পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সেবার দেখেছিলাম, এই গাছপালা, লতাঝোপ, মাকড়সা, পাখী এদের একটা বিভিন্ন জগৎ-সহানভূতির সঙ্গে ওদের না দেখলে কি ওদের বোঝা যাবে না। চেনা যাবে ? ? বিকেলে রোজ মাছ ধরতে যাই। অনেককাল পরে আবার কোঁচোর টােপ গোথে মাছ ধরতে বসেচি। বোধ হয়। বনগাঁ স্কুলে ভিত্তি হবার পরে আর কখনও মাছ ধরিনি —দ একদিন ধরতে বসলেও এত তোড়জোড় করে যে ধরিনি তা ঠিক। এবার ইছামতীতে মাছও হয়েচে বিস্তর। আমার ছোট ছিপে কেবল পাটি আর ট্যাংরা। ছাড়া পাইনে, কিন্তু ফণি চক্কত্তি ও হরিপদ রোজ সাত-আটাটা বড় বড় বান মাছ ধরে। বেলা যত পড়ে আসে, রোদ খাব রাঙা হয়ে ওঠে। ভারী সন্দের শোভা গাঙের, বকের দল উডে যায় জলের ওপর দিয়ে, সন্ধ্যার ছায়া ধীরে ধীরে নামে-আমি ফাৎনার দিকে স্থির দ। তিটিতে চেয়ে বসে থাকব না। সন্ধ্যার শোভা দেখব ? চোখ ঠিকরে যায়। ফাৎনার দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে। চোখে এত ব্যথা হয় যে মনে হয় যেন খাব বই পড়েছি । সন্ধ্যায় সময়টা খাব lowcly লাগে, কিন্তু বসে পাঁচনীদের সঙ্গে গলপ করি। আজ সবাবপ্রথম ভাল লাগল। কুঠীর মাঠ। বন্যার দরবন এবার কুঠীর মাঠের সে সৌন্দয্য ছিল না, ছোট এড়াবিগুর গাছগালো সব হেজে পচে গিয়েচে, সে শ্যামলতা আর কোনদিকে চোখে পড়ে না। আজ দােপরে খকু এসে অনেকক্ষণ গলপ করলে, তারপর আমার মনে পড়ল। যে এবার এসে আইনন্দির সঙ্গে দেখা করা হয়নি। নব্বই বছর হয়েচে ওর বয়েস, কবে মরে যাবে, যাই একবার দেখা করে আসি। মনে ছিল আনন্দ, কি জানি কেন জানিনে, সেই আনন্দভরা মন নিয়ে গেলােম পড়ন্ত বেলার হলদে রোদমাখানো গাছপালার নীচে দিয়ে কচিকাটা পলের দিকে। বনের দিক থেকে এক এক জায়গায় কি সন্দির ফলের সবাস ভেসে আসচে, অথচ কি ফলের যে অত সমােণ তা দেখা যায় না। খাঁজে খাঁজে দেখি পথের ধারে এক জায়গায় ঝোপে নাটাকাঁটার ফল ফটেচে, তার গন্ধ ঠিক আতরের মত। কিন্তু যে গন্ধটা আগে পেয়েছিলাম, তা নাটা ফলের গন্ধ নয়। সে গন্ধ অন্য ধরনের। শােধর ফলের গন্ধ বলে নয়, বনভূমির পাশ দিয়ে যাবার সময় লতাপাতা, ফলাফলের গন্ধ জড়িয়ে মিশিয়ে যে অপব্ব সবাসের সন্টি / করে গাছপালারাই তার স্রষটা, নীলাকাশের তলায় কোটী যোজন, দারের সায্যের রৌদ্রের সঙ্গে পথিবীর মাটির রস, বায়মণডলের আদশ্য বাপ, এদের সংযোগে ওরা যে রসায়ন প্রস্তুত করে, তাই আমাদের প্রাণীজগতের উপজীব্য। ভূতধাত্রী তরলতা নিৰ্ম্মমভাবে ছেদন করবার সময় একথা সব সময় আমাদের মনে ওঠে না। তাই আজ সকালে যখন দেখলাম তেতুলতলার মাঠের ধারে খানিক করে জমির জওগল কেটে দিয়েচে-তখন এত কস্ট হোল! ওখানে নাকি ওরা বেগমন করবে। আহা, কি চমৎকার সাইবাবলা ও কোয়োঝাঁকা গাছগালো কেটেচে, আজ ত্ৰিশ বছর ধরে ওই বনভূমি কত বনের পাখীর আহায্য যগিয়েচে, আশ্রয় দিয়েচ। সৌন্দৰ্য্যে, ছায়ায়, ফলের সৱাসে আমাদের তৃপ্তি দিয়েচে, তাদের ওভাবে উচ্ছেদ সাধন করে যে কোন প্ৰাণে তাও বাঁঝানে। একটা গাছ কেউ কাটলে আমি তা সহ্য করতে পারিনে। কাগজের কলের জন্যে আমাদের দেশ থেকে গাড়ি গাড়ি বাঁশ চালান যাচে, বাঁশবন দেশের একটা শোভা, এবার সব্বত্র দেখচি বাঁশবন ধবংসের পথে চলেচে। দাম তো ভারী, পাঁচ টাকা করে একশো—আমার ঝাড়ের বাঁশ আমি বেচিনি। দাপরে যখন রৌদ্রে মাঠের মধ্যে গামছা পেতে চাপ করে। শয়ে থাকি, দাির গ্রাম-সীমান্তে বাঁশের বনে শিমলের ডাল বাতাসে দোলায়, রঙিন-ডানা প্রজাপতিরা বনের ফলে ফলে উড়ে SO