পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ਏ | রাত্রে রান্না হল শািন্ধ ভাত। অন্য কোনো উপকরণ নেই, নতুন পৰ্যন্ত না, এদেশের লোকের দেখলাম নন না হলেও চলে। এর আগেও অনেকবার দেখোঁচি, ননকে এরা রন্ধনের একটা অত্যাবশ্যক উপকরণ বলে আদৌ মনে করে না। সমস্ত দিন পথ হাঁটার পর শােধ ভােতই অমতের মতো লাগলো আমাদের মাখে। বিছানায় শয়ে পড়বার আগে আমি একবার বাইরে গিয়ে অরণ্যানীর নৈশরাপ দেখতে চাইলাম, ডাকপিয়াদা আমাকে বাইরে যেতে বারণ করলে। তারপর সে একটা গলপ বললে। মান্দালে থেকে পঞ্চাশ-ষাট মাইল দরে কোথায় গভর্নমেন্টের রিজাভা ফরেস্ট আছে। সেখানে একজন নতুন ফরেস্ট রেঞ্জার এসে একবার ডাকবাংলোয় উঠলো। ডাকবাংলোটির চারিধারে নিবিড় বন, সঙ্গের কুলিরা বলে দিলে সন্ধ্যা হলেই সাহেব যেন আর বাইরে না থাকে, ডাকবাংলোর দরজা-জানালা ভালো করে বন্ধ করে দেয়, আর বেশ ভালো করে রোদ উঠবার আগে যেন দরজা খালে বারান্দাতে না আসে। রেঞ্জার ছিল মাদ্রাজী মসলমান, খােব সাহসী, ত্ৰিশের মধ্যে বয়স। সন্ধ্যা হবার একটি আগেই সে দরজা বন্ধ করে দিয়ে ঘরের মধ্যে ঢািকলো। কিছদক্ষণ পরেই তার মনে পড়লো তামাক খাওয়ার পাইপটা বারান্দায় টেবিলে ফেলে রেখে এসেচে। তখনও ভালো করে অন্ধকার হয়নি-সাহেবের সঙ্গে যে আরদালি ছিল সেও এ সব অণগুলে নতুন লোক। আরদালি ভাবলে চট করে দরজা খালে পাইপটা নিয়ে আসবে। বাইরে গেল। কিন্তু সে ফিরলো না ; তার দেরি হতে দেখে সাহেব বারাণদায় গিয়ে কোনোদিকে আরদালির চিহ্ন দেখতে পেলে না। বাংলোর বাইরে কিছ দরে কুলিদের থাকবার ঘরে আট-দশজন কুলি ছিল, সাহেবের চীৎকারে তারা মশাল জৰালিয়ে অস্ত্ৰশাস্ত্র নিয়ে এসে জড় হল। বারান্দার ও-প্রান্তে দেখা গেল বাঘের পায়ের থাবার দাগ । পরদিন দীর বনের মধ্যে হতভাগ্য আরদালির দেহাবশেষ পাওয়া যায়। এ ধরনের গলপ আমি কিন্তু এর আগে সন্দরবন সম্পবন্ধে শানেছিলাম। সতরাং এ গলেপ যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ আছে। তবে বনের মধ্যে খড়ের ঘরের কোণে শায়ে মন্দ লাগে না। শািনতে এ ধরনের কাহিনী। আমি ওকে বললাম—তুমি ইংরিজি শিখলে কোথায় ? ডাকপিয়াদা বললে-প্রোমের মিশনারী স্কুলে। --তোমার বাড়িতে কে কে আছে ? —-কেউ নেই, আজ দশ বছর হল মা মারা গিয়েচেন, ৩ারপর বাড়িও নেই। ডাকপেয়াদার কাজ করি, সিংজতে বাসা নিয়ে থাকি। লোকটাকে বেশ লাগলো। অনেক রাত পৰ্য্যন্ত জেগে ওর সঙ্গে গলপ করলাম। ওর ইচ্ছে বিয়ে করে, কিন্তু সামান্য মাইনে পায় বলে সাহসে কুলোয় না। আমি বললাম-কেন, তোমাদের দেশে তো তোমার চেয়ে অনেক কম মাইনে পেয়েও লোকে বিয়ে করচে ? মংডতে তো সামান্য ফিরিওয়ালাকে সস্ত্ৰীক জিনিস ফিরি করতে দেখোঁচি ? --বাবা, ওরা লেখাপড়া জানে না। তাই অমনি করে। আমি ইংরিজি স্কুলে তিনচার বছর পড়ে তো আর ওদের মতো ব্যবহার করতে পারিনে! আরও জিজ্ঞেস করে জানলাম। ওখানকার একটি মেয়ের সঙ্গে তার খব ভাব। মেয়েটি সিংজতে চরাটের কারখানায় কাজ করে, সপ্তাহে দা টাকা করে মাইনে পায়। আমি বললাম—সে কি বলে ? O6