পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এই সব দিনের সঙ্গে দশ-বিশ বছর আগেকার পরোনো, ছাতা-পড়া, ভঙ্গর দিনগলির যদি প্রতিযোগিতা হয়, তবে সমিতির ও আশার দরবারে সম্পমান লাভ করতে পারে না। তা হেরে যেতে বাধ্য। সেইজন্যেই সেই সব অসহায়, নিরপরাধ, নিরাপায় দিনগালোর জন্যে মমতা আসে। খব গলপ ও হাসির শব্দ। বোধহয় খকু কোন গলপ করচে ওদের কাছে। এই ঘরে শয়ে শয়ে ১৯২৪ সাল থেকে, আজ ১৯৩৮ সালের জলাই মাস পৰ্যন্ত এই গলপ তো শনে আসচি--এ একটা চমৎকার অভিজ্ঞতা। তাই কলকাতা থেকে হঠাৎ এসে একরাত্রে বারাকপরের খড়ের ঘরে নিসজান রাত্রে শয়ে সে অভিজ্ঞতাটি হঠাৎ হওয়াতে খানিকটা এমন অবান্তর বলে মনে হল যে অনেকক্ষণ ধরে নিজেকে পারিপাশিবক অবস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে চৈতন্যটাকে এর মাটিতে নামিয়ে এনে তবে সে অভিজ্ঞতাটকু গ্রহণ করতে পারলাম। তারপর আর একটা চমৎকার অভিজ্ঞতা। অনেক রাত্রে চৌকিদার হাঁকিতে বেরিয়ে আমার ঘরের মধ্যে লন্ঠন বাড়িয়ে দেখচে । আমি বল্লম.কিরে, ভাল আছিস ? চৌকিদার বল্লে-হাঁ বােব আছি। কবে আলেন বাবা ? তারপর, সে নিজের নিমোনিয়া হয়েছিল, সে গলপ বলতে শার করলে। আমার তখন সত্যই মনে হল আমি এই গ্রামেরই লোক-থাকি প্রবাসে কলকাতায় । আসলে আমার বাড়ি এখানেই। সে যে কি একটা অদভূত অনভূতি ! গ্রামের মাটির সঙ্গে এক মহত্তে সেই গভীর রাত্রে একটা ঘনিষ্ঠ যোগ স্থাপিত হয়ে গেল সরেন চৌকিদারের একটা কথায়—বাব বাড়ি আলেন কবে ? রবিবার (১৫ই শ্রাবণ), হাট করতে গিয়ে গোপালনগরের দোকানে দোকানে বেড়িয়েও ঠিক ওই রকম অনভূতি হল। একজন লোকে তো বল্লে --আপনি কি সেই থেকেই বাড়ি আছেন ? বর্ষা-সজল প্রাতে সোমবারে হোটে বনগাঁ এসেও কি তৃপ্তি! ওদেব উঠানে খকু দাঁড়িয়ে রইল। যখন আসি দরজার কাছেও দাঁড়াল একবার। বনগাঁয়ে খয়রামারির মাঠে যেখানে সেই মটরলতার ঝোপ, সেখানে এ বছর প্রথম বেড়াতে গেলাম একদিন। ছোট এড়া শিশুর জঙ্গল বড় বেশী বেড়েচে । সত্যিই অপব্ব আনন্দ পেয়েছিলাম দেশে গিয়ে এই বিষােমােখর শ্রাবণ দিনে । শক্রিবার দিন ছিল ১৩ই শ্রাবণ, আমার ছেলেবেলার ওই দিনটি আমার কাছে ছিল একটা বড় উৎসবের দিন, মনসার ভাসান বসত। ওই দিনটিতে, আর তিন-চার দিন ধরে নাচ-গান চলত জেলেপাড়ায় পরোনো মনসাতলায়। বন্য মটরলতার সবজি ফলের থোলো যখন দলত ঝোপে ঝোপে। এই শ্রাবণ মাসে, তখনকার দিনগলির সঙ্গে মনসার ভাসানের সরেন জেলের নাচ আর গান জড়িয়ে রয়েচে আমার মনে-কতকাল পরে আবার সেই তেরই শ্রাবণ, সেই মনসার ভাসানের উৎসবের সময় বাড়ি গিয়েচি, ঝোপে ঝোপে। তেমনি দলচে মটরলতার কচি সবজি ফল, মেয়েরা তেমনি নতুন শাড়ি পরে নাগ পঞ্চমীর উৎসবে যোগ দিতে চলেচে নৈবিদ্যির রেকবি হাতে-কেমন করে বাল্যের সেই সবপানজগতে হঠাৎ গিয়ে পড়েছিলাম। অতীকিতে! কিন্তু স্বপন সেটা নয়, কারণ খকু ছিল। আর হলেই বা সর্বপ্ন, জীবনের কতখানি সর্বপন দিয়ে গড়া তা কি সবাই জানে, ষ্ট’ বাংলা দেশের মৰ্ম্ম কাহিনী লকোনো আছে। এই সব নিভৃত পল্লী-প্রান্তের আমবকুল-বাঁশবনের আড়ালে, যিনি লেখক হবেন, যিনি লেখনী ধারণ করবেন বাংলার কথা ኪዖO