পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরোনো ভাঙা দোলমঞ্চের কানিসের ওপর সন্ধ্যা পয্যন্ত বসে থাকি। দোলমণ9টার চারিধারে ভাঙা মন্দির, পাড়ার মধ্যে বলে চারিদিকেই আমবাগান, তার তলায় খব ঘোটফল ফটেচে, একধারে একটা কামিনী ফলের ঝাড়। নানা ফলের সম্মিলিত সৌরভো সন্ধ্যার বাতাস ভরপাের। হাতুম-পেচা ডাকাচে প্রাচীন গাছের কোটিরে। দএকটা নক্ষত্র উঠেচে আমবনের ওপরে আকাশে। অন্ধকার হয়ে গেল। একটা পকুরের ধারে এসেও খানিকটা বসি । কাল সন্ধ্যাবেলা নীরদবাবার বাড়ী গিয়েছিলাম দােপারে, প্রমোদবােব অনেক দিন, পরে কলকাতায় এসেচে। অনেক গলপগজব করলাম। একদিন হিজলী যাওয়ার কথাও হ'ল। ওখান থেকে পাশপাতিবাবকে ফোন করে জানলাম দিলীপ রায় কলকাতা এসেছে এবং আজ থিয়েটার রোডে ডাঃ প্রতাপচন্দ্র মজমিদারের বাড়ি সন্ধ্যায় গান হবে। হেমেনদা এলেন তাঁর মেয়েদের নিয়ে। ওদেরই মোটরে ওদের সঙ্গে প্ৰতাপ মজমিদারের বাড়ি গেলাম। দিলীপের সঙ্গেও দেখা গেটের কাছেই। ওর সঙ্গে কখনও চাক্ষষ আলাপ হয়নি, যদিও চিঠিপত্রে আজ আর্ট-ন বছরের আলােপ। নাম শনে বকের মধ্যে জড়িয়ে ধরলা, কি চমৎকার উদার সর্বভাব দিলীপের ! বড় ভালো লাগে ওকে। বহ বিশিষ্ট নরনারী এসেচেন দিলীপের গান শািনতে। আজ আট-ন বছর পরে দিলীপ কলকাতায় এল। ডাঃ মহেন্দ্রলাল সরকার, জীবনময় রায়, সৌরীন্দ্র মখোপাধ্যায়, বন্ধদেব বস, শচীন্দ্রদেব বৰ্ম্মমণ, উমা মৈত্র, ‘পরিচয় কাগজের দল--অনেককেই দেখলাম। কেবল মণি বোসকে পাওয়া গেল না। আব্বাস তায়েবজীর মেয়ের কৃষ্ণবিষয়ক গানটি আমার সকলের চেয়ে ভাল লাগল। আসল গানটা হিন্দীতে ছিল, দিলীপ বাংলাতে অন্যবাদ করেচে। কি চমৎকার গাইচে দিলীপ আজকাল! বাংলা গানের অমন ঢং কোথাও আর কখনও শনিনি। কাল দিনটা খাব ছাটোছটি গিয়েচে। চারবাব হাইকোর্টের জজ হয়েচেন বলে তাঁকে আমাদের সবুকুল থেকে অভিনন্দন দেওয়া হল। কালই আবার দিন বঝে ইউনিভাসিটিতে Examiners' mecting—স্কুলে ফণিবাব এসেছিলেন, আমাদের স্কুল ছেড়ে গিয়ে পৰ্যন্ত আসেননি। তাঁর সঙ্গে গলপ করে চলে এলাম ইউনিভাসিটিতে। সেখানে মণি বোস, প্রমথ বিশী, জসীমউদ্দিন, গোলাম মাস্তাফা, মনোজ বস, বারীন্দ্র ঘোষ, দক্ষিণারঞ্জনবাব সকলের সঙেগ দেখা। সনেীতিবাব প্রধান পরীক্ষক এবারও । ওখানকার কাজ শেষ করে সন্ধীরবাবদের বইয়ের দোকানে সবাই মিলে গিয়ে খানিকটা আডা দিলাম। তারপর আবারুদ এলাম স্কুলে। চারবাবার অভিনন্দন সভা তখন জোর চলচে। অনেক রাত পৰ্যন্ত আমরা ছিলাম। তারপর এক মাস্টারমশাই আর আমি এসে সেণ্ট জেমস স্কোয়ারে একখানা বেণ্ডের ওপর বসে অনেক পরোনো কথার আলোচনা করলাম। রসিদ কি করে আমাদের অনিন্ট করতে চেয়েছিল। ক্লাজির সাহেবকে আমরা কেমন সাবধান করে দিয়েছিলাম। এই সব কথা । ইস্টারের ছটিতে বারাকপরে কাটাইনি অনেকদিন। এবার গিয়েছিলাম। আমার যাওয়ার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ঘোটফল দেখা। প্রথম দেখলাম বনগাঁয়ের খয়রামারির মাঠে—কি অজস্র ঘোঁটবন সেখানে। এর আগের সপ্তাহেও যে তিনদিন ছটি ছিল, তাতেও বনগাঁ গিয়ে রোজ বিকেলে রাজনগর ও চাঁপাবেড়ের মাঠে যৌতুম বেড়াতে । ফিরবার পথে অপৰিব জ্যোৎস্নায় একটি ঘোঁটবনের কাছে বসে থাকতুম। পশ্চিম আকাশে শকতারা জৰল জব্বল করত, তেতো তেতো ঘোটফলের গন্ধ। পাখী ডাকত, কোকিল ও পাপিয়া। বৌ-কথাকরি এখনও আমদানি হয়নি। বারাকপরে ঘোঁটবন। RV