পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কত ঘটনা তারপর ঘটে গোল-গৌরী এখানে এল, তাকে নিয়ে পানিতরে গোলামসে মারা গেল-তারপর জব্বলপাের, হরিনাভি, চট্টগ্রাম, ঢাকা, আবার কলকাতা ভাগলপাের—আবার কলকাতা, (১৯৩৩-৩৯)-কত কি, কত কি। আবার এতকাল পরে ও এসেচে, ওর সঙ্গে বিকেলে বেড়াতে এসোচি বেলেডাঙ্গায়। ওর সঙ্গে অনেক গলাপ করে আইনন্দির বাড়ি গিয়ে দজনে বসি। ওবেলা আমগাছে পরগাছা হয়েছিল। তাই তুলে এনেছিলাম। খকু তাই পরে এসে দেখালে কেমন দেখাচ্চে। গ্রীল্ডেমর ছটি আরম্ভ হয়ে গিয়েচে—এতদিন পরে বেশ লািগচে। 丽*邸 হয়েচে শিউলিতলার উঠোনে আসা-যাওয়া—নারকোল গাছের পাতায় লন্ঠনের আলো পড়া-সেই সব প্রতি বছরের মত। বিকেলে একটা সৌদালি গাছে ঠেস দিয়ে কুঠীর মাঠে অনেকক্ষণ বসেছিলাম। তারপর বনসিমতলার ঘাটে এসে দেখি খকু ঘাট থেকে পথে উঠেচে। খড়ীমা তখনও জলে। । ওরা উঠে চলে গেল, আদাড়ি এসে নামল জলে। আজ কি চমৎকার কালবৈশাখীর কালো মেঘ করে এল। কাঁচিকাটার দিকে। জলে দাঁড়িয়ে চেয়ে চেয়ে দেখলাম। তারপরে শিমলতলায় এসে দেখি উত্তর মাঠে কালবৈশাখী আরও নিবিড় হয়ে আসচে। কত কথা মনে করিয়ে দেয় এই বারাকপরের কালবৈশাখী—এমন আর কোথাও যেন দেখিনি। জ্যৈষ্ঠ মাসে এখানে আসা সার্থক এই কালবৈশাখীর অপব্ব সৌন্দৰ্য্য দেখতে পাওয়া যায় বলে। বারাকপরে আজকাল জীবনটা নানা সখেদঃখে হৰ্ষবেদনায় সম্পন্দমান, পরোনো দিনের সমিতির পনরাবত্তি মাত্র নয়—তাই হয়েছিল। কিন্তু দিনকতক, ১৯২৩-১৯৩৩ সাল পর্যন্ত। অদ্ভুত ধরণের জীবন্ত দিন আজকালতবে বোধহয় এইবার যেন আরও বেশী। পরশ সাপ্রভার পত্র পেয়েচি-রত্নাদেবীর চিঠিতে তিনি লিখচোন তাঁদের ওখানে যেতে। দেখি কতদার কি হয়। আজ সকালে যখন কুঠীর মাঠে গিয়েচি, তখনই দরে কোথাও আকাশের কোলে মেঘ ডাকচে । কি সৌদালি ফলে-ভরা মাঠের শোভা। ওপাড়ার ঘাটে যখন নেমেচি জলে, তখন ঝড়ো মেঘের কি শোভা ! ঘন কালো মেঘপঞ্জ ঘরে ঘরে ওলট-পালট খেতে খেতে মাধবপরের মাঠের দিকে উড়ে চলেচে-তারপরেই এল ঝম ঝম বন্টি। খানিক পরে উঠল। রোদ। খকু ওই অত বেলায় উঠে যাচ্চে নদিদির বাড়ি থেকেআমি বলতেই হেসে চলে গেল। তারপর সারাদিনের মধ্যে কতবার এল গেল-নানা ছতোয়। আমতলায় চেয়ার পেতে বসে আছি—দবার এসে খানিকক্ষণ করে রইল। বলে—এক পা এগিয়ে যাই তো দ’ পা পিছই। কেন তা কি জানি। সে কথাটা ওদের দাওয়া থেকে নেমে ছটে এসে আমতলায় বলে চলে গেল। বিকেলে গোপালনগর থেকে এসেচি-ও অমনি এল শিউলিতলায়। খানিকটা পরে নাপিত বোঁ আসাতে আমি চলে গেলাম গা ধতে। ভূষণ মাঝির জমির ওপারে সোঁদালনী ফল ফটেচে—সে দিকে চেয়ে আমার কি আনন্দ-এমন অপব্ব আনন্দের অনভূতি কোথাও হয় না কেন, তাই ভাবি ৷ জলে গা ধতে নেমেও যেন আর উঠতে ইচ্ছে করে না। বনসিমতলার ঘাট, একফালি চাঁদ আকাশে, কুচি-কাঁটার জঙ্গল-ঘাটে সনানরত খকুর দিদি-বিশেষতঃ ঘাটের পথে —এই সব মিলে কি আনন্দই এল মনে!! অপব্ব আনন্দে কাটচো গ্রীল্ডেমর ছটিটা। রোজ সকালে উঠে। মনে হয়। আজ না জানি কি ঘটবে। খকু থাকে বলেই আনন্দটা ঘনীভূত হচ্চে। আনন্দের উৎসমােল তো ওই-ই। SO