পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ক্ষেতের দিকে চেয়ে বসে পচা রায়ের সঙ্গে গলপ করি। বেলা যখন যায় যায়, তখন উঠে আইনন্দির বাড়িতে এসে দেখি সে বাড়ি নেই। বেলেডাঙার পলের ওপর কতক্ষণ বসে রইলাম শ্যামল সবজের বন্যার দিকে চেয়ে। কি দিগন্ত-প্রসারী ধানক্ষেত, বটঅশবখের বীথি, নতিডাঙার গ্রামপ্রান্তর, বাঁশ-বনের সারি, কি বিচিত্র মেঘস্তােপ নীল আকাশে! সন্ধ্যা প্রায় যখন হয়ে এল, তারপরে আমরা ওখান থেকে উঠে আসি। পচা একটা কলার বাগান থেকে কলা সংগ্রহ করলে। আমি বন সিমতলার ঘাটে এসে নাইলাম। আকাশে অনেক নক্ষত্র উঠেচে, বনের মধ্যে জোনাকির ঝাঁক জবলচে, অন্যদিনের চেয়ে আজ বোলা গিয়েচে। সন্ধ্যায় খকুদের বাড়ি বসে অনেক রকম গলপ করলাম, তারপর উঠে গেলাম পাঁচকাকাদের বাড়ি, ওদের বাড়ি কাল বিয়ে, অনেক কুটম্বব-কুটম্বিনী এসেছে-পাঁচােকাকার ভাই ফণিকাকা এসেচেন জলপাইগাড়ি থেকে-একবার সব দেখাশানো করে সামাজিকতা রক্ষা করতে যাওয়া দরকার। আজ চলে যাব। বেলা তিনটের সময় আমার ঘরে ঘােম ভেঙে উঠলাম--তারপর বেড়াতে গেলাম নদীর ধারের মাঠে। বেজায় গমট গরম, আকাশে সাদা মেঘ। একটা পরে পাঁচােকাকার ছেলে শটাে বিয়ে করে নববধ নিয়ে গ্রামে ঢািকল। সানাই বাজচে, ঢোল-বাজনার শব্দ শনে কল্যাণী, খড়ীমা, খকু এরা সেজেগজে ছািটল। আমতলায় দেখি সব চলেচে। খকু একবার চেয়ে দেখলে আমার দিকে। ঐ ঘোড়ার গাড়িতেই আমি চলে এলাম বনগাঁ স্টেশনে। সারা পথ ট্রেনে আকাশের দিকে চেয়ে চেয়ে মনে হচ্ছিল কি অপব্ব সন্দর গ্রীল্ডেমর ছটিই আজ শেষ হয়ে গেল। কলকাতায় এসে কদিন বড় ব্যস্ত ছিলাম। পরোনো বন্ধদের সঙ্গে দেখা করে বেড়াচ্ছি--সাঁতরাগাছি ও রাজপরেও গিয়েছিলাম। পরশ হঠাৎ এলাহাবাদ থেকে উষা এসেছিল- দেখা করতে এসেছিল মেসে। আমি তখন সবে চলে কাটতে বসেচি। তাড়াতাড়ি যেতেও পারিনে—বসতে বলে যত শীঘ্র হয় চলে ছেটে দেখা করে এলাম। উষার নিন্দেশমত বালিগঞ্জে গেলাম দাপরের পর। অনেকগলি মহিলা ছিলেন সেখানে--সাহিত্যিক আলোচনা হল অনেকক্ষণ ধরে--- সকাল থেকে বার হয়ে বিকেলের দিকে ইন্দিরা দেবীর বাড়ী গেলাম রেডিওর বক্তৃতার নকলটিকে আনতে। কাল রাত্রে রাজপরে বেগন, আমি ও ফলির দই ছেলে এক মশারীর মধ্য শহয়ে প্ৰাণ যায়। আর কি—গরমে আর মশায়! সারারাত চোখের পাতা বোজেনি। এরই মধ্যে একদিন আয়েলীর সঙ্গে দেখা হল সম্পর্ণে অপ্রত্যাশিতভাবে গত মঙ্গলবারে। আমি আয়েলীর কথা বলচি নীরদবাবদের বাড়ি, যে ওই একটি মেয়ে, যার সঙ্গে আর দেখা হবে না—কারণ ওর মা ওকে নিয়ে সিওগাপারে বাপের বাড়ি চলে গিয়েচে । হঠাৎ সেদিন প্রবাসী অফিসে গিয়েচি, সেখানে দেখা ডাঃ প্রমথ রায়ের সঙেগ। অনেকদিন পরে দেখা, কেউ কাউকে ছাড়তে পারিনে। অনেকক্ষণ ওখানে থেকে বার হয়ে একটা চায়ের দোকানে বসে গলপ হল পরোনো দিনের-যখন “শনিবারের চিঠি আপিস ছিল মতলায়। প্রমথ এখন বেনারস হিন্দ ইউনিভাসিটির অধ্যাপকভারী বন্ধবেৎসল, ছেড়ে দিতে আর মন চায় না। প্রমথ এসে আমায় উঠিয়ে দিয়ে গেল হ্যারিসন রোডের মোড় পর্যন্ত। আমি কপোরেশনের কয়েকজন কাউন্সিলরের লিস্ট দিতে গেলাম নীরদবাবদের বাড়ি কোন মেমসাহেব এখানে এলা! ঢাকেই দেখি আয়েলী ও মিসেস এণ্টনি বসে। AA