পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

থেকে আমার সপরিচিত সব কিছই। মনে হল নিবারণ গোয়ালা এতক্ষণ ওপাড়ার ঘাটে স্নান করতে নেমেচে-কি জানি কেন এই চিন্তাটা মনে হয়ে বড় আনন্দ পেলাম । জন্মান্টমীর ছটিতে দেশে যাওয়া আমার পক্ষে আনন্দজনক ব্যাপার। এই জন্মাষ্টমীর সঙ্গে আমার জীবনের অনেক শািভদিন, বিশেষ করে একটি অতীব শােভদিনের সমিতি জড়ানো। তাই জন্মাষ্টমী এলেই মন ব্যস্ত হয়ে ওঠে দেশে যাওয়ার জন্যে। এই ক'বছর তার সংবিধা ও সংযোগও ঘটেচে-১৯৩৪ সাল থেকে। এবারও কাল গিয়েচে জন্মাষ্টমী, আজি নন্দোৎসব। বনগাঁয়ে গিয়েছিলাম। শনিবারে। সেদিন কি ভয়ানক বর্ষা! খানাডোবা জলে ভৰ্ত্তি হয়ে থৈ থৈ করচে। ওদিন দােপরে খব জল হয়ে গিয়েচে ওখানে। গিয়েই শনি ফণিবাব ওভারসিয়ারের মেয়েটি সেই বিকেলে নিমোনিয়ায় মারা গিয়েচে। সন্ধ্যার সময় আমরা অনেকে তাঁদের সান্ত্বনা দেওয়ার জন্যে সেখানে গিয়ে অনেক রাত পর্যন্ত বসে রইলাম। পরদিন খয়রামারির মাঠে আমার সেই প্রিয় সস্থানটাতে দাপরে গিয়ে দেখি মটরলতার ঝাড় তখনও টাটাকা রয়েচে, ছোট এড়াটির ঝোপগলো। বর্ষার জল পেয়ে বিষম বাড়ি বেড়েচে । বিকেলে ছাঁটায় গেলাম। যাবার পথটি বড় সন্দর লাগল। সেই ছায়ােভরা বিকেলে। খােক এসে অনেকক্ষণ গলপ করলে। সন্তু এসেও বসল। কালোর মেয়েকে এনে খােক আমার কোলে দিলে। সন্তুকে জিগ্যেস করলাম সিলেন্ডাইন মানে কি ? খকু বল্লে -আহা, ওকথা আর জিগ্যেস করতে হবে না। মিনতা বাংলাদেশের রাজধানী বলতে পারলে, না-বলে খকু তো হেসেই খন। সন্ধ্যা পসািন্ত ওদের ওখানে ছিলাম, তারপর চলে এলাম। দেবেনের ডাক্তারখানার সামনে বিশবনাথ আর সরোজ বসে গলপ করচে অন্ধকারে। আমি সেখানে একটা বসে চলে এলমে ডাক্তারবাবার বাড়ি গান শািনতে h আমার সঙ্গে প্রথম দেখা হয় কি ভাবে, খাকু সেই গল্পটা করলে সন্তুকে। ১৯১৮ সালের জন্মাম্ৰাটমী ছটিতেও এই বাসাতে এসেছিলাম সকালে। তখন খিনরা থাকত, খিনর মা তখনো বেচে । সরকারী ডাক্তারখানার কোয়ার্টারে তখন ওরা থাকত। আজ সকালে ছায়া ভরা পথ বেয়ে একা হোটে যাই বারাকপরে। বর্ষায় বনস্থলীর শোভা আরও বেড়েচে। কোথাও তেলাকুচো পেকে টিক টকা করচে, নাটকটিার ফল ফটেচে, বনকলামীর ফলে ঝোপের মাথায় কাচিৎ দশ্যমান, 'ক্কচিৎ এইজনে, বললাম যে এই ফলটা এবার যেন দেশে একটকু কম, ঢোলকলমীর ফল খাব ফটোচে, কিন্তু বনকলমী তেমন দেখা যায় না। জগোর সঙ্গে বেলেডাঙার পথে বেড়াতে যাই বাড়ি পৌছে। বড় আমবাগানের পথে সাইমার সঙ্গে দেখা বাঁশতলায়, তিনি হরিপদীর বিরদ্ধে কি একটা নালিশ করলেন আমার কাছে। সেই গাছতলায় গাছের গড়ি ঠেস দিয়ে বসি, সেবার যেখানটা আমার খব ভাল লেগেছিল। আইনন্দির নাতি স্কুলে যাচ্ছে পথ দিয়ে, আমায় দেখে হাসচে। তাকে ডেকে বাড়ির কে কেমন আছে জিগ্যোস করলাম। আজ সোমবার, ভাবছিলাম যে ও সোমবারের আগের সোমবারে ঠিক এ সময়টা আমি আর সপ্রভা পীরতলায় বসে আছি শিলং-এ পাইনবনে ঘেরা সেই ছোট উপত্যকাটিতে, ছোট নদীটার ধারে। তারপর জগো আর আমি মাঠে রৌদ্রে একটি নরম ঘাসের উপর শায়ে থেকে আমাদের ঘাটে নাইতে নামি। ভারী তৃপ্তি হয় ঘোলা জল ইছামতীতে এই সময়টা সনান করে। একটা ঝোপ থেকে একটা বনসিমের ফলের ছড়া তুলে নিলাম। দেখে বিস্মিত হয়ে গেলাম দস্তুরমত যে এই ভাদ্র মাসেও কুঠীর মাঠে দটাে গাছে ঝাড়, OS