পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গিয়েচেন-খাঁরকুর সঙ্গে গলপ-গজব করলাম, প্রায় সাড়ে পাঁচটা পৰ্যন্ত, খাওয়া-দাওয়া করলাম। ওখানে। সম্প্রতি নাট চাকুরি পেয়ে কাল রাত্রে বেলডাঙ্গা চলে গেল। জাণ্ডিগপাড়ার বন্দোবনবাব অনেক দিন পরে এসেছিলেন-কাল তাঁর সঙ্গে বসে অনেক কথা হয়, অনেক কাজ করা গেল ওয়েলিংটন সেকায়ারে বসে। ঈদের ছটিতে বাড়ি গিয়েছিলাম, পরশ এসেছি। প্রথমে খকুদের নতুন বাড়িতে গিয়ে দেখি ওরা সেই দিনই এসেচে। ও ঘর ঝাঁট দিতে এল আমার ঘরে-কত গলপ হল। রাত্রে অন্নদাশঙ্করের সত্ৰী লীলার গলপ ও চিরপ্রভা সেনের গলপ করলাম। ভোরে উঠে চালকী। সেখান থেকে বারাকপার ইন্দদের বাড়ি। হরিপদদাদা সেখানে উপস্থিত, সে কাঠের ব্যবসা করচে। ইন্দ গলপ-গজব করলে, সে কচগাছ পািতছিল। আমার বাড়ি গিয়ে চাবি খালে জিনিসপত্র রেখে সন্নান করতে গেলাম। অনেকদিন পরে কুঠীর মাঠে ভূষণের ক্ষেতে বেড়াতে গিয়ে ভারী আনন্দ হল। তবে বন্যার জলে ছোট এড়াশিগুর গাছ সব মরে গিয়েছে দেখলাম। স্নান করে বাড়ি গিয়ে রোয়াকে বসে লিখলাম হোটেলের গলপটা। গটিকে এল-সে ভারি খাশি আমি যাওয়াতে। তাকে নিয়ে বিকেলে হাটে যাই। বিজনের ডাক্তারখানায় গলপ করলাম, নটর চাকরির কথা বলে। তারপর মাছ কিনে সন্ধ্যার অন্ধকারে চালকী এলাম। পথে লন্ঠনটা ধরিয়ে নিলাম। একজন লোককে দিয়ে। বনের মধ্যে সাঁইকাটাতে কতক্ষণ বসে। চালকী এসে তারাপদর সঙ্গে গলপ-দিদির বাড়ি গিয়ে কতক্ষণ কথা বলি। সকালে উঠে লিখি। দাপরের পরে বনগাঁয় খকুদের বাসায় এলাম। খকু একটা পরে এসে বল্লে—একেবারে গা ধয়ে এলাম—আপনার পাল্লায় পড়লে আর তো যেতে পারব না। তারপর কমলের চিঠি, সপ্রভার কবিতা পড়লে। বেলা পড়ে এল। বল্লে-চলন, ছাদে যাই, দেখিয়ে আনি। ছাদে গিয়ে অনেকক্ষণ কথাবাত্তা বললাম। মেরী এণ্টয়নেট ছবির গলপ করি। নিস্তবধ বৈকাল, ছায়া পড়ে আসচে। খয়রামারির দিকে। বেশ লাগল। চোদ্দ বছর। বয়সে কি দেখেছিল সে সম্পবন্ধে কথা। তারপর চা খেয়ে ওখান থেকে বার হয়ে লিচতলায় এলাম। আগের দিন যখন রাত্রে থাকি, বেরবার সময় বল্লে—সকাল করে আসবেন, দেরি করবেন না। লিচতলায় বিশবনাথের সঙ্গে সাহিত্য সম্মেলন সম্পবন্ধে আলোচনা, রাত আটটার ট্রেনে কলকাতা। আজ নীরদবাবার বাড়িতে সোমনাথবাবার সঙ্গে সাহিত্য সম্পবন্ধে নানা কথা হল। তারপর পাক সন্ট্রীট দিয়ে চৌরঙগী পৰ্যন্ত হোটে এলাম। বেশ লাগছিল শহরের এই জনস্রোত। মেট্রোর সামনে খাব ভিড় Marie Antoinetc ছবি দেখানো হচ্ছে, নম্পমাশিয়ারার নেমেচে প্রধান ভূমিকায়। রাস্তায় রাস্তায় সাধনা বোস, কাননীবালার ছবিওয়ালা বিজ্ঞাপন। পঞ্চাশ বছর পরের কলকাতা কলপনা করলাম। কেউ নেই এরা। কেউ নেই আমরা। সাধনা বোস প্রাচীনা বাদ্ধা হয়ে হয়তো বেচে আছে। তখন নতুন একদল উঠেচে, তাদের নাম কেউ জানে না। জীবনের চিত্ৰ-নাট্যপটে কত অদভুত পরিবত্তািন । গিরিশ ঘোষের স্কুলের প্রবীণা অভিনেত্রী বিনোদিনী আজও আছে। গঙ্গার ধারে বসে মালা জপ করে । এই তো জীবন-এই যাওয়া, এই আসা, এই পরিবত্তন। দেখতে বেশ লাগে। আমি সবটা মিলিয়ে দেখি-একটি চমৎকার সিনেমার ছবি। এই খকু, এই সপ্রভা, বনসিমতলার ঘাট, আমি-কে কোথায় মিলিয়ে যাব। YS