পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেখা করতে গেলাম অনেককাল পরে। বয়স হয়েচে, কোন দিন মারা যাবেন-আর অনেকদিন যাওয়া হয়নি—এইসব ভেবেই দেখা করতে গেলাম। ভারী আনন্দ পেলাম বসে কথা কয়ে ওঁর সঙ্গে বললাম—মাঠে যান। এখনও ? বল্লেন-ও বাবা, না গেলে কি বাঁচি ?...বল্লাম-ফিলজফার আসেন ? বল্লেন—রোজ আসেন, তোমার কথা যে সেদিন বলছিলেন, তুমি আর যাও না কেন ? তারপর আলামোহন দাস বলে একজন বড় ব্যবসায়ীর গলপ করতে লাগলেন--তিনি নাকি প্রথম জীবনে মাড়ি-মািড়কি বিক্ৰী করতেন। এখন ক্রোড়পতি লোক। চার-পাঁচটা মিল আছে। ” বললেন-গ্রিন বোট করেচি, শ্ৰীপরের ঘাটে বাঁধা রয়েচে। একবার তোদের বারাকপরে যাব গ্রিন বোটে করে, ইছামতী দিয়ে। বললাম-বেশ, আসন না! অনেকদিন পরে বড়োর সঙ্গে গলপ করে বড় আনন্দ পেলাম। বড়ো কবে মরে যাবে, একটা অন্যতাপ থেকে যাবে মনে। গত শক্রবারে অর্থাৎ ২৯শে জলাই গ্রীল্ডেমর ছটির পরে প্রথম বাড়ি গিয়েছিলাম। ভারী ভালো লেগেচে৷ এবার। খকুদের দাওয়ায় বসে কদিনই সন্ধ্যার সময় কত গলপগজব করি। ওরা একদিন খাওয়ালো। বাল্টিতে ভিজে ভিজে খকু রান্নাঘর থেকে জিনিসপত্র নিয়ে এল। আমি গেলেই শতরঞ্জিখানা ঘরের মধ্যে থেকে এনে বড় করে পেতে দেবে—আর ওর মা বলবে, ছোট করে পাত। ছোট করে পাত ৷ কালিঘাট বেড়াতে গেলাম পচা রায়ের সঙ্গে। রবিবার হাটে গেলাম। বকুলতলা দিয়ে হাট করে ফিরি। খকু দাঁড়িয়ে আছে, আমি বলচি, খড়ীমা, কাউকে তো দেখতে পাচ্চি নে ? ও বলচে, কেন হাতীর মত দাঁড়িয়ে আছি, দেখতে পাচ্চেন না ? তাড়াতে পারলে তো সব বাঁচোন! আমি তারপর নদীর জলের একেবারে ধারে গিয়ে বসলাম। লক্ষবা শীষ ও ফল ফটেচে, এপারে ঘন সবজি গাছপালা, নদীর জল আবত্ত করে ঘরচে— বেশ লাগচে । দিলীপের সঙ্গে সেদিনকার সেই তক মনে পড়ল। থিয়েটার রোডে ওর বাড়ি বসে তক করেছিলাম ওর বই নিয়ে। একজন চাষা আজ হাট থেকে ফিরবার পথে গলাপ করছিল—লতা যদি বেশি হয়েচে.তবে আর ঝিঙে তাতে ফলবে না। তার সেই গলপটা মনে করাচি। এই গ্রামের সত্যিকার জীবন-মাটির সঙ্গে সব সময়েই এদের যোগ। মাটির সঙ্গে যোগ হারালে, গাছপালার সঙ্গে যোগ হারালে এরা বাঁচবে না। বড় বড় বশিঝাড়, কত কি বাক্ষলতা, ষাট বছর পরে যখন আমি থাকব না, তখনও ওরা থাকবে, হয়তো খকুও অতি বন্ধা অবস্থায় থাকতে পারে। তখনও ইছামতীতে এমনি ঘোলার ঢল নামবে, বনসিমতলার ঘাটে নতুন মেয়েছেলে কত ফল নিতে আসবে, হাসবে, খেলবে, জল ছড়িবে -যেমন একদিন আমরাও করেছিলাম। খাঁরকুদের হাসাতুম ভাল কি মন্দ ? মন্দ হইলে তো গন্ধ হইত এই কথাটা পািব্ব বঙ্গের সরে বলে। এবার গিয়ে মনে হল এমন বিষা-সজল দিনের গভীর আনন্দ কোন বছর এর আগে পাই নি। এ যেন একটা সাবপ্নের মত কেটে গেল-এত সন্দির সকাল-সন্ধ্যা ! ফালগন মাসে যখন শালমঞ্জরী নিয়ে গিয়েছিলাম, বা যোবার গিয়ে দেখি উড়েরা তত্ত্ব বয়ে নিয়ে গিয়ে ভাত খাচ্ছে, সেসব দিনের ঘটনা তো এখন পরোনো মনে হয়Fresh, ever young! দিনগলির মধ্যে তাজা আনন্দ তো থাকা চাই-ই, আনন্দের নব নব সন্টি সম্পটামনের প্রাণ-শক্তিরই পরিচয় দেয়। AS