পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সখি দেয়—মনকে তৈরী করে যে না নিতে পেরেচে, তার দঃখ, অসীম! ঐ লতাবিতানের মধ্যে আজ সকালে অনেকক্ষণ চপ করে বসেছিলাম।--ভারী নিভৃত, ছায়াঘন স্থানটি। প্রকৃতি অনেক যত্নে একে যেন নিজের হাতে গড়েচে । কাঠবিড়ালী খেলা করচে, কত কি পাখী ডাকচে, পত্রান্তরাল থেকে একটি একটি রোদ এসে পড়েচে, ঠাণঠা মাটিতে বড় চমৎকার ব্যাঙের ছাতা গজিয়েছে, কেয়োঝাঁকা, ষাঁড়া, ডমর, কুচকাটার লতার সমাবেশে এই ঝোপটা তৈরী-দপরের রোদে এই নিস্তবন্ধ ঝোপের ছায়ানিবিড় আশ্রয়ে বসে বইপড়া কি লেখা বড় ভাল লাগে। এবেলা থেকে বর্ষা নেমেচে । ইছামতীর ওপরকার আকাশ কালো মেঘে ঢাকা । আজ কলকাতায় রওনা হব ভেবেছিলাম-কিন্তু এরকম বাদলা দেখে পিছিয়ে গেলাম । আজ সারাদিন মনে একটা অপব্ব আনন্দ-কাল চলে যাব, গ্রীল্ডেমর ছটি তো ফরিয়ে গেল। যা দেখচি, সবই বড় ভাল লাগচে। খকু বার বার আসচে। আজ আমার সঙ্গে দেখা করতে, নানা ছতোয় নানা ফাঁকে। সারা দিন আজ ভয়ানক বিষ --বন্টির বিরাম নেই একদন্ড। দাপরের সময় যে বান্টি নামল, তা ধরল। বিকেল চারটের পরে। খানা-ডোবা ভরে গিয়েচে । আমন ধানের মাঠে রোয়ার জল হয়েচে । বিলবিলে তো জলে টাইটািকেবর। মেঘমোদর বিকেলে সবজি মাঠের ওপর দিয়ে জলের উপর পা ফেলে ছপ ছপা শব্দ করতে করতে গেলাম আইনন্দির বাড়ি-ওর সঙ্গে আমার জীবনের আনন্দময় দিনগালোর যোগ আছে--যখনই খাব আনন্দ পেয়েচি, তখনই ওর বাড়িতে গিয়ে বসেচি এই ক'বছরের মধ্যে। আজও গেলাম। ওর বাড়ির দাওয়ায় বসে মেঘাচ্ছন্ন আকাশের তলায় বাঁওড়ের ধারের ঘন সবজি আউশের ক্ষেত ও প্রাচীন বটের সারির দিকে চোখ রেখে ওর সঙ্গে কত গলপ করলাম। বয়স হয়েচে ৯৮ বছর, কিন্তু আইনন্দি কখনও শািন্ধ-হাতে বসে থাকে না। আমি যখনই গিয়েচি, তখনই দেখোঁচি ও কোন না কোনও একটা কাজ নিয়ে আছে-এখন সে একটা তলত বাঁশের পাশ চাঁচিছিল—বল্লে—মাছধরার ঘনি বনব। ওর উঠোনের দক্ষিণ ধারে একটা বাবলার গাছ, তার জিরে জিরে সর পাতােভর ডালগলোর দিকে চেয়ে মনে যে কি আনন্দ পেলাম--তারা যেন তুলনা নেই। ওখান থেকে বার হয়ে কাঁচিকাটা পলের ওপর এসে দাঁড়ালাম--বিষাক্ষান্ত বৈকালে দিগন্তে মেঘের যে শোভা হয়, ইছামতীর ওপারে, মাধবপরের চরের মাথায়, বাঁওড়ের শেষ সীমানার দিকে এদের দেখে তুষারমন্ডিত হিমালয়শঙ্গের কথা মনে পড়ে। ঘোষেদের দোকানে এসে বসেচি। একটা লোক মাথায় একটা পাটলি নিয়ে ঢকে বল্লে—মসরি নেবা ? v35T (CS-COC এর বদলে কিন্তু চাল দিতে হবে। ওরা তাতেই রাজী হল। তারপর সে বসে বসে গলপ করতে লাগল। চৈত্র মাসে আউশ ধানের বীজ ছড়িয়েছিল বলে তার ক্ষেতে ধান এখন খাব বড় বড় হয়েচে। বাড়ি তার খবরাপোতায়। খাবার ধােন এখন আর ঘরে নেই, সব মহাজনের ঘরে তুলে দিয়ে এখন সে নিঃস্ব, অথচ এগারো জন লোক তার পরিবারে, দ্য বেলা বাইশ জন খেতে। সামান্য কিছ মােসরী ছিল তাই ভরসা। তাই বদলে চাল নিতে এসেচে। ফিরবার পথে অসন্ত-দিগন্তের মেঘস্তাপে অপব্ব রাঙা রঙ ফািটল, দেখে দেখে