইনবন, ঘন, নিতজনি। তারপর নেমে Kench-Strasse দিয়ে সরীতলা বেড়াতে গেলাম। নিজজন পাইনবনে আমরা বসে রইলাম বহনক্ষণ। বিকেলে ওরা মোটর নিয়ে এল, সবাই মিলে Elephant falls বেড়াতে গেলাম। নিজজন পাইনবনের মধ্যে দিয়ে পথ-gorgcটার ওপর একটা কাঠের পাল আছে। আমরা তার পাশের পাথরে কাটা সিড়ি ধরে ধাপে ধাপে নেমে গিয়ে একেবারে নীচে দাঁড়ালাম। কত বিচিত্র ফান ও বন্যপলপ পাহাড়ের ‘গায়ে দাঁধারে। খাব বান্টি এল, আমি একটা পাথরের ছাদের তলায় দাঁড়ালম। সপ্রভারা কাঠের পালটায় দাঁড়িয়েছিল, নেমে দেখতে এল আমি উঠাঁচ না কেন। সবাই বন্টিতে ভিজে গিয়ে মোটরে উঠলাম, তখন আবার বেশ রৌদ্র। মেঘ কেটে গিয়ে আকাশের নীল ফটে বেরিয়েচে। সনৎ কুটীরে এলে চা খেয়ে আমি বেরলম লেক দেখতে । তারপর চেরাপঞ্জি যাবার জন্যে মোটর সেন্টশনে গেলাম। আসবার পথে ইউনিভাসিটি থেকে যে ছাত্রদের দল এসেচে, তাদের ওখানে গিয়ে গলপ করলাম। আপার-শিলং-এর যে পথে আজ এলিফ্যান্ট ফলস-এ গেলাম—সেটি বড় সন্দর জায়গা। মাঝে মাঝে খাব নীচে পাইনবনে আচ্ছন্ন অধিত্যকা-দরে দরে লাবান ও শিলং পাহাড়চড়ায় ঘন কালো মেঘের কুন্ডলী—এই রোদ, এই মেঘ, আবার এই রোদ । ছোটনাগপরের পাহাড়ের মত ছোটখাটাে ব্যাপার তো নয় এ, খাসিয়া ও জয়ন্তী শৈলমালার কুলকিনারা পাওয়া যায় না একটা ছোট জায়গা থেকে। এর কতদিকে যে কত কি দেখবার জিনিস আছে, তা তিনদিনের মধ্যে শেষ করা অসম্পভব। তবে জায়গাটা বড় মেঘলা, বমিট লেগেই আছে, রোদের মাখ কাচিৎ দেখা যায়। এত ভিজে জায়গা আমার পছন্দ হয় না। শকিনো খটখাটে, নীরস জায়গা আমি বেশী পছন্দ করি, শিলং