পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বল্লার ভাঙনের কাছে একটা চারা শিমল গাছ আছে, তার চারিপাশে সবজি কচি ঘাস বন, নিকটে উলখেড়ের রাশি রাশি ফল ফটেচে, ঝলমলে রোদ, নীল আকাশ। রৌদ্রে ঘাসের ওপর শয়ে থাকতে বেশ মজা। সন্নান করে এসে বসেচি, খকু এসে অনেক গলপগজব করলে। বিকেলে কি চমৎকার রোদ ! এমন রোদ এবার সারা জ্যৈষ্ঠ মাসে দেখিনি। পচা রায় মাছ ধরতে গেল। কুঠীর নীচেই জলের ধারে ঘন বন, তার মধ্যে ঢকে খানিকটা বসি। এমন ঘন বন যে এদিকে আছে তা জানা ছিল না। আমার। জলের ধারে কতক্ষণ বসে গলপ করি পচার সঙ্গে। আকাশের বড় বড় মেঘস্তােপ ব্রুমে রাঙা হয়ে এল বেলা পড়লে। আমি উঠে মাঠের মধ্যে বেড়াতে গেলাম। এদিকের মাঠ ওদিকের চেয়ে অনেক ভালো। কুঠীর নীচে সেই জলটার চারিপাশের দশ্য বড় সন্দর। আমাদের ঘাটের ওপরে ডাক্তারদের কলাবাগানে একদল গোয়ালা গর, চরাতে এসে রান্নাবাড়া করচে। তাদের কাছে বসে খানিকটা গলপ করলাম। ওদের বাড়ি ঝিকরাগাছার কাছে। ও-দেশ জলে ডাবে গিয়েচে বলে এখানে গর, চরাতে এসেচে। আজ আকাশের রং অদভুত রকমের নীল, এমন, নীল রং সেই আর বছর আষাঢ় মাসের পরে আর কখনো দেখিনি, বান্টি-ধৌত আকাশ না হলে এমন নীল রং বঝি ফোটে না। মদের নেশার মত কেমন নেশা লাগিয়ে দিল। এই আকাশের নীল রংটা । রোদের রং হয়েচে। অদভুত-প্রখর সাদা নয়, যেন হলদে ধরনের। গাছপালা ঘাসের রং যেন হয়েচে হলদে। আমাদের ঘাটে নাইতে যাবার আগে মাঠে বেড়াতে গিয়ে দরের বাঁশবন, কাঁদি কাঁদি খেজর ঝোলানো খেজর গাছ, অন্যান্য গাছগালোর রৌদ্রলোকিত পত্রপঞ্জের দিকে চেয়ে চোখ আর ফেরাতে পারিনে। আমাদের ঘাটের ধারে ফলভত্তি বাবলা গাছ, সাদা-ডানা প্রজাপতি উড়চে-সে। দশ্যটা মনে অপব্ব ভাব নিয়ে এল। এই নীল আকাশ থাকবে। আরও যাট বছর পরে, এই বন সমতলার ঘাট থাকবে তখনও, ওপারের চরে এমনি উলার ফলে ফটবে, এমনি সাঁইবাবলার পত্রিশীষ বন্টি-ধোয়া নীল আকাশের তলে সায্যের আলোর দিকে খাড়া হয়ে রইবে, কত অনাগত তরণী বধরা জলসিক্ত পদচিহ্ন অভিকত করে ঘাটের পথে যাওয়া আসা করবে। আমি তখন আর থাকব না। এ গ্রামে জানি—তবও আমার কথা গাঁয়ের এমনি আষাঢ় দিনের হাওয়ায়, নিৰ্ম্মমল নীল আকাশের আনন্দের মধ্যে আদশ্য অক্ষরে লেখা হয়ে থাকবে, সেই দর ভবিষ্যতের কথা মনে হয়ে চলমান জগতের রােপ আমার মনে আনন্দের বাণী বহন করে অনলে । আজ সন্ধ্যায় কি অপব্ব শ্ৰী ! অস্তমান সংয্যের রঙে সমস্ত মাঠ, বন মায়াময় হয়ে গিয়েচে—সারা পথিবীটা কি অপরােপ শিলপ তাই ভাবি। আকাশের রং নীল নয় -সে কি রং তার বণনা দেওয়া কঠিন-ওরকম রংএর কি নাম তা আমার জানা নেই। সন্ধ্যায় নদীজলে নেমে সনান তো যেন দৈনন্দিন উপাসনা। আজ এখানে বেড়াবার শেষ দিন। কারণ কাল শটোর বিয়েতে যদি বরযাত্রীদের সঙ্গে যেতে হয়, তবে কাল আর আসতে পারব না। পচা রায়কে সঙ্গে নিয়ে যাব, তার একটা আগে খােক উঠোনে দাঁড়িয়ে গলপ করে গেল, তাতে হয়ে গেল একটা দেরি। আমি পচাদের বাড়ি গিয়ে দেখি সে নেই! গাজিতলার পথে সে অনেক দরে চলে গিয়েচে, তাকে সেখান থেকে ডেকে নিয়ে গেলাম বেলেডাঙার বাঁকের মাথায়। কতক্ষণ সেখানে অদধচন্দ্ৰাকৃতি মরগাঙের ওপারের চর, খেজর গাছ, বাঁশবন, জলি ধানের GV)