পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঘরের মধ্যে বসে সেরকম খািব কম হয়। মনের আনন্দই তো সন্টির গোড়ার কথাদঃখও বটে-কারণ আসলে অনভূতির গভীরতাটাই আসল, দঃখেরই হোক বা আনন্দেরই হোক। আজ সকালেও বেলেডাঙার বটতলার পথটাতে বেড়াতে গিয়েছিলাম, মাঠের মধ্যে সেই যে একটা ঝোপ আবিস্কার করেছিলাম সেবার—তার পথটা বাজে গিয়েচে শেয়াকুলকাঁটায়, ঢাকতে পারা গেল না। নদীতে নেমে সাঁতার দিয়ে গিয়ে উঠলাম রায়পাড়ার ঘাটে। সন্ধ্যাবেলা নিজের ঘরে বসে লিখচি, শিবদের বাড়ি কলের গান, হচ্চে দেখে শনিতে গেলাম। এইমাত্র ফিরচি। অন্ধকার রাত, অন্ধকার আকাশে কি অসংখ্য নক্ষত্রের ভিড়। কত জগৎ, কত পথিবী-Jeans, Eddington-দের ও কথাই মানিনে যে এই পথিবী ছাড়া আর কোথাও মানষের বাসের উপযক্ত গ্রহ বা নক্ষত্র নেই। এই রকম পরিচিত গ্রামের পথ, ওই যে বকুলতলাটা, শিউলিতলাটা-যা কত দিনের সমিতিতে মধর—আর কোথাও বিশেব এমন নেই—সুন্টা বঝি দেউলে হয়ে পড়েছিলেন কায়ক্লেশে পথিবীকে তৈরী করেই। সে অনন্ত, বিরাট দেবতাকে প্ৰণাম করি। কে-ই বা তাঁকে চেনে, বোঝে বা জানে! যাঁরা জেনেছিলেন, তাঁরা কাউকে বলে বোঝাতে পারেননি বা সে চেস্টাও বোধ হয়। করেননি-অসম্পভব বলেই করেননি-সাধারণ লোকের জন্যে কতকগলো মিথ্যে মনগড়া ফকির সন্টি করে গিয়েচেন। আজও বিকেল তিনটার সময় কুঠীর মাঠের জলার ধারে সেই ঝোপটাতে এসে বসে ‘আরণ্যক' এর একটা অধ্যায় লিখচি। লেখবার জন্যেই এই জায়গাটাতে এসোচি । ভারী সন্দর বনকুসমের গন্ধটা-চাঁপা ফলের গন্ধটাই বেশী। আমার মাথার উপরে থোকা থোকা ফলে ভরা ডালটা দলচে, এখন রোদ রাঙা হয়ে এসেচে। যখন এটা লিখচি, জলার পাখীর দল কি অবাধ কজন শার করেচে, গন্ধটা আরও ঘন হয়েচে। ওপারে গাছগালোর বিচিত্র ও বিভিন্ন ধরণের শীর্ষদেশে রাঙা রোদ পড়ে কি সন্দের দেখতে হয়েচে ! পাখীর দল উড়ে যাচ্চে। এইখানে বসে সপ্রভার বিজয়ার চিঠিখানা পড়ছিলাম আজ। এইখানেই লেখা বন্ধ করি। সন্ধ্যা হয়ে এল। জগোদের নিয়ে బ్లా? ওখানে গোপালনগরে কালীপ জোর নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে যেতে হবে সন্ধ্যার পরোহ । উঠে বাড়ি এসে জগো ও জিবকে নিয়ে প্রথমে গেলাম বাড়ীর বাড়ি। বাড়ী উঠতে পারে না, তাকে দেখেশানে গোপালনগর গেলাম। দারিঘাটা পালটার ওপর থেকে ছায়াপথটা কি চমৎকার দেখাচ্ছিল। কত নক্ষত্র, অসংখ্য, অসীম। কতক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম পালের ওপরে। হাজারিদের বাড়িতে কালীপ জোতে প্রতি বৎসরই আনন্দ উৎসব হয়। এবার জিতেন, সন্ধীরদা ছিল—চট্টগ্রাম ভ্রমণের গলপ করলাম। ওদের কাছে। বাড়ি ফিরতে হয়ে গেল। রাত এগারোটা। নক্ষত্রের জ্যোতি আরও ফটেচে। কালপরিষ। নদিদিদের উঠোনের ওপারেই উঠে এসেচে। আজ যে নক্ষত্রসংস্থান এই কালীপ জোর রাতে, পঞ্চাশ বছর আগেও এমনি উঠত, আমার ঠাকুরদাদা যখন শিশ তখনও এমনি উঠেচে, দশো বছর আগে যখন শাঁখারীপকুরের ধারে বন্ধিষ্ণ শাঁখারীর বাস ছিল তখনও এমনি উঠত। আবার পঞ্চাশ বছর কি দশো বছর পরে ঠিক এমনি দিনে এমনি কালীপ জোর রাতে ওরায়ন নদিদিদের বাড়ির উঠোনের ওপরে এমনি উঠবে।-কিন্তু তখন পাশের বাড়ির পথটা দিয়ে বিলবিলের পাশ দিয়ে খকুও অমন আসবে না-কে কোথায় চলে যাবে। নতুন দল তখন আসবে পথিবীতে-তাদের SP