পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কত গাড়ি যে যাচ্চে সামনে দিয়ে। খাসিয়া মেয়েরা গলপ করতে করতে যাচ্ছে টি গিজায় প্রার্থনা হচ্চে, সন্মিলিত ইংরিজী গানের সরে কানে ভেসে আসচে। আমি কাউন্সিল হাউসের সোপানে বসে আছি। কি জানি, কেন এই সন্ধ্যায়। কেবল আমাদের গাঁয়ের কথা মনে পড়ে। এ যেন কোথায় এসেচি, কতদারে—সম্প্ৰভা না থাকলে একটও, ভাল লাগত না। আমরা যখন পথিবীকে ভালবাসি বলি-তখন ভেবে দেখিনে, অনেকেই ভালবাসি খাব সংকীর্ণ অত্যন্ত প্রিয় ও পরিচিত একটা জায়গা। সেখানকার গাছপালা, নদী, মাটি, লোকজন আমার কাছে বড় আদরের—তাই তাদের পেয়ে ও ভালবেসে মনে হয় এই পথিবীকে বড় ভালবাসি। আসলে সেই গ্রাম বা নগরটাই আমার পথিবী। এমন কি রোদ বা জ্যোৎসনা সেখানে যত মিনিট, অন্য জায়গায় ঠিকততটা নয়। আজ সকাল থেকে অত্যন্ত বান্টি আরম্প্ৰভ হয়েছিল, বেলা ১০টায় বান্টি ধরেচে। ॥১ সপ্রভাদের হোসেন্টলে গিয়ে বল্লম-আজই চলে যাব! সম্প্রভা যেতে বারণ করলে,- তব্যও বলে এলাম, না। আজই যাব। কিন্তু হোটেলে এসে আর যেতে ইচ্ছে হল না। ভাবলাম, সপ্ৰভা বারণ করলে, আজ থেকেই যাই। দােপরে সপ্রভার বাক্য, সপ্রভা, বীণা, রেবা দেখি একেবারে আমার ঘরের মধ্যে উপস্থিত-আমায় মোটরে উঠিয়ে দিতে। রেবা চকোলেট ও ফল এনেচে। ওদের সবাইকে দেখে এত আনন্দ পেলাম ৮ তারপর সকলে মিলে গেলাম। সপ্রভাদের কলেজ ও হোসেন্টল দেখতে। নতুন তৈরী বিরাট কাঠের বাড়ি, দেখবার মতন জিনিস বটে। ওখান থেকে বীণাদের বাড়ি গিয়ে চা, তালের ক্ষীর, তালের বড়া, লাচি। কতরকম খাবার খেলাম। সপ্রভার মাকে দেখেবড় কষ্ট হল । আহা, এই বয়সে এই শোক পেয়েছেন, তাতে মেয়েমানষ, মনকেবোঝানো ওদের পক্ষে খাবই শক্ত। সপ্রভার বাবাকে যতই দেখচি, ততই মগধ হচ্চিত্র তাঁর মনের সৈন্থয্যে ও প্রসারিতায়। তিনি যত সহজে শোক জয় করতে পারচেতন্যসপ্রভার মা তা পারচেন না। কাজেই তাঁর মনে কন্ট হয়। সন্ধ্যা হয়ে গেল। চাঁদ উঠেছে মেঘের ফাঁকে, দক্ষিণ বনের মাথায়। একটা. সীমাহীন নক্ষত্র মিটমিট করচে লম শিলং-এর ওপারের আকাশে। গিজজা থেকেদলে দলে খাসিয়া মেয়ে-পরিষ উপাসনান্তে বাড়ি ফিরচে। অনেকগলি খাসিয়া ময়ের বাঙালীদের ধরনে কাপড় পরা। তাদের দেখাচ্ছে ভালো। শিলং-এ একটা জিনিস নেই। এখানে কোন সাৎপ্রসঙ্গের চচ্চা দেখলাম না। কোথাও । না সাহিত্য, না গান, না। অন্য কোন শিলপী। লোকেরা সব চাকুরিবাজ, আয়তো সবাসস্থান্বেষী হাওয়াখোর। শেষোক্ত শ্রেণীর লোক কিম্ভূতকিমাকার ধরণের জীব। রোগের কথা, পথ্যের কথা, শরীরের উন্নতি কার কতটকু হয়েছে, এ ছাড়া অন্য, বিষয়ে তারা interested নয়। আর এরা প্রায়ই ত্রিকালোত্তীৰ্ণ প্রৌঢ় বা বদ্ধ। এদেরই বড় ইচ্ছা বাঁচবার। যেন তারা বেচে দেশে ফিরে গেলে সোনার দেউল ওঠাবে। পীরতলা জায়গাটা পাইন বনের মধ্যে একটা ভ্যালি। ছোট ভ্যালিটা যদিও, চারিদিকে ঘন সন্নিবিভ্ৰাট পাইন শ্রেণী, মাঠের মাঝখান দিয়ে একটা পাহাড়ী নদী বয়ে লেছে, বেশ সন্দর জায়গাটা। এদিন সকালে লাবানে যাবার পথে একটা উচি সাবান হিলের মাথায় ওধারকার পাইন বনগালো কতক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলাম। ৮ নিং গ্লোরি ফল থোকা থোকা ফটেছে লোকের বাড়ির বেড়ার গায়ে, মাকড়সায়ঞ্জ বচিত্র জাল বনোচে। OC s