পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লোকে বলে “পাহাড়'-আমার মনে হয় সেটা একটা কাঁকর ও রাঙা মাটির ঢিবি । বৈকালের পড়ন্ত ছায়ায় দার-প্রসারিত শ্যামল ধান্যক্ষেত্রের শোভা দেখা গেল। ডাঙােটার ওপর থেকে, কিন্তু এই পৰ্যন্ত, ওর বেশী আর কিছ নেই। এখানে। জগধারী বলে একটা গ্রাম আছে দমাইল দরে, ব্ৰাহ্মণী নদীর ধারে। সেখানে গািরপদ সিংহের বাড়ি আমাদের নিমন্ত্ৰণ হোল। বীরভূমের এ অঞ্চলের ঘর-বাড়ির গড়ন আমাদের চোখে ভাল লাগে না। গহ-নিন্মাণের শ্ৰী-ছাঁদ নেই, সৌন্ঠব নেই, চেরাপঞ্জিতে খাসিয়াদের পাথরের বাড়িগলোতেও যে রচিজ্ঞানের পরিচয় পেয়েচি, এই সভ্য বাংলাদেশে তার নিতান্তই অভাব চোখে পড়ল। জগধারী গ্রামে এক ব্ৰাহ্মণ বাড়ি দেখলাম পটে দােগা পজা হচ্চে। সেকালের একখানা মহিষমদিনী দােগা দেবীর পট টাঙানো, পেছনে রাঙাপাড় কাপড় পরা আগাগোড়া ঘেরাটোপে ঢাকা কলা-বোঁ, পাজার উপকরণ যথোিটই, মাত্তি নিশ্চমাণ করলে যেমন হয় তেমনি। আমরা নদীতে স্নান করলাম, হাঁট পয্যন্ত জল, কোন রকমে শায়ে স্নান করা গেল। কাছেই একটা মঠ আছে, সেখানে গিয়ে গরপাজার বিধি আছে দেখে এবং একটা মোটা লোকের ফটোগ্রাফের গলায় ফলের মালা কৌশলে পরিয়ে নৈবেদ্য সাজিয়ে পজো হচ্চে দেখে চটে গেলাম এবং তৎক্ষণাৎ সে সস্থান পরিত্যাগ করলাম। নর-পজা আমার ভাল লাগে না, আমার ধাতে ও বরদাস্ত হয় না। মড়াগাছায় গিয়েছিলােম একটা লাইব্রেরীর বাৰ্ষিক উৎসবে। লোহারাম মািখয্যে ওখানকার জমিদার, তাদের বাড়িতে থাকবার জায়গা দিলে। বেশ লোক ওরা, কি খাতিরযত্নটাই করলে! ওদের বাড়ির একটা ছেলে বিলেত-ফেরত, হিসেব শিখতে গিয়েছিল, দেখতে বেশ সস্ত্রী, বসে বসে অনেক রাত পয্যন্ত সোপনের গল্প করলে। সকালে উঠে গ্রামের মধ্যে বেড়িয়ে এলাম-আমাদের দেশের কৃত গাছপালা, খাব বড় বড় বাড়ি গ্রামের মধ্যে, বড় বড় সেকেলে পড়জোর দালান, যেন দিল্লীর মতি মসজিদ কি দেওয়ান-ই- আমের সংক্ষিপ্ত সংস্করণ। পড়জোর দালানের এই সম্পথাপত্যটা মসলমান তথা মাঘল সস্থাপত্যের অন্যাকরণ, ও বিষয়ে কোন ভুল নেই। হিন্দ স্থাপত্য যে এটা নয়, ভুবনেকবরের মন্দিরের, কোনারকের সৰ্য্যে মন্দিরের গঠনরীতি দেখলে তা বোঝা যাবে। কাছেই ধৰ্ম্মম দহ গ্রামে বাবা ছেলেবেলায় কথকতা করতে এসেছিলেন, সে কথা মনে পড়ল স্কুলের মাঠে বেড়াতে গিয়ে। বৈকালে অলপক্ষণই মিটিং-এ ছিলাম, তারপর পরিপর্ণ জ্যোৎস্না-রাত্রে ট্রেনে উঠলাম—দধার বন্যার জলে ভেসে গিয়েচে, এখানকারও অবস্থা আমাদের দেশের মতই। ক'দিন কেবলই ট্রেনে বেড়াচ্ছি, ১৩ই অক্টোবর শহর হয়েছে, আর আজ ২৮শে-এই ১৫ দিনের মধ্যে কত জায়গায় গেলাম—আর কত বার বেড়ালম। আজি ক'দিন এখানে এসেচি। এবার অতিরিক্ত বন্যা আসাতে কুঠীর মাঠের সে শোভা নেই। আমার তেমন ভাল লাগে না-ছোট এড়াঞ্চির গাছগালো তো জলে হেজে পচে গিয়েচে, যেখানে সেখানে কাদা ও পানা-শেওলার দাম ও কাচারীপানা। খকু এখানে আছে, ও রোজ সকালে সনানের আগে ও দাপরে আসে। আমি সকালে বাঁশিবাগানের পথ দিয়ে ঘাটে যাই, বেশী বনের মধ্যে যাই, মাকড়সার জাল এবার চোখে পড়াচে না। তা হলেও খাব বড় বড় জাল দেখলাম, শিলং-এ একরকম বড় জাল দেখেছিলাম পোস্টাপিসের কাছে। আমাদের এখানে মাকড়সাদের জালের টানা খাব দরে হয়। আবার খব ছোট টানার জালও দেখিনি যে তা নয়, যেমন কুঠীর মাঠে একটা ঝোপে। SS