পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যে ওটা চলে গেলে গালডির একটা beauty spot চলে যাবে। অপরাহ্রে সবর্ণরেখা পার হয়ে কুমীরমাড়ি গ্রামের জঙ্গলে বসে রইলাম কতক্ষণ। প্রথমে যাচ্ছিলাম রাখামাইনস-এ। কিন্তু বেলা গিয়েচে দেখে ভরসা হল না। এক জায়গায় ধাতুপ, ফলের ঝাড় দেখে দাঁড়িয়ে গেলাম-কাছেই একখানি বড় পাথর। হঠাৎ দেখি বনের মধ্যে একটা গোলগোলি ফলের গাছে হলদে ফল ফটে রয়েছে অজস্র। সেখানে ঢকে দেখি বনে লতানে পলাশ গাছে পলাশ ফটেচে, তা ছাড়া একরকম বন যই-এর মত কি ফল ফটেচে ফল গাছের মত গাছে। মোরাম ছড়ানো মাটি —ঠিক যেন কয়লার টাঁকরো ছড়ানো পড়ে রয়েচে। বসে বসে মনে হল কাল ঠিক এসময় রংপরে টাউনহলের ক্লাবঘরে বসে চা খাচ্চি—আর আজ এসময় সবণ রেখার ধারের বনে! কোথায় ছিলাম কোথায় এসেচি! চাঁদ উঠছে ঠিক সেই গোলগোলি ফলগাছের পেছনে! প্রকান্ড গাছটা—আমাদের দেশের একটা মাঝারি গোছের আমড়া গাছের মত। ফলগালো অনেকটা দীর থেকে দেখতে সােয্যমখী ফলের মত। কতক্ষণ বসে রইলাম, তারপর জ্যোৎস্না। ফটবার পকেবই লতানো পলাশের একটা গচ্ছ তুলে নিয়ে সবর্ণরেখা পার হয়ে গালডি চলে এলাম। বড় সন্দর জ্যোৎস্না! বাংলার বাইরে ভিন্ন এ ধরণের ছায়াহীন অদভুত ধরণের জ্যোৎস্না বড় একটা দেখা যায় না। বাদলবাবার বাড়ি বেড়াতে গিয়ে কালাঝোের পাহাড়শ্রেণীর দিকে চেয়ে চোখ ফেরানো যায় না যেন-জ্যোৎসনারাত্রে অস্পন্ট দেখাচ্চে যদিও, তবও কি তার চেহারা! হাঁ, একটা কথা বলতে ভুলে গিয়েচি। চা খেয়ে ওপারের বনে বেড়াতে যাওয়ার পকেবা গালডির হাটে বেড়াতে গেলাম। ১৯৩৪ সালের গডফ্রাইডের ছটির পরে এই হাট আমি আর কখনো দেখিনি। সেই পরানো দিনের মত টােমাটো, শটকি মাছ, মহয়ার তেল, বাজে লান্ড আর তেলের খাবার বিক্ৰী করচে। সাঁওতাল মেয়েরা গলাপ করচে, পাঁচগ্রামের লোকের সঙ্গে আলাপ করচে। কাল ঠিক এই সময়ে কিন্তু রংপরের সভাতে বসে আছি। পরদিন ভোর ছটাতে আমরা চারখানা গরর গাড়ি করে। দীঘাগড়া পাথর খাদানে রওনা হই। প্রথমে তো যাবার রাস্তা। এরা ভুল করলে। ফলাকাল ও বনকাটি দিয়ে না। গিয়ে প্রায় চলে গেল ঘাটশিলার কাছাকাছি। কালাঝোরি পাহাড়টা প্রায় সেখানে শেষ হয়েচে। বাদলবাব কেবলই বলে, এখনো পথটা আসিনি, আরও আছে। এমনি করে অনেকটা গিয়ে তারপর বাঁ-ধারে পথ পাওয়া গেল। কাঁপড়িশোল বলে একটা সাঁওতালি গ্রামের প্রান্তে গাছতলায় সবাই শতরঞ্জি বিছিয়ে চা খেতে বসা গেল। মেয়েরা চা করতে লাগলেন। ভিক্টোরিয়া দত্ত খাবার দিলেন সবাইকে। বেলা নাটা। সামনে কালাঝোর পাহাড়শ্রেণীর পাদদেশে ঘন বন সম্পন্ট দেখা যাচ্ছে। দরের গ্রামের এক পল্লী বালিকা এতক্ষণ বকুলতলায় কি করাচে মনে হল। চা-খাওয়া শেষ করে একটা সাঁওতাল ছোকরার সঙ্গে দেখা। আমি তখন গরর গাড়ি ছেড়ে একটা এগিয়ে চলেছি। সে বল্লে--দীঘার চেয়ে বাসাডেরায় বন খাব বেশী। কিছ পয়সার লোভে সে আমাদের বাসাডেরা নিয়ে যেতে রাজী হল। নীরদবাবা কেবলই কালকার জ্যোৎস্না রাত্রির কথা বলছিলেন। জঙ্গলের মধ্যে ঢাকেই তিনি আমার হাতে হাত দিয়ে অঙ্গীকার করিয়ে নিলেন আর একদিন জ্যোৎস্নায় আমরা আবার এখানে আসব। বনের শোভা বড় সন্দর। প্রথম বসন্তে শৈলসানার বনে অজস্র গোলগোলি ফলের গাছে ফল ফটেচে, পলাশ ফটোচে, সাদা সাদা এক ধরণের ফলে, গাড়ুেয়ানেরা বললে, বােররা। লোহােজালির ফলে বেশ সাগন্ধ -আর যেখানে সেখানে প্রস্ফটিত শালমঞ্জরীর তো কথাই নেই-সবাসে দাপরের ○○