পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হাসি কান্না প্ৰেম ভালবাসায় মােখর হয়ে থাকবে গ্রামের বাতাস। কাল এখান থেকে চলে যাব। পজোর ছটি ফরিয়ে গেল। এবার খকু ছিল না, তা হলেও কেটেছিল বেশ। বৈকেলে প্রায়ই কুঠীর মাঠে বনে ঝোপের ধারে বসে বিকেলটা কাটাতুমি-ভারী আনন্দ পেতাম। এখন রাত্রি দশটা, আমার ঘরে নির্ণজনে বসে লিখচি। পরটি দিদি মাঝের গাঁ থেকে এসেচে, আমার জন্যে একটা ভাঙীর ফলের ডাল এনেচে ফল সন্ধ। শ্যামাচরণ দাদাদের বাড়ি বসে একটা গলপ করে এলাম। কাল গ্রাম ছেড়ে যাব, সকলের জন্যেই কষ্ট হচ্চে। গঙ্গাচরণ মন রায়দের বাড়ি বসে ভাঙা হারমোনিয়ম বাজিয়ে বেসরো গলায় সেকেলে যাত্রা দলের গান গাইচে ; মনে হচ্চে, আহা, ওই একটা গিয়ে বসে শনে আসি। এদের সকলের জন্যেই কন্ট হয়। গ্রামের এই সব লোক দরিদ্র, অশিক্ষিত-ওদের জীবনে কোন আমোদ-প্রমোদ নেই - জগতের কিছ দেখেও নি, শোনেও নি। সকলের জন্যেই মন কেমন করে। মন রায়দের বাড়ির মেয়েরা বাঘ-অাঁচড়ায় গিয়েছিল কালীপ জো দেখতে— এখন সব গরর গাড়ি করে বাড়ি (Գ6 সীতে জেলের নৌকোয় বিকেলে বনগাঁ এলাম। বেলা তিনটার সনীয় বেরিয়েচি, গাজন বাঁশতলার ঘাটে মাছ ধরচে, ফণিকাকা মাছ ধরচে চটকাতলার নীচে। চালাকীর ঘাটে একটা লোক ছিপে প্রকান্ড কাছিম বাধিয়েছিল, আমরা নৌকা নিয়ে কাছে গেলাম, সাতো কেটে নিয়ে কাছিমটা গেল পালিয়ে। সীতানাথ মাঝি বিশ বছর আগে নেপাল মাঝির নৌকোয় ভোলা ও বরিশালে গিয়েছিল-সে গলপ করতে লাগল, ওরা নৌকোতে কাজ করত, বাদাড়ে থেকে খাবার জন্যে চাল ডাল কিনত। নলচিটিতে সপরি কিনে বিক্ৰী করতে করতে বনগাঁ পৰ্যন্ত আসত— ওখানে সব বিক্ৰী হয়ে যেত। নৌকোতে মধ্য ছিল-চালতেপোতার বাঁকে ছায়াভিরা সেই সন্দর বনঝোপের কাছে এসে সে নৌকার দাঁড় বাওয়া রেখে তামাক সাজতে বসল। রোদ ক্ৰমে রাঙা হয়ে এল, দধাবে বড় ঝোপ, সাঁইবাবলা বনের অপবােব শোভা! পিজোর ছটিটা বারাকপরে বেশ কেটেচে, বরোজপোতার ডোবার ওপারের কথা এখনও ভুলতে পারাচি নে। এই বাঁশবাগানটায় কি যে একটা মায়া আছে! তারপর সাজিতলার বনটা এবার নতুন আবিস্কার। সকলের চেয়ে আমার ওইটাই লেগেচে ভাল। কুঠীর মাঠের জলার ধাবে ওই ডাঙােটা। সবই ভাল, কেবল সন্ধ্যার পরে লোক অভাবে বড় নিশজন লাগে। গায় তা এমন প্রাকৃতিক সৌন্দয্যের সমাবেশ কোথায় আছে কলকাতার এত কাছে ? সপ্রােভাকে পাঠাব বলে কিছ বনের ফলে সংগ্রহ করেছিলাম। কাল পাঠাব। কাল বৈকালে খকুদের ওখানে দেখাশনো করে এলাম। বেশ কাটল বিকেলটা। যতীনদার বাড়ির ধারের ডোবাটাতে সকালে উঠে যেতে গিয়ে দেখি সাদা সাদা কাচারির ফল ফটে আলো করে রেখেচে । কি যে তার শোভা ! আবার বেড়িয়ে ফিরবার সময় ঘণ্টা-দাই পরে দেখি সয্যের কিরণে ফলগালোর রং এর মধ্যেই নীলাভ হয়ে উঠচে। সায্যের আলোয় কি যে রসায়ন বঝলাম না-ফলগলির কাছে ঘাসপাতায় কি ল্যাবোরেটরি নিহিত, তাই বা কে বলবে ? আমি দেখে ভারী মগধ হয়েচি। আজ সকালে রাম অধিকারী ডাক্তারের সঙ্গে দেখা মীডজাপাের সন্ত্রীটে। সে ধরে নিয়ে গেল তার বাড়ি। সেখান থেকে গলপগজব করে এসে বাড়িতে অভিভাষণের 3N