পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ব্ৰক্সােড় সৌদালি ফল ফটে রয়েচে । খাৰুদের বাড়িটাতে কেউ নেই। দাওয়ায় গর, উঠেচে, ভাঙ্গাচোরা পৈঠে। একবারটা সেইদিকে গেলাম। দাপরে আমার ঘরটাতে শয়েচি-ইন্দ এসে খানিকটা গান করলে। আমাদের ভিটের দিকে গিয়ে দেখি ঘন জঙ্গল হয়েচে, মায়ের সেই ভাঙ্গা কড়াখানা জঙ্গলে ঢেকে ফেলেচে। একটি মেয়ের কথা মনে পড়ল, যাকে অনেকদিন আগে এই দিনটিতে এখানে দেখা যেত। নৌকো করে বনগাঁয়ে এলম বিকেলে। ইছামতীর জল খাব বেড়েচে—জলের "ধারে উলটি বাচড়া, নরম সবাজ ঘাসে ভরা, মাঝে মাঝে বনকলমীতে ছাওয়া ঝোপ । 'বিকেলের ছায়ায় নদীবক্ষের কি শান্ত শোভা! কদিন থেকে পজোর আগে বড় কাজকৰ্ম্মম চলেছে। সবকটিশচাচ্চ কলেজে বক্তৃতা "ছিল, সেখান থেকে সেদিন বার হয়ে ডি এম লাইব্রেরীতে এলাম। এবার প্রভাবতী “দেবী সরস্বতীকে দেখলাম না, অন্য অন্য বার দেখি। প্রমোদবাবা এসেছিলেন শনিবারে। ঠিক করা গেল এবার পজোয় কোথায় যাওয়া যাবে, অনেকটা ঠিক হল“হয় চাটগাঁয়ে, নয়তো রাখামাইনসে। আজ সকালে সাঁতরাগাছি হয়ে গেলাম শ্ৰীীরামপারে। বর্ষার সবজি বনরাজির শোভা দেখতে দেখতে আমি ও সরেন মৈত্র "গিয়ে উঠলাম শ্ৰীীরামপাের টাউনহলে। কে একজন বল্লে-আপনার বন্দিবাটি আসবার ‘কথা ছিল না ? বলতে বলতে হরিদাস গাঙ্গালী এলেন, তাঁরই বাড়িতে ছিল খাওয়ার কথা, ভুলেই গিয়েছিলাম। বাইরে আকাশ আজ বড় নীল,—তালগাছগালো মাথা তুলে দাঁড়িয়ে। অনেকদরের আকাশে একটা খড়ের বাড়ি পড়ে আছে, দাওয়ায় গরাবাছরে উঠছে। বাড়িটাতে কেউ নেই। দিদিদের বাড়িও গেলাম, আগেকার দিনের ‘মত কি আর আছে ? আগে ট্রেনে যেতে যেতে দানিবাব আমাকে সাহস দিতেন, তবে যেন শ্ৰীীরামপারের মাটিতে পা দিতে পারতুম। আজ সারাদিন ভীষণ দায্যোগ, যেমন ঝড় তেমনি বান্টি। সকালে কলেজ স্কোয়ারে বেড়াতে গিয়ে রমাপ্রসাদের সঙ্গে গলপ করলাম। তারপর সবুকুল গেল ছাটি হয়ে। বান্টির মধ্যে গেলাম ক্ষেত্রবাবার সঙ্গে ইম্পিরিয়াল লাইব্রেরী, সেখান থেকে ‘প্ৰবোধ সরকারের দোকান হয়ে গািরদাস চাটয্যে এন্ড সনস ও কাত্যায়নী বােক সন্টল। ওখানে আমার একখানা উপন্যাস ‘আরণ্যক’-এর আজ কন্ট্রাক্ট হওয়ার কথা। হয়েও ক্লািগল। ঝড়-ঝঞ্জার মধ্যে সন্ধীর সরকারের বইয়ের দোকানো এলাম ট্রামে, সেখান থেকে পরিমাপ্রসাদের বাসায় এসে খানিকটা গলপ করি। কি দিযোগ আজি! রাত্রে এখন যেন ঝড় বেড়েচে। আজ সারাদিন এই ঝড়বন্টির মধ্যে টাে টাে করে ঘরে বেড়িয়েচি। রাত্ৰি ১০টা। বান্টি সমানে চলচে, গোঁ গোঁ করে ঝড় বইচে। আমি ভাবচি বিহদিন আগে ১৯২৭ সালে ঠিক এই রাত্রিটিতে এই সময়ে আমি আর অস্বিকা "ভাগলপর থেকে পায়ে হেটে দেওঘর যেতে জামদহ ডাকবাংলোতে কাটিয়েছিলাম। এখনও মনে পড়চে নিতজান শালবনের মধ্যে চানন নদীর ধারে সেই বাংলোটি-আমি এদিকে কোণের ঘরে টেবিলের ওপর বসে ডায়েরি লিখচি, আর বাংলোর ওদিকে বালছমীপর স্টেটের ম্যানেজার নদীয়াচাঁদ সহায় প্রজাপত্তর নিয়ে কাছারী করচেন। এই দিয়ে কাল লছমীপর হয়ে কানিবেলের জঙ্গলের পথে দেওঘর যেতে হবে। তাতে 8O