পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চোখ ফেরাতে ইচ্ছে করে না। গ্রীদ্মের ছটির পরে স্কুল খালেচে প্রায় মাসখানের হল। কলকাতায় এসে পরোনো হয়ে গেল। এরই মধ্যে একদিন, বারাসাত গিয়েছিলাম পশপতিবাবদের সঙ্গে, একদিন রাজপর গিয়েছিলাম। একদিন ডাঃ মহেন্দ্র সরকারের বাড়ি নিমন্ত্রণ ছিল, অনেক রাত পৰ্যন্ত নানা গভীর বিষয়ে আলোচনা শািনলাম তাঁর মাখে। আমার মন উদ্বিগ্ন হয়েচে আর একবার ইছামতীতে স্নান করবার জন্য। এরই মধ্যে যেন মনে হচ্চে কতকাল এসেচি। গত শক্রবার বারাকপাের গিয়েছিলাম। পরিপািণ বর্ষার শোভা অনেকদিন দেখা হয়নি—এবার এই বারাকপরে থাকব বলে গিয়েছিলাম। ইছামতীর জল ঘোলা হয়ে এসেচে। দাদিনই বাঁওড়ের তীরে বটতলার পথে সকালবেলা বেড়াতে গেলামদদিনই ঘোলা গাঙে খকুদের সঙ্গে স্নান করলাম। রৌদ্রে নতুন ওঠা কচি ঘাসের ওপর খানিকটা করে। শয়ে ঘাসের সাদা সাদা দটাে ফল লক্ষ্য করলাম। বটগাছের তলায় গাছের গাড়ি ঠেস দিয়ে আজই সকালে কতক্ষণ বসে রইলাম। বিশেষ করে শনিবার বিকেলে নদিদির কাছে নতুন বইখানার প্রথম দিকের গোটাকতক অধ্যায় শনিয়ে যখন ইন্দ মাছ ধরতে বসেছিল। তাই দেখতে গেলাম--তখন যেন একটা নতুন দশ্য দেখলাম। নকুলের নৌকোতে বেলেডাঙার মাঠে নতুন জায়গায় নেমে নীল আকাশের কোলে রঙীন, মেঘস্তােপ দেখে মনে হল এমন দশ্য ফেলে কেন কলকাতায় পড়ে থাকি ! রানাঘাট হয়ে কলকাতা ফিরলাম বিকলে। বেশ লেগেচে শ্রাবণ মাসে দেশে গিয়ে। অনেকদিন যাইনি এ সময়। কাল দাপরের পরে নদিদিদের দালানে বসে যখন পাপের কথা পড়ে শোনালােম নতুন বই থেকে, খাকু খাবই খাশি। ওদের উঠোনে দাঁড়িয়ে উচ্ছসিত প্ৰশংসা করল, বল্লে—সব বইতে কেবল তুমি আর আমি, ওই নিয়েই গলপ—এটা নতুন ধরণের হয়েচে । নকুলের নৌকোয় যখন যাচ্চি, নদীর ধারে এক জায়গায় প্রকান্ড একটা বাবলাগাছ থেকে কত কি বন্যলতা ঝলচে, ডাইনে রঙীন মেঘস্তােপ, আবার একটা জায়গায় আধভাঙ্গা একটা রামধন। বেলেডাঙার মাঠে নেমে সবজি ঘাসের একধারে বড় সন্দর একটা ঝোপ । এদিকটা কখনও আসিনি। কতক্ষণ মাঠের মধ্যে ঘাসের ওপর শয়ে রইলাম। মটরলতা তো যেখানে সেখানে— নতুন পাতার সম্পভার নিয়ে দলচে প্রতি ঝোপের মাথা থেকে-আমার কি জানি কেন ভারী আনন্দ হয় নতুন কচি মটরলতা দেখলে। ওর সঙ্গে যেন কিসের যোগ আছে আমার। আজ সকালে জগো আর গটিকে যখন কুঠীর মাঠের গাছটাতে পেয়ারা পাড়চে আমি একটা মটরলতার ঝোপের তলায় বসলাম—নতুন এক ধরণের চওড়া পাতা নরম ঘাসের ওপরে। সে এক অপব্ব অনভূতি। তার বর্ণনা দেওয়া যায় না।—মনের আনন্দই তার চরম প্রকাশ। আমি ডায়েরীতে অনেক বারই লিখি—“এ আনন্দের তুলনা নেই।" হয়ত একঘেয়ে হয়ে যায় কথাটা, কিন্তু আনন্দটা যে একঘেয়ে হয় না। যে আনন্দ মনকে ভরিয়ে দেয়, তা সব সময়ে, সব্বকালে এক। যখনই পাই, তখনই মনে হয় এ ববি নতুন, এমনটা আর কখনও বঝি হয়নি। সেই নিত্যনতেন। চির অক্ষয় আনন্দ, তার কি ভাবে বর্ণনা দেব একমাত্র ঐ কথা ছাড়া যে ‘এর আর তুলনা নেই’ ! জীবন যে বহ আনন্দমহত্তের সমন্টি, তাদের পথক পথক বৰ্ণনা নেই, তারা চির নবীন, শাশ্ববত, অক্ষয়, অব্যয়—কাজেই তাদের তুলনা নেই। সত্যিই তো তাদের তুলনা আর কিসের সঙ্গে O8