পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তারা। একটা খেজর গাছে রসের ভাঁড় পাতা ছিল, ভাঁড়াটা নামিয়ে রস খেলাম, কিন্তু গাছে আর সেটা বাঁধতে পারলাম না। তখন আমার মনে হয়নি, তাহলে ভাঁড়াটার মধ্যে দটো পয়সা রেখে এলেই হত। এবার কি জ্যোৎস্না পেয়েছিলাম দেশে! যেমন দিনে আকাশ সনীল, মেঘমত --রাতে তেমনি ফটফটে জ্যোৎস্পন-অবিশ্যি শীতও অতি ভয়ানক। খকু ছিল দেশে, সে সব্বদাই এসে গলপ করত, বেশ লাগত। তাই। অনেক রাত্ৰে ঘাম ভেঙে গেল। বাইরে উঠে গেলাম, চারিদিক নিস্তব্ধ, অন্ধকার কেমন একটা মনোভাব হল, খানিকটা বিষাদও তার মধ্যে যে না আছে এমন নয়। এই চারিপাশের বাড়ির কত লোককে জানতুম যখন প্রথম এ মেসে এসেছিলাম, তারা সবাই কোথায় গেল ? কতকাল হল তাদের আর দেখি নে। তাদের কথাই মনে হল এ নিস্তম্ব অন্ধকার রাত্রে। দাপরে স্কুলের ছাদে একা বসে বসে যাদের কথা ভাবি, এরাও তাদের দলে আছে। সত্যি আমার মনের এ যে কি অদভুত অবস্থা, কোন পরিচিত বা অন্ধপরিচিত মানষেকে দরে রাখতে ইচ্ছে হয় না, সকলকে কাছে টেনে রাখতে ইচ্ছে করে যে কোন ! "Space & time, I am learning are mirrely modes or appearance Sincr a corner with thce darling, seems infinite now.--Goethe. অনেকদিন পরে দেশে গিয়েছিলাম। দপুরের পরে গিয়ে পৌছই। আমার ইচ্ছে, আমি যে গিয়েচি, কেউ যেন না টের পায়। কেননা তাহলে বড় লোকের ভিড় হয়, এপাডার ওপাড়ার মেয়েরা দেখা করতে আসে। আমি অত ভিড পছন্দ করিনে। বিশেষ করে ইন্দদের বাড়ি জানতে পারলে তো আর রক্ষেই নাই। কিন্তু শ্যামাচরণ দাদাদের টিউবওয়েলের কাছে গোপাল দেখি কি করাচে, সে তো গিয়ে বাড়ি খবর দেবে—সেই ভয়ে চাপি চাপি চলে যাচ্ছিলাম, তব ও ঠিক টের পেয়েচে । তখন অগতা ওদের বাডি যেতে হল। তারপর খরূদের বাড়িতেও গেলাম। খকুদের বাড়িতে প্রথমটাতে যাইনি। পাঁচনীদের বাড়ির উঠোনে আমাকে ঢাকতে দেখেই খক্‌ ডাকলে, আসন, আসন। ওদের দাওয়াতে গিয়ে বসে অনেকক্ষণ গলপ করলাম। ও বিশ্লেক্স আপনি শনিবার না। আসতে ভয়ানক রাগ করেছিলাম। খকু:ের বাড়ি থেকে যখন ফিরি, তখন বিকেল হয়েচে। সাজিতলার পাবে যেখানে ভাঙন, ধরেচে। নদীর পাড়ে, সেখানে একটা হেলে-পড়া খেজর গাছের গাড়ির ওপর বসে ‘’সে নদীর দিকে কতক্ষণ চেয়ে রইলাম । বড় আনন্দ ছিল মনে, আরও বসতে চেরেছিলাম, কিন্তু এদিকে আবার সন্ধ্যা হয়ে আসচে দেখে উঠতে হল। চালকীর মসলমান পাড়ার মধ্যে দিয়ে আসা আমার বড় ভাল লাগে—শীতের সন্ধ্যায়। ফটেন্ত ছোট এডাgির ফলের বন, শকানো গাছপালার গায়ে রাঙা রোদ, গরীব লোকের কাঁড়েঘর, ওধারেই নদী, নদীর ধারে মাঠ- দেখতে দেখতে আমি আর উমা যে সাঁকোর ধারে বনের মধ্যে খেলা করতুম, সেখানে এসে উঠলাম। পরদিন যখন, কলকাতায় আসি, ট্রেনে সারাপথ কেবল মড, কসেন্টলোব একটা গানের লাইন মনে আসতে লাগল বার বার।--আর কি সে আনন্দ মনে ! জীবনটাকে এই একমাসের মধ্যে একটা নতুন চোখে যেন দেখোঁচ। জীবনের কেন নতুন অর্থ হয়ঃ একটি নতুন উপন্যাস শার করব ভাবচি এই সম্পৰ্ণে নতুন ধারায়। ՏԳ