পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাতাস মাতিয়েচে। বনের মধ্যে একটা কুয়া এক জায়গায়, সাঁওতালেরা জল নেয়। আমরা সেই কুয়ার জল খেয়ে নিলাম। ডাইনে বেকে বনের মধ্যে বারডি গ্রাম। একটা পাথরের কারখানাতে পাথরের গেলাস, থালা, বাটি, খোরা তৈরী হচ্ছে, মেয়েরা নেমে কারখানা - দেখতে গেলেন—আমরাও গেলাম সঙ্গে। বেলা সাড়ে দশটা। খকু এতক্ষণ ওদের রান্নাঘরে মায়ের সঙ্গে রাঁধতে বসেচে। ক্ৰমশঃ বন গভীর হয়ে এল। পথের ধারে বন্য হস্তীর পদচিহ্ন গাড়োয়ানেরা দেখালে। গাইড ছোকরা বল্লে-বনে খাব মজার আছে। মজার ? মজার কি ? একজন গাড়োয়ান বল্লে, বাবা, আপনারা যাকে ময়র বলেন। এ বনে যেখানে সেখানে পলাশ গাছ, লতার মত জড়িয়ে উঠেছে অন্য বড় গাছের গায়ে—ফল ফটে রয়েচে । গোলগোলি গাছটা। এ বনে তত দেখাচি নে। একস্থানে উচ্চ ঘাট, অনেকটা শিলং-সিলেট রোডের মত, ডাইনে নীচ খাদ—গরর গাড়ি খািব কন্টে উঠতে লাগল। বাসাডেরা গ্রামের চারিধারেই পাহাড়, মধ্যে একটা উপত্যকায় একটি সাঁওতাল বসিত। গ্রামের লোকেরা আমাদের গাড়ির দিকে অবাক চোখে চেয়ে দেখচে । বাসাডেরা গ্রাম পার হয়ে কি একটা বেগনি রংয়ের বড় ফলগাছ দেখলাম জঙ্গলে-খািব জঙ্গল এদিকটাতে। এখানে ঝাটি-বীণা বলে একটা জায়গা আছে, সেখানে জঙ্গল আরও অনেক বেশী। ঘন জঙ্গলের মধ্যে কত গ্রাম রয়েচে। পাহাড়ী ঝর্ণা তাদের জল যোগাবার একমাত্র সস্থান। বাসাডেরা গ্রাম ছাড়িয়ে এমন হল যে জল কোথাও পাওয়া যায় না।-- আমি একটি উপলাকীর্ণ শতক নদী খাতের পাশের জঙ্গলে একটা মোটা লতার ওপর উঠে বসে রইলাম। একটা পরে গাইড এসে জলের সন্ধান দিলে। পাহাড়ী ঝর্ণা বেয়ে এক জায়গায় জলাশয় সন্টি করেচে। আমি সাঁতার দিয়ে সেই জলাশয়ে সন্নান করলাম। মেয়েরা রান্না চড়িয়ে দিলেন। আমি ও কনক ডান দিকের পাহাড়টাতে উঠলাম। কনক কিছদার গিয়ে আর উঠতে সাহস করলে না-আমি একটা মসণ পাথর বেয়ে উঠে গেলাম। খাব ওপরে প্রায় পাহাড়ের শীর্ষদেশে উঠে দাঁড়িয়ে চারিদিকের পাহাড়গলো চেয়ে দেখলাম। সব পাহাড়ের মাথাতেই বন। বনে আগন লেগেছিল। কিছদিন আগে, এখনও এ পাহাড়ে একটা মোটা শেকড় ধোঁয়াচ্ছে। একটা শিবগাছের রেণ। হাতে মেখে মখে দিলাম, যেন পাউডার মাখে। মাখচি এমনি সাদা হয়ে গেল। নামবার সময় মসণ পাথরখানা বেয়ে আর নামতে পারিনে, মাঝামাঝি এসে আটকে গেলাম--অবশেষে একটা শেকড় ধরে এসে নােমলােম কনক যেখানে দাঁড়িয়ে আছে। আমার অবস্থা দেখে কনকের , ভয় হয়ে গিয়েছিল। আরও নেমে এসে তবে সেই জলাশয় ও সেই প্রস্তরাকীর্ণ উপত্যকা, যেখানে মেয়েরা রান্না করবেন। নেমে এসে দেখি রান্না হয়ে গিয়েচে । খাওয়া-দাওয়া সারিতে ও বিশ্রাম করতে বেলা গেল। রওনা হবার সময়ে দেখি আমার পায়ের আঙ্গলে পাহাড়ে ওঠবার সময়ে যে চোট লেগেছিল, তার দরণে দস্তুরমত ব্যথা হয়েচে। সতরাং গরর গাড়িতে চিৎপাত হয়ে শয়ে সন্দের অপরাহু নন্ট করে ফেলতে হল বাধ্য হয়ে--কেবল পাহাড়ের ঘাট পার হয়ে ঘন জঙ্গলের পথে খানিকটা খালি পায়ে হোটে এসেছিলাম। পথে জ্যোৎসনা উঠল। এক জায়গায় বনের মধ্যে গাছতলায় আমরা শতরঞ্জি পেতে বসে চা করে খেলাম, গলপসলপি করলাম । তারপর ক্রমেই পণিমার জ্যোৎসনা ফাটল। অপব্ব জ্যোৎস্নময়ী রাত্রি। আর সেই বনভূমি, অজস্ৰ গোলগোলি ও পলাশ যেখানে ফটে রয়েচে, যদিও জ্যোৎস্না-রাত্রে এখন ফল আদৌ দেখা যাচ্চে না। বন-কাটি নামে একটা খাব বড় সাঁওতালি গ্রামের মধ্যে দিয়ে একটা বড় শাল-বনের পাশ কাটিয়ে রাত এগারোটার সময়ে গালডি এলাম । আমরা যখন এলাম, তখন মেল ট্রেনের ঘণ্টা পড়ল সেন্টশনে। VS