পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্ৰথমে সে ঘোর আপত্তি জানায়, শেষে রাজী হল। সেই ১৯২৭ সালের এই দিনটি—আর ১৯৩৭ সালের এই দিন! কত পরিবত্তন হয়ে গিয়েচে জীবনে সব দিক থেকে. যদি ধরা যায়। তারও আগে ১৯১৭ সালের এই সময়ের কথা...সেই মামার বাড়িতে থিয়েটার করলাম। আমি ও মেজমামা মিলে৮edকরণ গান গাইলে ঃ আমি না তোর জন্য কলিজা ভালবাসা গেছে বোঝা তবে তো পরিবত্তানের অনন্ত অকলে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে হবে। ১৯২৭ সালে আমি মন্ত পথিক, পাহাড়ে জঙ্গলে ঘরে বেড়াই অপ্রত্যাশিত অজানার সন্ধানে—চোখে মায়ার ঘোর, সৌন্দয্যের ঘোর, এখনও আমার সে ঘোর কাটেনি, বরং অনেক—অনেক ঘনীভূত হয়েছে। জীবনে তখন ছিলাম। একা, এখন আরও সব অনেক এসেছে। যেমন সপ্রভা, খাকু, মিন, রেণ-এরা সব। এই সামনের রবিবারে তো খাকুর সঙ্গে দেখা হবে হুঘরেতে-তারপর ৯ই অক্টোবর সপ্রভা আসবে শিলং থেকে। ওর মায়ের সঙ্গে কাশী যাচ্চে পাঁজোয় বেড়াতে-ওর সঙ্গেও দেখা হবে। তারপর আমি চাটগাঁ যাব ইচ্ছে আছে, সেখানে রেণীর সঙ্গে দেখা হবেই। এরা এখন জীবনে এসে আমার খাব আনন্দ দিয়েচে —তবও দশ-এগারো বছর আগেকার সেই বনে, পথে, প্রান্তরে, অরণ্যসীমায় যাপিত দিনরাত্রিগলির সন্মতি ফিরে এলে মনটা কেমন হয়ে যায়. অভিজ্ঞতা অজ্ঞজন যদি জীবনের উদ্দেশ্য হয়, তবে এই দীঘকালের ব্যবধান, উভয় দিনের মধ্যে আমায় কত বিচিত্র অমল্য অভিজ্ঞতা বহন করে এনে দিয়েচে । আমি সেদিক থেকে ধনী, তবও আজ কেউ যদি বলে-সে জীবন চাও না। এ জীবন ? আমি সেই জীবনে আবার এখনি ফিরে যেতে চাই, যদি কেউ সেই দিনগালো ফিরিয়ে দিতে পারে। ১৯৪৭ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর পয্যন্ত বেচে থাকব কি ? কি লিখব। সে দিনটিতে ? তখন কোথায় থাকবে আজকের দিনের সঙ্গীরা ? কোথায় থাকবে খকু, সপ্রভা ?...রেণ-মা ? কে বলবো ? ভীষণ ঝড়ের রাত্রি। ঝড়ের বিরাট সোঁ সোঁ শব্দ। রাত্রে ভয়ে ঘাম হল না। মেসসিন্ধ। রাত দেড়টা। মনে হচ্চে যেন মেসের বাড়িটা দলচে। এমন ভীষণ ঝড় ১৩১৬ সালের পরে আর দেখোঁচ বলে মনে পডুচে না তো। সারা আকাশ রাঙা। ধন্সর মেঘে উগ্ৰমাত্তি, রদ্র প্রকৃতির রক্তচক্ষ যেন মেঘের আড়াল থেকে উকি মারছে। কাল স্কুল ছটি হয়ে গিয়েচে। অন্য অন্য বার এ সময়ে বাইরে যাবার জন্যে কত আগ্রহ থাকে, কত উদ্যোগ আয়োজন করি। এবার অন্য অন্য দিক থেকে আমার ব্যাপার মন্দ নয়, কিন্তু বাঁ পা-খানা হঠাৎ সেদিন বনগাঁয়ে মাচকে গিয়ে এক রকম শয্যাগত হয়ে আছি—কোথাও দরে বেড়াতে যাওয়া অসম্পভব। সেজন্য মন ভাল নয়। ভাল লাগে কি এ সময় কোথাও বাইরে যেতে না পারলে ? সবাই দরে কোথাও যাবার পরামর্শ আয়োজন করচে, সজনী ও ব্ৰজেনদা আজ সন্ধ্যায় চলে গেল ভাগলপারে। সন্ধীরবাব কাল রাত্রের এক্সপ্রেসে যাচ্ছেন। হরিদাবার ও মসৌরী, অপব্ববােব আজ সকালে চলে গেছেন শিমলতলা, নীরদ চৌধরিী গেছে রাঁচী, অশোক গপ্ত যাচ্চে বেনারস, শচীন সরকার কাল সকালে চট্টগ্রাম যাবে, নীরদ দাশগািপ্ত তো সস্ত্রীক আগেই 8S