পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শোনাবার জন্যে তাঁকে আসতে হবে এখানে, মিশতে হবে এদের সঙ্গে, যোগ দিতে হবে এদের এই সব শান্ত উত্তেজনাহীন, তুচ্ছ, অনাড়ম্বর, অখ্যাত গ্রাম্য জীবনের উৎসবে, এদের বসবাতে হবে, ভালবাসতে হবে। খ্যাতি-যশের জন্যে বা টাকার জন্যে কেউ লেখে। FT Giffe-Jules Lemaitre-q (iš FIT-The end is nothing, the road is all —প্রত্যেক আটিসেটের মনে রাখা উচিত। হাঁ, পচা রায়ের সঙ্গে শনিবারের বিকেলে (১৪ই শ্রাবণ) কাঁচিকাটার পলে বেড়াতে গিয়েছিলাম-কি অজস্র সৌদালি ফল কুঠীর মাঠের প্রায় প্রত্যেক গাছে! আমি তো অবাক, শ্রাবণ মাসের মাঝামাঝি সৌদালি ফল জীবনে তো কখনো দেখিনি। ভালবাসা জিনিসটা কখনো কখনো কারো গায়ে পড়ে করার মত ভুল আর কিছ নেই। কারণ যাকে তুমি ভালবাসচো অত করে, সে তোমার ওই ভালবাসাকে “ভালবাসা’ বলে গ্রহণ যদি করতে না পারে, তাহলে তোমার ভালবাসার ফল কি ? ভালবাসা pity নয়, কারণা নয়, charity নয়, সহনাভূতি নয়, এমন কি বন্ধত্বেও নয়।--ভালবাসা ভালবাসা। এখন সেই জিনিসের সক্ষম মহিমা ও রসটকু না বঝে যে নষ্ট করে ফেলে অযাচিত ভাবে দিয়ে, অপাত্রে দিয়ে-তার চেয়ে মাখ আর কে ? যারা বলে, “এ তো সাবাথ পর ভালবাসা হ’ল”-- শ্ৰীধর কথকের সেই গান বাবা ইতেন--“ভালবাসিবে বলে ভালবাসিনে” ইত্যাদি—এ সব কথার কোন মানে, হয় না। ভালবাসার নিয়মই এই না পেলে দেওয়া যায় না, বা না দিলে পাওয়াও যায় না। এখানে এই কথায় খাব গভীর অর্থ আছে। ভালবাসা না পেয়ে যে ভালবাসা দেওয়া --যে পেলে তার কাছে তা আর ভালবাসা রইল না, সে তার উপযক্ত মাল্য দেবে নাসে গভীর, সক্ষম, অতীন্দ্ৰিয়, অপরােপ আনন্দ পাবে না ভালবাসা থেকে, পাবে একটা সাময়িক উত্তেজনা বা cgoistic satisfaction, তাতে ভালবাসার মৰ্যাদা ক্ষন্নি হল। আর না দিলে নেওয়াও যাবে না-আমি যাকে ভালবাসিনে, তার কাছে যদি আমি ভালবাসা পাই তাকে আমি ঘাড়ে-পড়া বালাই বলে ভাবি। তার উপযক্ত মালা ও সম্পমান আমি দিতে কখনোই পারব না। যে যত গভীরভাবে আমায় ভালবাসবে, আমার দিকে attention দেবে— ততই আমি ভাবব আমার দিকে ঝাঁকচে, বিরক্ত হয়ে উঠব। সে প্রাণপণে ভালবাসচে, অথচ যাকে ভালবাসচে, সে এ থেকে কিছই আনন্দ পাচে না।-- এর চেয়ে বিড়ম্ববনা আর কি আছে ? ভালবাসা পাওয়ায় যে সত্যিকার অপব্ব অনভূতি যা এ ধরনের পাওয়ার মধ্যে থাকে না-সতরাং এ রকম ভালবাসা এ ক্ষেত্রে না দেখানোই ভালো। ভালবাসা জিনিসটা দেওয়া নেওয়ার, আমি যে অর্থে ভালবাসা ব্যবহার করাচি সে অৰ্থে । যারা ভালবাসা কি কখনো জানে না, সত্যিকার ভালবাসা কি কখনো পায় নিতারা ‘নিঃসবাৰ্থ ইত্যাদি বাজে কথা ব্যবহার করে। ভালবাসা মনের এক অদভুত রসায়ন —উভয় মনের সমান যোগ ভিন্ন এ দিব্য, অপব্ব অতীন্দ্রিয়, দিল্লভ, রসায়ন তৈরী হয় না। যে হতভাগ্য এ আসবাদ করে নি-সো শাস্ত্র থেকে, দশন থেকে, পাঁজিপথি থেকে বড় বড় নিঃসবার্থতার বলি আওড়ায় গিয়ে-কিন্তু যে জীবনে এর আসবাদ পেয়েছে সে জানে, ওসব লম্বা লম্পাবা কথা কত অন্তঃসারশন্য ও ফাঁকা, অনেকক্ষেত্রে সম্পর্ণে অর্থহীন। ভগবান এইজন্যই বোধহয় মানষেকে ধরা দেন না—অনেক সাধনা যে করে সে তাঁর ধরা দেওয়ার মাল্য দেয়-সহজভাবে ভগবান আমাদের গায়ে এসে ঢলে পড়লে, তাঁর চেয়ে মহকুমার তুলসী দারোগার বন্ধত্বের মাল্য আমাদের কাছে বেশী দাঁড়াত। S