পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জায়গায় একটা তুলোর দোকান। দোকানে বসে তুলো ভৰ্ত্তি করে উঠতে যাচ্ছি এমন সময়ে নজর করে দেখলাম। এটা সেই পরোনো দিনের সন্দর ঠাকুরের সেই হোটেলের 'ঘরটা। আজকাল সেখানে তুলোর দোকান হয়েচে । মনে পড়ল। এও জানায়ারী মাস এবং ১৯১৯ সালের পরে আজ এই প্রথম আবার সেই ঘরটাতে ঢকে বসলাম। তারপর ফিরে আসচি হঠাৎ মনে পড়ল বালিশের খোলটা সপ্রভা তৈরী করে পাঠিয়ে দিয়েছিল কিছদিন আগে। কি অভাবনীয় যোগাযোগ। কাল হাওড়া সেন্টশনে ট্রেন অত্যন্ত দেরিতে এল। রাত্রে ঘােম ভাল হয় নি। একে তো বেজায় শীত, তার ওপর কৃষ্ণপক্ষের ভাঙা চাঁদ উঠেছে দীর মাঠের মাথায়। ট্রেনের জানালা খালে সেই শীতের মধ্যেও হাঁ করে চেয়ে আছি। সৌভাগ্যের বিষয় একটা কামরা আমরা একেবারে খালি পেয়েছিলাম, অরবিন্দ গরগুপ্ত বলে এক ভদ্রলোক (অত্যন্ত সপরিষ লোক, আমি অমান সপরিষ খািব কমই দেখোঁচি) সপরিবারে পশ্চিমের দিকে যাচ্চেন, তাঁরাই কেবল ছিলেন। আমার কামরাতে, আর কেউ নয়। একখানা পরোনো ডায়েরী ছিল আমার কাছে বাবার, তাতে পড়ে দেখা যায়-বাবা ১২৮৭ সালের দিকে পশ্চিম ভ্ৰমণে বেরিয়ে এই পাটনা, মঙ্গের, আগ্রাতে এসেছিলেন। ভোর হল শিমলতলা সেন্টশনে। আর বছর যখন পাটনা আসি, আমি, সজনী, নীরদ, ব্ৰজেনদা—ভোর হয়েছিল কিউল সেন্টশনে। অরবিন্দবাবটি অতি ভদ্রলোক, আমাকে খাবার খেতে দিয়ে বল্লেন—একটা মিষ্টিমখ করুন। অথচ তিনি আমায় জানেন। পয্যন্ত না। রৌদ্র উঠল। কিউলে। বিহারের দািরবিসপী প্রান্তর, অড়রের ক্ষেত, সরিষার ক্ষেত, খোলার বাড়িওয়ালা গ্রাম, চালে চালে বসতি, ইদারা, ফণি-মনসার ঝোপ, মহিষের দল আরম্ভ হয়ে গিয়েচে । শিমলাতলায় পাহাড়ের শোভা যদিও তেমন কিছ দেখলাম না তবও শেষরাত্রের জ্যোৎস্নায় সাঁওতাল পরগণার উচ্চাবাচ প্রান্তর ও ছোটখাটো পাহাড়রাজি দেখতে দেখতে এত বিভোর হয়ে গেলাম যে ঘািম কিছতেই এল না। পাটন সেন্টশনে মণি ও কলেজের ছাত্রেরা নামিয়ে নিতে এসেচে। তার আগে ব্যক্তিয়ারপর স্টেশনে কালা ও পশপতি প্লাটফৰ্ম্মে দাঁড়িয়ে ছিল দেখা করবার জন্যে। অনেকদিন পরে ওদের সঙ্গে দেখা হল। মণিদের বাড়ি আসবার কালে মোটরটা বড় ঘরে এল- কারণ এক জায়গায় রাস্তায় পিচ দেওয়া হয়েচে নতুন। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। আজকাল পাটনাতেই রয়েচে, আমার সঙ্গে দেখা করতে এসে বল্লে, এ জায়গা ভাল লাগচে না, বাংলাদেশে ফিরতে চায়। তারাশঙ্কর একজন সত্যিকার ক্ষমতাবান লেখক, বাংলার মাটি থেকে ও প্রাণরস সর্ণগুয়া করচে, ওর কি ভাল লাগে। এসব জায়গা ? মণিদের ছাদের ওপরে দাপরের নীল আকাশের তলায় বসে এই অংশ লিখচি। সপ্রভাকে একটা চিঠি দেব। দরে তালের সারির মাথায় অনেকটা দরে দেখা যাচ্চে, এই নিস্তব্ধ দাপরে সদর বাংলার একটি সজনে ফল বিছানো পল্লীপথের কথা মনে “পড়াচে, একটি সরলা পল্লী বালিকা এসময়ে কি করাচে সে কথাও ভাবচি। ছাদের ওপর যোগীনবাবরে দই নাতনী খেলতে এসেচে। আর বলচে চ, কপাটি আইয়া এ কি রকম খেলার ছড়া ? বাংলাদেশে তো এ ছাড়া কোন ছেলেমেয়ের মখে =ननि ! ○ り