পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেখলাম। খাসিয়া মেয়েরা বেড়াতে এসেচে। ওখানে দাঁড়িয়ে কাল কেবলই মনে হয়েছে সপ্রভা এখানে নেই। একবার মনে হল, সেদিন যে পানিস্তরে বেশ ক'দিন কাটিয়ে এসেছিলাম সেকথা। সেই চাঁদা-কাঁটার বন, সন্ধ্যায় একটা তারা উঠল। তাই নিয়ে ওখানকার ছেলেদের সঙ্গে সেই নক্ষত্ৰজগৎ সম্পবন্ধে আলোচনা। বান্টি আরম্ভ হয়েচে একঘেয়ে। থামবার নাম নেই। এ যে শ্রাবণ মাস। গরম আর সায্যের আলোর জন্যে মন হাঁপাচ্ছে। লাইউমক্কাতে সনীলবাবার সঙ্গে একবার দেখা করতে গেলেও হত—কিন্তু সপ্ৰভা না থাকাতে আমার কোন কাজে উৎসাহ নেই। কে বেরোয় এই বান্টির মধ্যে ? ভেবেছিলাম। একবার শিলং পিক-এ উঠিব-তাও গেলাম না। মজা এই যে এখানে এতগলো লোক এসেচে হোটেলে-সবাই কেবল বসে বসে খাচ্চে আর শরীর সারাচ্চে—কোন কিছ দেখবার উৎসাহ নেই ওদের। খাসিয়া ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া শিখে বড় সাহেবী-ভাবাপন্ন হয়েচে। ওরা সাহেবদের ধরনে হাত নেড়ে আনন্দ জানায়—কাল সনৎ কুটিরের সামনে এক খাসিয়া ছোকরা তার বন্ধকে বল্লে—Cheerio! কেন বাবা, তোদের মাতৃভাষায় কোন কথা নেই ? গিজা থেকে কাল রবিবার সন্ধ্যার সময় অনেকগলো। খাসিয়া মেয়েপােরষি ফিরছিল। নিজের ধৰ্ম্মম ও এরা ছেড়েচে । এই শীত আর বন্টির মধ্যে নাইবার উৎসাহ হচ্চে না। জোড়হাটের ভদ্রলোকটি তেল মাখিচোন। আমায় বল্লেন, নাইবেন না ? বল্লাম-মাথাটা ধোবা মাত্র। আজ এখন চলে যাব-বন্ড ঠান্ডা লাগবে। সারাদিন । Rain, Rain, go to Spain—fiks a3POGI PITÈR KAN TSRS KIfs, Grí3 TONG নইলে সন্দর বিকেলের ছায়া নামে না, পাখী ডাকে না, ফলের সৌন্দৰ্য্য থাকে না।-- একঘেয়ে বান্টির শব্দে মন খারাপ হয়ে যাচ্চে। দরের পাইনবনাবিতে পাহাড়ের চড়াটা বন্টিতে অপব্ব হয়ে উঠেচে। এখানে এসেচি অনেকদিন, শিলং থেকে ফিরেই। কিন্তু এতদিন লিখতে পারিনি। এসেই প্রথমে একদিন পায়ে হোটে গিয়েছিলাম। বাগানগাঁয়ে পিসীমার বাড়ি। কাঁচিকাটার খেয়া পার হয়ে সেদিন গেলাম গাড়া-পোতার বাজারে, গিয়ে একটা দোকানে খানিকটা বসে রইলাম, কারণ সে সময়টা বড় বন্টি এল। তারপর চলে গেলাম পাটশিমলে। সন্ধ্যার আগে বাগানগাঁ। ফিরবার দিন খাব বেলা থাকতেই মোল্লাহাটির খেয়া ঘাটে এসে পৌঁছে গেলাম। জামদা’র বাঁওড় পার হলাম দাঁড়াটােনায় খেয়ায় । পার হয়েই-এপারটা বেশ ছায়াভিরা চমৎকার জায়গা-খানিকক্ষণ বসে তারপরে রওনা হই। সন্ধ্যার আগে এসে বাড়ি পৌছে গেলাম। একটা বটগাছের তলায় অনেকক্ষণ বসেছিলাম মোল্লাহাটির ওপারে-সেটা বড় ভালো লেগেছিল। দিন বেশ কাটচে। গোপালনগরের বারোয়ারি দেখচি প্রতি বৎসরের মত-কাল রাত্রেও হয়ে গেল। কাল অনেক রাত্রে বাড়ি ফিরোচি। একদিন খিনাদের ওখানেও গিয়েছিলাম। কিন্তু তা সত্ত্বেও এবার যেন বেশীদিন এখানে ভাল লাগচে না। মন উড় উড় করচে, কেন তা কি জানি। জীবন এখানে অনেকটা একঘেয়ে, সেইজন্য কি ? কিন্তু নিৰ্ম্মমলতা ও প্রাকৃতিক শোভাসৌন্দয্যে এর তুলনা নেই বলেই তো এখানে আসা। এবার সেটাও যেন ভাল লাগচে না অন্য অন্য বছরের মত—তাঁর একটা প্রধান কারণ আমি বৰ্ব্বতে পেরেচি। কলকাতায় যে কম্পমবিহল জীবন কাটিয়ে এসেচি। এবার, তার তুলনায় এখানকার অপেক্ষাকৃত নিস্ক্রিয় জীবনযাত্রা মনকে নিস্তেজ করে দিচ্ছে। RS