পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আগ্রহটা আমার চিরকাল সমান রইল সেই বাল্যকাল থেকে। যেতে যেতে আমাদের মাথার ওপরকার নীল আকাশটার দিকে চেয়ে মনে হল আষাঢ় মাসের দিনে আকাশ এত নীল, এত নিম্পেমঘ, এ সত্যিই একটা আশচষ্য ব্যাপার। রোদের কি রং। বাঁওড়ের ওপারের আকাশ নিবিড় বট-অশবখের আড়ালে মাঝে মাঝে চোখে পড়ে। এই বাঁওড়ের ধারের বটতলার পথটা দিয়ে আজ আঠারো-উনিশ বছর কি তারও বেশী এমনি সকালে হটিনি। বটগাছের একটা ডালে কাল খানিকক্ষণ বসেছিলাম, আজিও সে ডালটায় বসব বলে গেলাম, কিন্তু আজ একটি বেলা হয়ে গিয়েচে বলে রোদ এসে পড়েচে সেখানে। একটা বাঁশের মাচা করেচে। বটতলায় বাঁওড়ের ধারের দিকে। সেখানে বসে কি আনন্দ! আমায় এমনি উদভ্ৰান্তের মত বসে থাকতে দেখে কিন্তু কেউ কিছ ভাবে না-সবাই খব ভালবাসে দেখলাম। আমি অনেককে চিনি নে, ওরা আমায় চেনে। একজন কাল বলচে-দাদাবাব আমাদের দেখ বসে আছেন বটের শেকড়ে। দাদাবাবর অঙখার নেই গা। আজ একজন পথচলতি লোক, তার বাড়ি আরামডাঙায় পরে জানতে পারলাম, আমায় বসে থাকতে দেখে পাশে এসে বসল। বল্লে-বাব, একটা ব্যারামে বড় কন্টে পাচ্চি। প্যাটের মধ্যে ভাত খেয়ে উঠলি এমন শলোয় যে আপনাকে কি বলব! কি করি বলন দিকি বাবা ? সে এমন বিশ্ববাস ও নিভািরতার সঙ্গে প্রশন করলে যেন আমি স্বয়ং ডাক্তার গডিভ চক্ৰবত্তীর্ণ। কি করি আমার কোন ওষধই জানা নেই—তাকে পরামর্শ দিলাম রাণাঘাটে গিয়ে আচ্চার সাহেবকে দেখাতে। মিশনারী হাসপাতালে পয়সা-কড়ি লাগবে না। মনে এমন দঃখ হল, একটা হোমিওপ্যাথি জানলেও এইসব গরীব লোকের উপকার করা যায়। ভগবানের কাছে প্রার্থনা ছাড়া আমি ওর রোগ সারানোর জন্যে আর কি করতে পারি! ওখান থেকে উঠে মাঠের মধ্যে গেলাম। এক জায়গায় একটা কি চমৎকার লতাবিতান, ওপরে ডালপালার ছাওয়া, মোটা লতার গাড়ি কাঠের মত শক্ত হয়ে তার খাটি তৈরী করেচে। ওর মধ্যে বসে একটি পাখীর ডাক শািনলাম, তারপর মাটির মধ্যে এসে বাবলাগাছের মাথার ওপরকার আকাশের অপব্ব নীল রং দেখে সেখানটায় গামছা পেতে ঘাসের ওপর কতক্ষণ শায়ে রইলাম। সে যে কি আনন্দ, তা হয়তো আমি নিজেই কিছকাল পরে অবিশ্ববাস করব, কারণ ওসব অনভূতি মানষের চিরকাল একভাবে বজায় তো থাকে না, পরে শােধ সমিতিটা থাকে মাত্র। মাথার ওপরকার ঐ ময়ারকন্ঠ রংয়ের আকাশ, ঘাসের নীচে এই বিচরণশীল পোকামাকড়, ছোট ছোট ঘাসের ফল, ঐ উড়ন্ত চিল, বটের ডালে ল্যুকানো ঐ বৌ-কথা-ক’ পাখীর ডাক, কত বিচিত্র বনলতা, বনফল—ঐ সােয্য থেকে পাচ্চে এদের জীবন, রং ও আলো। কিন্তু এই সবের পিছনে, সয্যেরও পিছনে, এই ভূতধাত্ৰী ধরিত্রীর সব রপ-রস-গন্ধের পিছনে যে বিরাট অতিমানস শক্তির লীলা-তার কথা কেবলই এমনি দাপরে নীল আকাশের দিকে চেয়ে ভাবতে ইচ্ছা করে। ভেবে কিছ ঠিক করতে হবে তার কোন মানে নেই, এই ভাবনাতেই আনন্দ। তখন যেন মনে হয়। এই বিশেবর সঙ্গে আমি এক তারে গাঁথা—অদশ্য যে লতায় এই সব ফল নিয়ে মালা গাঁথা হয়েচে, আমি তাদের দল থেকে বাদ পড়িনি, তাদেরই একজন-বিশেবর সঙ্গে একটা যোগ স্থাপিত 23 भgन् भक । মনকে এভাবে তৈরী করে নেওয়ার সার্থকতা আছে, কারণ মনই সব, মন যে ভাবে পথিবীকে দেখায়, জীবনকে দেখায়-মানষে সেভাবেই দেখে। মন দঃখ দেয়, OR