পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এরাও তো চলে যাবে। সপ্রভা পরশ বলচে গঙ্গার ধারে বসে বোটানিক্যাল, গাডেনে-আপনি শীগগির কিন্তু একবার শিলং যাবেন। আমি বেশীদিন বাঁচব না, সত্যি আমার আয় কম, জ্যোতিষী বলেচে। কবে মরে যাব, আপনি টেরও পাবেন না।b খাঁকুও তো বিয়ে হলে চলে যাবে বারাকপার ছেড়ে। তখন আবার ষে নিউজনি, সে নিডজন। আজ বিকেলে রেডিও আপিস থেকে ফিরবার পথে লালদীঘিতে একটি বসেছিলাম। সন্ধ্যা হয়ে আসচে। যশোর জেলার দীর এক গ্রামে-তাতে সেই মেয়েটি এখন তাদের বাড়ির সামনের বকুলতলাটিতে আপনমনে হয়তো বসে আছে। সপ্রভা হয়তো পরীতে সমদ্রের ধারে বসে কি ভাবচে। কি জানি কেন বসলেই ওদের দজনের কথা মনে হয়। তাই মনে হল এই সময় একবার জাঙ্গিপাড়া যাব। কলেজ থেকে পাশ করে বেরিয়ে সেই একঘেয়ে দন্দিনে জাণ্ডিগপাড়া গিয়েছিলাম। গৌরী তখন মারা গিয়েচে, আমার প্রথম যৌবনের সঙ্গিনী। তার কথাই তখন আমার সমস্ত মনপ্ৰাণ ভরে রেখেচে, সেই সময় গিয়েছিলাম জাঙ্গিপাড়া স্কুলে চাকুরি করতে, ১৯১৯ সালের ৬ই ফেব্রুয়ারী। সে কত সালের কথা হয়ে গেল!! তারপর ১৯২৪ সালের জানিয়ারী মাসে ভাগলপরে চাকরি নিয়ে যাবার আগে একবার জাঙ্গিপাড়া গিয়েছিলাম। সেও হয়ে গেল ১২, ১৩ বছর আগেকাব কথা। আর কখনও যাইনি। অথচ এই ১২ ১৩ বছরে জীবনে সবদিক দিয়ে কি ভয়ানক পরিবত্তনই হয়েচে ! এখন জীবনে কত লোক এসেচে, যাদের অস্তিত্ব পয্যন্ত আমার কাছে তখন ছিল অজ্ঞাত । আসলে দেখলাম অর্থ সম্পদ কিছ নয়। মানষই মানষের প্রাণে অমত সিঞ্চন করে। জীবনে যদি প্ৰেম এসে থাকে, তবে তুমি পার্থিব বিত্তে দীন হলেও মহাধনী-- ফোর্ড বা রকফেলার তোমাকে হিংসা করতে পারেন। আর যদি প্ৰেম না আসে, যদি কারো সিমত-হাস্যে-ভরা চোখ দটি তোমার অবসর মহত্তে মনের সামনে ভেসে না ওঠে, যদি মনে না হয় দরে কোনও পল্লীনদীর তটের ক্ষদ্র গ্রামে, কি কোনও শৈলশিখরের পাইন বাচ্চ গাছের বনের ছায়ায় কোন স্নেহময়ী নারী নিশিচনত নিরালা অবসরে তোমার কথা ভাবে, তবে ফোড বা রকফেলার হয়েও তুমি হতভাগ্য। হয়তো একথা Platitude ছাড়া কিছ নয়, কিন্তু যে Platitude জীবনে অনাভব করে, তখন সে আর Platitude থাকে না, তার জীবনের অভিজ্ঞতায় তা হয়ে দাঁড়ায় পরম সত্য । জাঙ্গিপাড়া স্কুলে প্রথম চাকরিতে ঢাকি ১৯১৯ সালে। হঠাৎ জাঙ্গিপাড়া যাওক । ঘটলে এতকাল পরে। ১৯২৪ সালে একবার বেড়াতে গিয়েছিলাম, আর কখনও যাইনি। স্কুলের দিকে গিয়ে বন্দোবনবাবরে সঙ্গে দেখা হল। চিনতেও পারলেন । চন্দনপরের গাঁয়ের পাড়ে সেই তালতলায় তখন কত বসে থাকতুম। পরোনো জায়গাটা দেখতে গেলাম শ্ৰীীরামপারের দিদির সঙ্গে---এই সব জায়গার সমাতি বড় বেশী জড়াতো -ওখানে গিয়েই সে কথা মনে পড়ল। তারাজোলের পথেও খানিকটা গেলাম। সে পথটা তেমন ফাঁকা নেই, বড় বড় গাছ হয়ে পড়েচে । বাজারে আমার কয়েকটি ছাত্রের সঙ্গে দেখা হল—যেমন গজেনা, ফকির মোদক প্রভৃতি। গজেন এই স্কুলেই এখন মাস্টারী করচে। বিষ্ণপাের গেলাম বন্দোবনবাবদের বাড়ি। ওদের সেই পরোনো রান্নাঘরটা ঠিক, আছে, তার দাওয়ায় বসে খেলাম অনেক পরে। রাত্রে অনেক গলপ হল পাকুরের ঘাটে Tð