পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চালাচ্চে। নারিকেল সপারির বাগান চারিদিকে প্রত্যেক লোকের বাড়ির উঠানে, বপিসি বনে অন্ধকার, স্যাঁতসেতে মাটি। টিনের চালা-ওয়ালা দরমার বেড়া দেওয়া সব ঘর—তার বাইরে টিনের সাইনবোড ঝালচে, “মোজাহার আলি মোক্তার" কিংবা “আজাদ আলি, বি-এল, প্লীডার।” বাড়ির পাশে ছোট ছোট ডোবা মত পকুরুসপরির বাকলো দিয়ে ঘেরা বেড়ায় আবর। আবক্তজনা, পচাপাতার জঞ্জাল বাড়ির পাশেই, নীচ আদি উঠোনে বা মেজেতে। এক জায়গায় লেখা আছে ‘রসিকলাল সেন নায়েবের বাসা’। তারপর একটা সর খালের ধারে ধারে নারিকেল সপরির ছায়ায় ছায়ায় কতদার বেড়াতে গেলাম, ফিরে এসে একটা কাঠের পালের ওপরে বসলাম। দটি ছোট ছোট মেয়ে মাছ ধরচে। কতক্ষণ পলিটাতে বসে রইলাম। কি বিশ্ৰী জায়গা এই পিরোজপর। পাঁচশো টাকা মাইনে দিয়ে যদি কেউ বলে তুমি এখানে এক বছর থাক—তা আমি কখনো থাকিনে। এমন জায়গায় মানষে থাকতে পারে ? রত্না দেবী ও তাঁর স্বামী সত্যিই বড় কন্টে থাকেন, আমন আমাদে লোক বেশী দেখা যায় না। রত্না দেবী বড় গলপপ্রিয়-দিনরাত মাখের বিরাম নেই। আর কি সেবাযত্ন ক'দিন ! নিত্য নতুন খাবার তৈরী হচ্চে আমায় খাওয়ানোর জন্যে। বৈকালে বার-লাইব্রেরীতে মিটিং হল, আমার সাহিত্য-জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে একঘণ্টা বস্তৃতা করা গেল। জ্যোৎসনা রাত্রে বাইরে বসে গলপ করি রত্নাদেবীর সঙ্গে। পিরোজপর থেকে এসে মনে কোথায় একটা অব্যক্তির দৈনা ছিল। সেখানকার সেই নারকোল সাপরি বনের ঝাপ সি ছায়ায় স্যাঁতসেতে ভিজে উঠোন আর সপরির বাকলোর আবরার কথা, সেই রসিকলাল সেন নায়েবের কথা মনে হলেই মনে একটা অস্বসিত আসত। আমাদের দেশে আসবার সময় ঝিকরগাছা ঘাটে পৌঁছেই মনে হল সবদেশে পৌছে গেছি। নাভােরনের কাছে যশোর রোড ও বিলিতী চটকার ছায়া দেখে মনে হল আমরা একেবারে বাড়ি পৌঁছে গেচি। বাড়ি এলাম নাটার গাড়িতে। এসেই খকুর সঙ্গে দেখা। ও দেখি ওদের দাওয়ায় বেড়াচ্চে, আমায় দেখে প্রথমটা পিছ হটে সরে গেল, তারপরই চিনতে পেরে ছটে এল। পিরোজপরের গলপ হল অনেকক্ষণ। ওর জন্যে যে কেক পাঠিয়েছিল তা দিয়ে এলাম। পরদিন এল সািধীরবাবােরা। ওদের নিয়ে হৈ হৈ করে দিন কেটে গেল। মোটরখানা ওদের রইল। আমাদের আমতলায়। আমাদের ঘাটে সন্নান করিয়ে আনলাম সবাইকে। নদীতে স্নান করে সব খাব খশি। ওরা চলে গেল বৈকালে। পরদিন এল কালী চক্রবত্তীর ঘোড়া আমাকে সিমলে নিয়ে যাবার জন্যে—অনেকদিন পরে ঘোড়ায় চড়া গেল। গোপালনগর সেন্টশনের কাছে ছাতি সারিয়ে নিলাম--তারপর গণেশপরের পাশ দিয়ে পাকা রাস্তা থেকে মাঠের রাস্তায় নেমে সোজা হাতীবাঁধা বিলের পাশ দিয়ে চললাম। কত গাছপালা, বটতলা, ঝোপঝাপ পার হয়ে যে চলেচি! আসবার সময়েও তাই। তখন বৈকালের ছায়া পড়ে এসেচে, হাতীবাঁধা বিলের চমৎকার শোভা হয়েচে-কতদার জড়ে প্রশান্ত চক্রবালরেখা দািরত্বের কুয়াসায় অস্পষ্ট। হে ভগবান, আমি আপনার এই মন্ত রাপের উপাসক। যদি কখনো আসেন, তবে এই রাপেই আসবেন। নভোনীলিমা যেখানে মেঘলেশশান্য, দিকচক্রবাল যেখানে মত্ত, উদার-ধরার অরণোদয় যেখানে নিবিড় রাগরক্ত, সে রাপেই আপনি দেখা দিন-রসিকলাল সেন নায়েবের বাসা থেকে আমায় মন্তি দেন যেন। সিমলে থেকে ফিরে যখন নদীতে যাচ্চি গা ধতে—-বেলা খাব পড়ে গিয়েচে, ছায়ানিবিড় হয়েচে বাঁশবন। খকু ওদের সঙ্গিনীদের সঙ্গে ঘাট থেকে ফিরচে, বাঁশ G0