পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাড়ীকে কিছ দিয়ে তাড়াতাড়ি সেখান থেকে বার হলাম, কারণ ট্রেনের বেশী দেরি নেই। অশথতলায় তখনও জ্যোৎস্না ফোটেনি, শেষ বিকেলের ছায়া। হরিবোলার দোকানো এসে ইন্দ ও ফণিকাকাকে পাওয়া গেল। ওরা বসে গলপ করচে। আমার মনে কি অদ্ভুত আনন্দ ! সত্যি এমন সব আনন্দের দিন জীবনে ক’বার আসে ? এই জ্যোৎস্না, এই শক্ৰতারা, আধখানা চাঁদ, সেকারাদের বাড়ির কাছে নেবফলের গন্ধ পাওয়া গেল-এরই মধ্যে কত কি ভাবনা!! এ আনন্দ অনেকদিন ভোগ করলাম বটে। আজ চার বছর এই প্রথম বসন্তের দিনে এখানে ফল-ফোটা দেখি। আজ চার বছর নানা সন্ধ্যায় নানা ছটির দিনে নানা বিকেলে খকু আমায় আনন্দ দিয়েচে—কত ভাবে, কত কথায়। ওই ভাবতে ভাবতে জ্যোৎস্নার মধ্যে সেন্টশনে এলাম। গোপালনগর স্কুলে হাত্রেরা থিয়েটার কারচে’ আজ। আমাদের গাঁ থেকে মেয়েরা দেখতে আসবে। ট্রেনে যখন বনগাঁ আসচি। তখনও আমার অদভুত আনন্দ। গাছের সারির ওপর দিয়ে পারঘাটার জলের ওপারে। আমাদের গাঁয়ের দিকে চেয়ে ভাবচি, সবাই এখন কি করাচে ? খািক এখন কি করাচে ? হয়তো রান্নাঘরে বসে আছে। এতক্ষণ, কারণ আজ কাকার তিথি উপলক্ষে ব্ৰাহ্মণ ভোজন হয়েছিল বাড়িতে ওবেলা, এবেলা বাসি পায়েস, ভাত-তরকারী নিশ্চয়ই আছে, তাই সে বসে আছে। ইন্দ, এতক্ষণ বারান্দায় ছোড়া মাদর পেতে একা বসে 可7区1 3颈T石可可乙更1 ভাবতে ভাবতে বনগাঁয় ট্রেন এসে দাঁড়াল। প্ল্যাটফমে আমার কাকার ছেলে। লালমোহন লাচি-সন্দেশ বিক্ৰী করচে। ও এখানে আছে অনেকদিন, লেখাপড়া শেখেনি, গরীবের ছেলে, ওই কাজই করে। একটা পরে কলকাতার ট্রেন এল-আমি সারাপথ কেবল ভাবছিলাম। এই ক দিনের কথা, আজ স্যারাদিনের কথা। খকে কতবার এল, সেকথা কেবলই শক্ৰতারার দিকে চেয়ে ভাবি, ওখানেও কি এমন বনশ্যাম পল্লী আছে, তার ধারে ছোট্ট গ্রাম্য নদী বয়ে যাচ্ছে, কত মাধবী রাতে, কত বর্ষণমােখর আষাঢ় প্রভাতে, কত বসন্তের দিনে গাছে গাছে প্রথম মকল আবিভূতি হবার সময়ে, ওদের দেশেও চোখে চোখে লোকে কত কথা বলে, কত স্নিগ্ধ মধর ভাব ও বাণীর বিনিময়। শক্ৰত্বারা নাকি শােধই বরফের দেশ, সাত হাজার ফন্ট উচ্চ হয়ে গেলেসিয়ার বরফের স্তর জমে আছে গ্রহের ওপরে। ভাবতে ভাবতে ট্রেন এসে দাঁড়াল দমদমা গোরাবাজারে। অপব্ব সরস্বতীপ, জার ছটি শেষ হল। অনেকদিন মনে থাকবে এদিনগালোর কথা। সেদিন চন্দননগরে গিয়েছিলাম সাহিত্য-সম্মেলনে। এখান থেকে মোটরে সজনীদের সঙ্গে গেলাম। উত্তরপাড়া, বালি, কোন্নগর প্রভৃতি শহরের মধ্যে দিয়ে— গঙ্গার ধার দিয়ে দিয়ে পথ। অনেকদিন এপথে যাওয়া হয়নি, সেই অনেকদিন আগে একবার শ্ৰীরামপারে গিয়েছিলাম মোটরবাসে এপথে। সভামন্ডপে অনেকের সঙ্গে দেখা হল, নীহার রায় বিলাত থেকে ফিরেচে। সনিীতিবাব, বল্লেন, সেদিন কনভোকেশনের দিন। আপনি কোথায় গেলেন ? আপনাকে খাঁজলাম, আর দেখা পেলাম না। প্রেসিডেন্সি কলেজের গোটটার কাছে কনভোকেশনের দিনে সনেীতিবাবার সঙ্গে দেখা হয়েছিল, তারপর আমি তাঁকে হারিয়ে ফেললাম। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য সভার উদ্বোধন করেই চলে গেলেন। আমি গেলাম আহার করতে। তারপর রবীন্দ্রনাথের বোটে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে দেখি অমল হোম, নীহার রায় সেখানে বসে। বাগান সম্পবন্ধে অনেকক্ষণ কথাবাৰ্ত্তা হল রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সনেীতিবাবার। সার যদীনাথ সরকার এলেন বিকেলের দিকে। রবীন্দ্রনাথের বোটটা বড় চমৎকার। মেঘ করেচো আকাশে । S8