পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাত দশটা-হয়তো নাদিদিদের বাড়ি সবাই গল্প করচে, কি তাস খেলচে। ছোটমামীরা চা করচে, আমরা গলপ করতে করতে চা পান করলাম। পটলমামার এক ছোট মেয়ে বেড়াতে এল। রাত এগারোটার সময় মেয়েদের আলাপ শেষ হল, সবাই মিলে আবার এলাম দোতলায়। কোথায় কাল এ সময়ে গালাডিতে দোলের ভোজ চলচে, দরে সিদ্ধেশবর ডাংরি ও কালাঝোর শৈলমালা ফন্ট ফটে জ্যোৎস্নায় অস্পষ্ট দেখাচ্চে —আর আজ কোথায় কোন পরোনো সমিতি জড়ানো রাজ্যের বকের মধ্যে এসে পড়েছি! রাত অনেক হয়েচে। শান্তিদের দোকানে গিয়ে ওকে জাগিয়ে কদমা কিনে সবাই ঘোড়ার গাড়িতে এসে উঠলাম। রাত দটােতে ভাটপাড়া পৌছাই। ভাটপাড়া থেকে এলাম শক্রবার সকালে, শনিবার গেলাম বনগাঁ। এই সপ্তাহটা অদভুত ধরনের বেড়ানো হল, নানা বিচিত্র অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে। বনগাঁ পৌছেই চলে গেলাম খয়রামারির মাঠে ও রাজনগরের বটতলাটাতে। মনে পুড়িল আজ যখন বটতলায় ঝরি ঠেস দিয়ে বসে, সেদিন এমনি সময় কুমীরমাড়ির জঙ্গলে সবৰ্ণরেখার ওপারে ঠিক এমনি একটা গাছ ঠেস দিয়ে বসেছিলাম—কিংবা তারও আগের দিন বাসাডেরার বন্যপথ দিয়ে গরর গাড়ি করে গালডি ফিরচি। ওখানে কতক্ষণ বসে তারপর মাঠের মধ্যে এসে বসলাম। হা হা হাওয়া বইচে, রোদ-পোড়া মাটির সোঁদা গন্ধে বাতাস ভরপাের। পরদিন সকালে উঠে বারাকপাের চলে গেলাম। খকু রান্নাঘরে রাঁধচে, বেলা দশটা, আমি ইন্দদের বাড়ি একটা বেড়িয়ে তারপর খকুদের রান্নাঘরে গিয়ে ডাকচি, ও খড়ীমা, খড়ীমা!—খকু আমায় দেখে অবাক হয়ে গিয়েচে। বল্লে—আপনি কখন এলেন ? বললাম, এই তো খানিক আগে আসচি। দজনে গলপ করচি, তখন খড়ীমা এলেন। আমি একটি পরে বরোজপোতার বাঁশবনে ঘোটফলের বন দেখে সন্নান করতে গেলাম আমাদের ঘাটে। তিত্তিরাজ ফলের বীচির গন্ধ, মাটির গন্ধ, শকানো পাতা ও ডালের গন্ধ, ঘোটফলের গন্ধ, কড়ির গন্ধ-নানা প্রকার জটিল ও বহদিনের সপরিচিত, বহদিনের কত পরোনো-কথা-মনে-আনিয়ে দেওয়া গন্ধের সমাবেশ। তাই আমাদের ঘাটে সন্নান করে উঠে কুলতলাটা দিয়ে যখন আসি, মন যেন এক মহত্তে নবীন হয়ে বাল্যদিনে চলে গেল বাল্যদিনের পরিচিত গন্ধে । গালডি ও সিং ভূমের বনের সঙ্গে কোন সমিতি নেই কাজেই তা রক্ষা ও বন্য—বাংলাদেশের এই প্রকৃতি মায়ের মত নিতান্ত আপনা, নিতান্ত ঘরোয়া এর প্রতি ভাণ্ডিগাটি আমার পরিচিত ও প্রিয়। চলে আসবার সময়-সন্ধ্যার গাড়িতে চলে এলাম—খক্‌ ওদের দাওয়ার পৈঠেতে দাঁড়িয়ে চেয়ে রইল। চমরি বাগানে কি অজস্র ঘোঁটবন, আর কি তার মিষ্টি গন্ধ ! আমার মনে ভারী আনন্দ, আর তার সঙ্গে ঘোট, ফলের গন্ধটা মিশে আনন্দ ঘনীভূত করে তুললে। বেলা পড়ে এসেচে, হাট থেকে লোক ফিরচে। নানা রকম গাছ, লতাপাতার সগন্ধ বের চেচ-শকিনো জিনিসের গন্ধই বেশী, শকানো ফল, শকিনো মাটি, শকানো রীড়াফলের বীজ, শকিনো ডাল পাতা—এই সব গন্ধ। রাত সাড়ে দশটায় এসে- কলকাতায় পৌছাই, গত শক্রবার রংপরে যাওয়া থেকে আরম্পভ করে নানা রকম বেড়ানোর অভিজ্ঞতা। এ সপ্তাহে যা হল, সচরাচর ঘটে না। রংপর থেকে এসেই গালডি ও বাসাডেরার জঙ্গল-অমনি সেখান থেকে ফিরেই পরোনো বাল্যদিনের হালিশহর, শ্যামাসািন্দরীর ঘাট, বলদেকাটা বাগ ও কাঁচড়াপাড়ার মধ্য দিয়ে ঘোষপাড়ার দোল ও মারারিপরের বাড়ির ছাদে জ্যোৎস্না-রাত্রে বসে চা খাওয়া-আমনি সেখান থেকে পরদিন রাজনগরের বটতলা ও বিরোজপোতার বাঁশবন ও Vy Vy