পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

একটা মানপত্র ও অভিনন্দন। পরের সপ্তাহেই পড়ে গেল। কৃষ্ণনগর সাহিত্য-সম্মেলন। আমি ঈদের ছটিতে বাড়ি গেলাম। চমৎকার জ্যোৎসনা উঠেচে, কোকিল ডাকচে, শীত যদিও বেশ, কিন্তু বসন্তের আমেজ দিয়েচে। বাড়ি গেলাম, পাড়ায় কেউই নেই এক নাদি ছাড়া। নিজের খড়ের ঘরটিতে দাপরে শয়ে খাব ঘাম দিই। আগের রাত্রে যতীনকাকার মেয়ে উষার গিয়েচে বিয়ে। তখনও বরযাত্রীরা রয়েচে। যতীনকাকার মেয়ের বিয়ে দেখচি চিরকাল ঐ একই চন্ডীমন্ডপে । বৈকালে কুঠীর মাঠে গাছে গাছে পাকা কুল খেয়ে বেড়াই। ভূষণ জেলের ছেলের জমিতে খেজর গাছটােয় ঠেস দিয়ে বসে আরণ্যক” উপন্যাসের এক অধ্যায় লিখি। সন্ধ্যাবেলায় ইন্দর বাড়িতে সেদিনকার মিটিং ও আমার মানপত্র দেওয়া সম্পবন্ধে খািব কথাবাত্তা হল। ইন্দ বল্লে-আজ যদি আপনার বাবা-মা বেচে থাকতেন! সকালে টকের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। ছেলেবেলায় টাকো খেলত আমার ছোট বোন মণির সঙ্গে। সে আজ ১৫, ১৬ বছর পরে বিধবা হয়ে গ্রামে ফিরে এসেচে। এসে আমায় নমস্কার করলে-ওর মখ ভুলেই গিয়েছিলাম-এখন দেখে মনে হল-হাঁ, এ মেয়েকে আগে দেখেছিলাম বটে। পরদিন সকালে নটার ট্রেনে কৃষ্ণনগর সাহিত্য-সম্মেলনে গেলাম। গাছে গাছে শিমলাফল ফটে লাল হয়ে আছে। সজনী, অমল বোস, সনেীতি বস, প্ৰবোধ সান্যাল, বিজয়লাল সকলের সঙ্গে কৃষ্ণনগর সেন্টশনে দেখা। অতুল গগুপ্ত ও যামিনী গাঙ্গলী একখানা মোটরে আসছিলেন, বিজয়লাল চট্টোপাধ্যায়। তাতেই আমায় উঠিয়ে দিলেন। মনোমোহন ঘোষের যে বাড়িতে আজকাল কলেজিয়েট স্কুল, ওখানেই খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছিল। ঢাকেই দেখি প্ৰবোধ সান্যাল বসে খাচ্চে। আমি ও ইউনিভাসিটির প্রিয়রঞ্জনবাব একসঙ্গে খেতে বসে গেলাম। খেয়েই সভাসস্থলে যাই। প্রমথ চৌধরিী সভাপতি। কৃষ্ণনগর রাজবাটীর নাটমন্দিরে সভা বসেচে। কখনও এর আগে কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির মধ্যে ঢাকিনি-যদিও এর আগে বাল্যকালে একবার কৃষ্ণনগর এসেছি। তার অভিজ্ঞতা খাব অদভুত। আর বছর দই আগে কয়েক ঘণ্টার জন্যে যে এসেছিলাম। আমার ছোট ভাইয়ের জন্যে পাত্রী দেখতে, সে ধত্তিব্যের মধ্যেই গণ্য নয়। কৃষ্ণনগরে বাবার সেই মা-আমাদের আলভাতে ভাত খাওয়ানো-আমার হতাদর —কত কথাই মনে পড়ে। সেই আর এই! সে গলপ আর একদিন করব। কৃষ্ণনগর থেকে সেই রাত্রে রাণাঘাটে এসে খগেনমামার বাড়িতে রইলাম--তাও সেই বাল্যে ওদের বাড়ি শহয়েছিলাম, আর কখনও থাকিনি। একটা সরস্বতীঠাকুর বিসঙ্গজনি দিতে গেল শোভাযাত্রা করে অনেক রাত্রে। বেজায় শীত পড়ল। রাত্রে। পরদিন এলাম। এগারোটার ট্রেনে গোপালনগরে। স্টেশনে আবার খগেন মিত্র ও প্রভাতকিরণ বসার সঙ্গে দেখা। রেস্তোরাঁতে বসে চা খেতে খেতে চন্ডীদাস সম্পবন্ধে আলোচনা করা গেল অনেকক্ষণ । দেশে গিয়ে বেশ লাগল। তখনি নদির কাছে একটা তেল চেয়ে নিয়ে নদীতে স্নান করে এলাম ; ওপাড়ার সেই কুমারনী ক্ষার কাচিছে। শকানো ফল পড়ে আছে কত বনাসিমতলার ঘাটে। পরশ কতক্ষণ ঘাটে বসেছিলাম, বনের কুল পেকেচে একটা ডালে, দরিদ্র পল্লীজননী আর কি দিয়েই বা আদর করবেন ? তবও কত সমিতি জড়ানো রয়েচে এই বনাসিমতলার ঘাটের সঙ্গে! খকু ওখানে দাঁড়িয়ে গলপ করত নেয়ে উঠে—এই তো সেদিনও । GS } দিনলিপি-৬/উৎকণ-৫