পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সপ্রভাদের বাড়ি গিয়ে রেবাকে একটা প্রশন জিগ্যেস করে ঠকিয়েছিলাম। ষীশখন্ট কতদিন মারা গিয়েচেন, এ প্রশেনর জবাব সে দিতে পারলে না। ওকে দেশলায়ের বাক্সে ম্যাজিকটা দেখিয়ে বাক্সটা দিয়ে দিলাম। বেলা সাড়ে ন’টা। সপ্রভার সঙ্গে পীরতলা বেড়াতে গেলাম। একটা নদীর ধারে মাঠের মধ্যে পাইন বনে ঘেরা নিতজান সথানটিতে বসে গান শোনা গেল। তারপর ওখান থেকে চলে এসে সেই পাহাড়টার উপর দিয়ে আসছি, রেবার দাদা আসচে, বল্লে-কাউন্সিলে গিয়েছিল অর্থাৎ শিলং লেজিসলেটিভ অ্যাসেমব্লিতে। একটা টিকিট দিলে আমায়। আমি গিয়ে কাউন্সিল হাউসে ঢািকলাম। একজন পলিশ দেখিয়ে দিলে ওপরের সিড়িটা। ওপরের গ্যালারিতে লোকে লোকারণ্য। আইন সভার অধিবেশন হচ্ছে নীচের হলটাতে । বসন্তকুমার দাস নিচেকার উচ, চেয়ারে ডবল কলার পরে গম্ভীর মাখে বসে। তার ‘সামনে, ওপরে, দোতলায়, পেছনে উচ্চ চেয়ারে আসামের গভনর রিড বসে। একজন কংগ্রেস-সদস্য মন্ত্রীদের বেতন সম্পকে বস্তৃতা করছিলেন। রাজস্ব-সদস্য স্যার আবদাল্লা তার জবাব দিতে উঠলেন। একপক্ষ যখন বক্তৃতা করতে ওঠে, অপর দল দেখলাম হাসি, টিটকিরি সব রকম চালায়-এ বিষয়ে আইন সভা সাধারণ স্কুলের ডিবেটিং ক্লাসের চেয়েও অধম। কাউন্সিল হাউস থেকে এসে জিনিসপত্র গছিয়ে মোটর স্টেশনে এলাম। দটাের সময় মোটর ছাড়ল-অপরাহের ছায়ায় মোটর-রাস্তার দাধারে অরণ্য-দশ্য অতি সন্দর —পাহাড়ী নদীটাই কি অদভুত! ফিরে আসতে আসতে উচ্চ উচ্চ পাহাড়ের মাথার দিকে চেয়ে দেখলে মায়ের সেই কড়াখানার কথা মনে হয়। সন্ধ্যায় গৌহাটিতে নামবার -পথে মণি ডাক্তারের কথা ভেবে দেখলাম। গায়ের হাটতলায় সে এতক্ষণ সেই মদীর দোকানটাতে বসে গান করচে। হয়তো বেচারা এবারও বাড়ি যেতে পারে নি। সামনে সৰ্য্যাস্তকে লক্ষ্য করেই যেন মোটর ছাঁটেচে, সামনে কামাখ্যা দেবীর মন্দির পড়ল একটা উচি. পাহাড়ের মাথায়। খকু এতক্ষণ হয়তো গাঙ থেকে গা ধয়ে ফিরে এল। জগুগলে ভরা পোড়ো-ভিটেটাতে ছায়া পড়ে এসেছে। সন্টীমারে এসে ওপারের ডেক থেকে পাহাড়ে ঘেরা আধা অন্ধকার বক্ষপত্রের দিকে চেয়ে রইলাম। কতক্ষণ, কত চিন্তা -যে মনে আসে এই সন্ধ্যায়! ট্রেনে উঠে তাড়াতাড়ি শোবার ব্যবস্থা করিনি-বরপেটা সেন্টশন পৰ্যন্ত বসে আসামের সবিস্তীর্ণ জলাভূমি ও ছোট ছোট গ্রাম দেখতে দেখতে এলাম। কেবলই মনে হয় ওবেলা পীরতলা ভ্যালিতে বসে সেই যে গানটা সপ্রভা গেয়েছিল রবীন্দ্রনাথের যৌবন সরসীনীরে মিলন শতদল কোন চৰ্ণাঞ্চল বন্যায় টলমল টলমল আর একটা গান—“রোদিন ভরা এ বসন্ত-চিত্রাঙ্গদা গীতি-নাট্যের-গানটা। কামরাপ জেলার দিগন্তব্যাপী প্রান্তর ও জলার ওপর আকাশের ছায়া পড়েচে, সন্ধ্যা হয়ে এলেও সম্যাস্তের after glow এখনও আকাশে। ঝি ঝি” ডাকচে বনে বনে, সপ্রভা ও শিলং অনেক দরে গিয়ে পড়েচে। মণি ডাক্তার এতক্ষণ বাসা পৌছে তার সেই ছোট চালাঘরখানায় ভাত চড়িয়ে দিয়েচে । আহা, গরীব বেচারা ! কত গ্রাম, কত মাঠ-ঘাট-প্রান্তর, এখান থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে কত গ্রামের কত সখ-দঃখ, আশা-নিরাশা দ্রবন্দ্বের মধ্যে একখানি মাত্র ক্ষদ্র খড়ের ঘরের জন্যে আমার সহানভূতি এত বেশী কেন ? ব্ৰাণাঘাট স্টেশনে পরদিন দাপরে পৌছে যেন মনে হল বাড়ি এসেচি। এখােন