পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আমি একবার এসে সে অপব্ব জ্যোৎস্না রাত্রে বাঁকীপার স্টেশনের বাইরে এসে দাঁড়ালাম। এক একবার মনে হচ্ছিল যেন আমি এখনও ইসমাইল।পরেই আছি। এখান থেকে আজ বা কাল গিয়ে ইসমাইল।পরের সেই প্রান্তরে গিয়ে হাজির হব। কিন্তু কি পরিবত্তনই হয়েচে জীবনে এই ক'বছরে। তখনকার আমি আর বিত্তমান আমিতে অনেক তফাত। জীবনে তখন সখি ছিল, সে অন্যরকম। আর এখন, এ অন্যরকম। তখন জীবন ছিল নিডজন, এখন খকু এসেছে, সপ্রভা এসেচে। সপ্রভার কথা অত্যন্ত মনে হচ্চিল, আমি সেদিন যে পত্র দিয়েচি, তা শিলচরে আজ ঠিক পেয়েচে । এমন সময় পাঞ্জাব মেল এল। একটি মেয়ে লক্ষেী একজিবিশন দেখে ফিরচে, তার সঙ্গে রঙীনবাব আলাপ করিয়ে দিলেন। বল্লেন—‘এই যে বিভূতিবাব, ইনি বলচেন আমার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিন বিভূতিবাবার। আমি খািজছিলাম, কোথায় গিয়েছিলেন ?” মেয়েটা বেশ ভাল, অমায়িক সর্বভাব, সন্দরীও বটে। জিগ্যেস করলাম — লক্ষেী একজিবিশন কেমন দেখলেন ? তিনি বল্লেন—বেশ ভালই, আপনি দেখেন নি ? বল্লম-কই আর দেখলাম! মনে হল আমাদের পাড়ার খড়ীমা, নদি প্রভৃতি মেয়েদের কথা। ওরা পরকে ভাবে শেয়াল-কুকুর, কিন্তু নিজেরা যে কিসের মত জীবন যাপন করে তা কি ভেবে দেখেচে ? মাঝে পড়ে খকুটা ওদের মধ্যে পড়ে মারা গেল, একঘেয়েমী ও সঙ্কীর্ণ জীবনের তিক্ততায় । কি ভয়ানক শীত লাগল ট্রেনে বন্তিয়ারপর আসতে আসতে। অমন শীত অনেক দিন দেখিনি। রাত বারোটায় এক্সপ্রেস ব্যক্তিয়ারপর পৌছল। একটা কুলি নিয়ে কালীদের বাড়ি গেলাম। অনেক রাত পয্যন্ত ইরাদিদি ও কালীর সঙ্গে গলপ করলাম । পাটনা থেকে এসেই জানলাম সপ্রভা এসেচে। কলকাতায়। সেই রাত্রেই তার সঙ্গে দেখা কত্তে গেলাম। গত শনিবার বোটানিক্যাল গাডেনে বেড়াতে গিয়েছিলাম ওর সঙেগ। সেদিন কয়েকটি গান করলে—আমি জানতাম না ও এত সন্দের গান গায় । কি মিনিট লাগল ওর গান কটি সেদিন! বোটািনকাল গাডেন থেকে ফিরেই বনগাঁয় ৬-৫ o-এর ট্রেনে। সেন্টশনে সবোধ ও যতীনদার সঙেগ দেখা। রাত নটাতে বনগাঁয়ে পৌছেই দেখি জগদীশদা'র মেয়ে হাসির বিয়ে-সেদিনই। প্ৰফল্ল, হরিবাব প্রভৃতি বরযাত্রীদের খাওয়ানোর কাজে মহাবাসত। আমায় বল্লেন-এত রাত্রে কোথা থেকে ! খেতে বসে যাও। যোগেনবাবদের বাড়ি খাবার জায়গা হয়েছিল। খেয়ে যখন বাইরে এলাম তখন চাঁদ উঠেচে, অলপ অলপ জ্যোৎসা, কৃষ্ণপক্ষের ভাঙা চাঁদ। পরদিন দাপরের পরে বারাকপরে গেলাম। যাবার সময় আজকাল চালকীর মসলমান পাড়ার মধ্যে দিয়ে যেতে বড় চমৎকার লাগে। খকুদের রান্নাঘরে ওরা খেতে বসেচে। বল্লম – খড়ীমা, অতিথি আছে। ওরা অবাক হয়ে গেল। তারপর খব খানিকটা গলপগজব করে বিকেলে ফিরি। ফেরবার পথে গাজিতলা ছাড়িয়ে সেই খোজ র গাছের হেলানো গাড়িটায় বসে আব্দধচন্দ্ৰাকৃতি নদীর দিকে, ওপারের মক্ত তৃণাস্তৃত চরভূমির দিকে চেয়ে রইলাম। সন্ধ্যায় বনগাঁ ফিরে চার বাবর ওখানে চায়ের নিমন্ত্রণ ছিল, চা খাওয়া সেরে সাড়ে-আটটার ট্রেনে কলকাতা রওনা হই। আজ বিকেলে গোলদীঘিতে কতক্ষণ বসে ছিলাম। গৌরীর কথা মনে হল অনেকদিন পরে। এই সময়েই সে মারা গিয়েছিল। সেই শ্ৰীগোপাল মল্লিকের লেন, সন্দর ঠাকুরের দোকানে ধারে লাচি খাওয়া-সেই সব শোকাচ্ছন্ন গভীর দঃখ ও দন্দশার দিনগালো এতকাল পরে দঃস্বপ্নের মত মনে হয়। NqO