পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আমি মাঠের মধ্যে থাকতে ভালবাসি। তবে মোটে সেদিন কলকাতা থেকে এসোচি বলে এই রকম লাগচে-দীঘদিন কাটলে অভ্যস্ত হয়ে যাবে এসব। কথা বলবার লোকের অভাব সকলের চেয়ে বেশী পরিলক্ষিত হচ্ছে এখানে। শ্যামাচরণদা'র ছেলেটি সেদিন মারা গেল, আমরা সবাই যথেস্ট চেন্টা করেছিলাম তাকে বাঁচাবার। সেজন্যেও মনে একটা কািট আছে। বিকেলের দিকে কুঠির মাঠে বেড়াতে গেলাম। আজ খাব বান্টি হয়েছিল দর্পারে। তাই পথে একটা বণ্টি হয়ে কাদা হয়েছিল--এত ফল এত গাছ-পালাও কুঠির মাঠে ! সৰস্বত্রই সৌন্দয্য। এখান থেকে আরম্ভ করে বাগানটা পয্যন্ত সমস্ত জায়গাটাই একটা প্ৰকান্ড বড় পাক। কত বিচিত্র লতােবক্ষগলেমর সমাবেশ, কত বিচিত্র বন্যফলের সমারোহ—কত কি পাখীর ডাক, বাঁশগাছের সারি, প্রাচীন বট-আশ্ববিখ্য – সবই সন্দর। মনটা ভার ছিল, একটা ছোট বাবলাগাছের গাড়ির ওপর গিয়ে কতক্ষণ শয়ে রইলাম। আমার চারিপাশে সৌদালি ফলে ঝালাচে, একদিকের গাছপালার ফাঁকে কি সন্দির ময়ারকন্ঠি রংয়ের নীল আকাশ, বসে কত কী ভাবলাম। এই যে বিরাট বিশদ্ব-চরাচর, এতে কত গ্রহ, কত উপগ্রহ, কত নীহারিকা-রাজি, কত Globulcr cluster, কত নাক্ষত্রিক বিশব, এদের মধ্যে কত আমাদের মত প্রাণী রয়েচে । Jeansএর দল যাই বলন, আমি বিশ্ববাস করতে পারিনে যে শািন্ধ আমাদের এই পথিবীতেই বদ্ধিমান প্রাণী আছে, আর কোথাও নেই। তা যদি থাকে, ধরেই নেওয়া যাক, তবে তাদের মধ্যে অনেকে কম্পট পাচ্ছে-আজ। আমি তাদের দলের একজন। দঃখে তাদের সঙ্গে আমি এক হয়ে গিয়েছি। সকালবেলা কি বিশ্ৰী বিষা নেমেছে। আমার ঘরের বাইরে বড় বড় পাতাওয়ালা গোঁড়ালেবাের গাছটাতে থোকা থোকা সাদা ফল ফটেচে। মনটা ভাল না, বসে বসে লিখছিলাম। বাইরে বসে, হঠাৎ ভয়ানক বান্টি আসাতে ঘরের মধ্যে এসে বসেচি। ঝিলবিলের দিকে জলের তোড় ছটাচে কলকল শব্দে। নদিদি ও বড় খড়ীমা ওদের আমি কুড়িয়ে বেড়াচ্চে জলে ভিজে। খকুকে বড় একটা দেখা যাচ্ছে না। AVOGS বিকেলে মেঘ-থমকানো আকাশের তলা দিয়ে বেড়াতে গেলাম সন্দেরপরে প্রমথ ঘোষের বাড়ি। সারা পথটা আকাশে মেঘের কি শোভা ! কত পাহাড়পম্পর্বত, আকাশের কি চোখ-জড়ানো অদভূত নীল রং! নীচে বিষাসতেজ শ্যামল গাছপালা, নতুন আউশ ধানের কচি জাওলা বেরিয়েচে মাঠে মাঠে, মর্যাগাঙের ধারে, বাঁওড়ের ওপাবে! আষাঢ় মাসে এদিকে প্রকৃতি যে রােপ পরিগ্রহ করে, তার তুলনা কোথাও বঝি নেই। শিলংএর পাইন বন এর তুলনায় নিতান্ত একঘেয়ে। জ্যোৎস্না বেশ যখন, ফটেচে, তখন নদীর জলে এসে নােমলাম। জ্যোৎসনা চিকচিক করছে জলে, চাঁদ হাজার টাঁকরো হয়ে জলের মধ্যে খেলা করচে—এখনও নদীপারে বনে কোথায় বৌ-কথা-ক' ডাকচে, নদীর ধারের সৌদালি গাছগালোতে এখনও ফলের ঝাড় ঝরে পড়েনি। কত গাছ, কত লতা, কত ফল, কত পাখীর খেলা, আকাশে রঙের মেলা, কি ঘন সবজি চারিধার। নক্ষত্রে চোখে পড়ে না। আকাশে, হালকা মেঘের পরদার আড়ালে দাবাদশীর চাঁদখানি মাত্র দেখা যাচে । এতদিন পরে আবার বারাকপাের বড় ভাল লাগচে। মানষ এখানে তেমন নেই OO