পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ও-পারের মেঘে-ভরা আকাশটা বেশ দেখা যাচ্ছিল। অনেকদরের একটা গ্রাম। এই সান্ধ্য আকাশের তলায় কেমন দেখাচ্ছে ! ওখান থেকে আমরা মতিলাল রায়ের প্রবত্তক সঙ্গে গেলাম। ফাদার দোঁতেন। আমাদের সঙ্গে মিশল এসে সজনীদের গাড়িতে। ফাদার দোঁতেন। জনৈক পাদ্রী, কেবল বাংলা জানে। সন্ধ্যার পরে আমরা আবার বালি, শ্ৰীরামপাের, উত্তরপাড়ার মধ্যে দিয়ে কলকাতায় ফিরি। আজ মাঘীপর্ণিমা। টালিগঞ্জের খাল পার হয়ে সেই যে সশৰীলেশবরী আশ্রমে আর বছর গিয়েছিলাম, এবারও সেখানে গেলাম। গাছে গাছে আমের বউল হয়েচে, ঘোটফল ফটেচে জামতলায়, বাতাবীলেব, ফলের গন্ধ পথে, কোকিল ডাকচে। আর বছরের সেই ইন্দাদিদি আছেন, তিনি ঘরের মধ্যে বসিয়ে বাড়ির ছেলের মত যত্ন করে খিচড়ি প্রসাদ খাওয়ালেন। বহ, মেয়ের ভিড়। কলকাতার উপকণ্ঠে এই নিভৃত পাড়াগায়ের দেবালয়টি আমার বেশ লাগল। বসন্তের প্রথম দিনগলিতে আকােশ খরগ্নেীদ্ৰ, নতুন ফোটা ফলের দল মনে কি একটা অপব্ব আনন্দ দেবার আশা দেয়, বিশেষ করে এই নীল আকাশ। সেদিন দাপরে খয়রামারির মাঠে একা বসে বসে বসন্ত-দর্পরের নীল আকাশ আর খরারৌদ্র ভোগ করছিলাম। মাঠের মধ্যে ফল-ফোটা শিমালগাছগালো সমস্ত পটভূমিকে এমন একটা শ্ৰী দান করে, তা আর কোন গাছ পারে না, খানিকটা পারে। শীতকালের ছোট এড়াশিgর ফল। আমার মনে হয় ওরা গ্রাম্য প্রকৃতির ঘরোয়া ভাবটা কাটিয়ে বহত্তর পথিবীর বহত্তর ভূমিশ্ৰীীর সঙ্গে ওকে এক করিয়ে দেয়- মনে এনে দেয় আফ্রিকার ট্রপিক্যাল অরণ্যের কথা, দক্ষিণ আমেরিকার আধ-মর অধি-জঙ্গলে ভরা জায়গার কথা—নানা বিরাট, জনহীন, বহবিস্তীর্ণ প্রাকৃতিক রাজ্যের ছবি। ওতেই এত ভাল লাগে দিগন্ত রেখার রাঙা ফািলফোঢ়া শিমল গাছ, অথবা অন্ধ-শতক খড়ের মাঠে ছোটখাটো ঝোপের মধ্যে থেকে একা উঠেছে একটা বড় শিমল গাছ - তবে শেষেরটা ভারী অদভুত। মাঠে যদি আমন দেখি, তবে সেখানে বসে। সারাদিন কাটিয়ে দিতে পারি। মানষের মন বড় অদভুত জিনিস। লোকে মাখে। যে কথাই বলক, বা চিঠিতে যে কথাই যাকে লিখক, তার মান সম্পৰ্ণে অনা কথা বলে। মাখের কথায় আর মনের কথায় এই জন্যেই মিল প্রায় হয় না। হরিনাভি স্কুলের ছেলেরা ওদের re-unionএ এসেছিল বলতে, ওদিকে মণিবাবর বাড়িও নিমন্ত্রণ ছিল, দাই কারণে এদিন রাজপর স্টেশনে নেমে হরিনাভি গেলাম। বসন্তে গ্রাম্য-শোভা দেখাই ছিল আমার আসল উদ্দেশ্য। তাই খররৌদ্র-দপরে বেগােনসদর বাড়ি থেকে বেরিয়ে পাড়ার মধ্য দিয়ে যে পথটা গিয়ে হরিনাভি স্কুলের কাছে মিশল, ওই পথটা দিয়ে গেলাম নেমে। খাব আম-ম কুলের সৌরভ, লেব, ফলের গন্ধ, ঘটবনের শোভা, কোকিলের ডাক, মাথার ওপর দাপরের রোদ ঠিকরে পড়া নীল আকাশ। আপনমনে যাচ্চি, কত কালের পরানো পথ, কতবার এ পথ দিয়ে এসেচি গিয়েচি, যখন হরিনাভি স্কুলে মাস্টারি করতুম। ফণিবাবদের বাড়ি নিমন্ত্রণ সেরে স্কুলে এলাম। প্রিয়নাথ ব্ৰহ্মচারী আমাদের বাল্যকালে স্কুল ইনস্পেক্টর ছিলেন, তাঁকে দেখলাম অনেক কাল পরে। স্কুলের ওদিকের আকাশটা আমার তখন-তখন বড় প্রিয় ছিল, আর পাঁচিলের ওদিকের গাছপালা, সভা ছেড়ে আমি তাই দেখতে উঠে গেলাম। তারপর ভোলেবলের সঙ্গে বেরিয়ে বৈকালের ছায়ায় একটা ছায়ােভরা পথ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে একটা মাঠের ধারে এসে বসলাম। সােয্য তখন অস্ত যাচ্ছে, দিজনে বসে পরোনো দিনের, গল্প কতই করি। ওখান থেকে উঠে আরও কিছু দরে এসে একটা ૨ઉ;