পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বটে। কিন্তু প্রকৃতি এখানে অপৰিব লীলাময়ী। প্রকৃতিকে নিয়ে থাকতে পাের তো এমন জায়গা আর নেই। কলকাতার কাজ আর মানষ-এখানকার প্রকৃতি, এই দইয়ের সম্মিলন যদি সম্পভব হত ! রোজ কাজকৰ্ম্ম সেরে কলকাতা থেকে দ্রুতগামী মোটরে বেলা ৫টার সময় যদি বেলডাঙার পলের মখে ফিরে আসা সম্পভব হত এই আষাঢ় মাসের দীঘ দিনের শেষে, জীবনটা সত্যি উপভোগ করতে পারতুম। নিজের একখানা এরোপ্লেন থাকলে চমৎকার হত। সমস্তদিনের হৈ-চৈ ও কম্পমােক্লান্তির পরে শান্ত অপরাহে বর্ষণক্ষান্ত আকাশের তলে কাঁচিকাটার পলের কাছে মরগাঙেব এপারে সবজি ঘাসভরা মাঠে উড়ি ধানের ক্ষেতের ধারে বসে থাকতে পারতুম—তবে contrast-এর তীক্ষতায় প্রকৃতিকে ভাল করে বাববার সহযোগ হত—একে উপভোগ করতে পারা যেত। আরও গভীর ভাবে। আজ বৈকালের দিকে খাব ঝমােঝম বর্ষা। আমার একটা চমৎকার অভিজ্ঞতা হল। সন্ধার আগে মাঠে বেড়াতে গিয়ে যেন মনে হল এই আকাশ, রঙীন, মেঘরাজি, সবজি বাঁশবন—এদের সবটা জড়িয়ে যে বিরাট বিচিত্র বিশবপ্রকৃতি, তা হৃদয়হীন নয়। তা ভালবাসে, দয়া করে। দঃখে সহনাভূতি দেখায়। আজ কোন একটা বিষয়ে সেটা আমার অভিজ্ঞতা ঘটেচে। সে অভিজ্ঞতা সত্যিই অপৰিব। আষাঢ় মাসের এ দিনগলি আমার বড় পরিচিত। বাল্যকাল থেকে চিনে এসেচি এদের। মেঘান্ধকার আকাশ, আদ্র বাতাস, বাঁশবনে পিপললতা ও অনন্তমলের নাতন চারা বার হয়েচে, ওলের চারা বার হয়েচে, যখনই এমন হয়, তখনই আমার গ্রীমের ছটি ফরিয়ে যায়, ছেলেবেলা থেকে দেখে আসচি। কিন্তু একটা তফাৎ ঘটেচে, আগে এই নবোদগত পিপলচারার সঙ্গে একটা দঃখ ও বিরহের অনভূতি জড়ানো থাকত-এখন আর সেটা হয় না। এখন মনে হয়। কলকাতা গেলেই ভাল হয়, অনেকদিন তো দেশে কাটল। কতবার এই নব বর্ষা, এই আষাঢ় মাস আসবে যাবে। যেমন আমার জীবনে এরা কত বার এসেচে গিয়েচে। কতবার কাঁটাল পাকবে, বাঁশবনে অনন্তমহলের চারা বেরবে, ফলবিরল। আমবাগানে হাজারী জেলে ও হাজৰ কামারনী আম কুড়িয়ে বেড়াবে ভোরে। এসব সপরিচিত দশ্য আরও কতবার দেখব। আমাদের গ্রামটকু নিয়ে যে জগৎ, এ দশ্য তারই। অন্য কোথাওকার লোকের কাছে এসব হয়তো সম্পপণ্য অপরিচিত তাও জানি, তারা কখনও পিপললতাই দেখেনি হয়তো। তারপর আমি চলে যাব, হাজারী জেলেনী চলে যাবে, আমার সমসাময়িক সকল লোকই চলে যাবে, তখনও এমনি আষাঢ়ের নতুন মেঘা জমবে মাধবপরের ঘরের ওপরে, আদ্র বাঁশবনে এমনি ধারা পিপলচারা বেরবে, বৌ-কথা-ক’ পাখীর ডাক বিরল হয়ে আসবে বকুলগাছটাতে, গাঙের জলে ঢল নামবে-শািন্ধ আমার এই আবাল্য সপরিচিত জগৎ তখন আর আমার চৈতন্যের মধ্যে থাকবে না। সবদিনে মানষের মনে সমান আনন্দ থাকে না জানি, কিন্তু আজকার দিনের যত আনন্দ আমি কতকাল যে জীবনে পাইনি! প্রথম তো সকালে উঠেই দেখলাম আকাশ ভারী পরিস্কার-নিজের ঘরের দাওয়ায় খানিকটা বসে মাসলমান মাস্টারটির সঙ্গে গলপ করে বাঁওড়ের ধারের বটতলার পথে একটি বেড়াতে গেলাম। এমন নীল আকাশ অনেকদিন দেখিনি। জেলেপাড়া ছাড়িয়েই ঐ সর। পথটা দিয়ে যেতে যেতে বাঁশ ঝাড় থেকে একটা সর, কড়ি বেছে নিলাম হাতে নেবার জন্যে। বাঁশের কবিগুর জন্যে এ -