পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আজ ভারী চমৎকার কালবৈশাখী হয়ে গেল বিকেলটাতে। কালবৈশাখীর যে অপব্ব প্রকাশ এখন সন্ধ্যার কিছর আগে! একটা চাপা রাঙা মেঘ হয়েচে এমন অপ রপ। কাল চাটগাঁ থেকে রেণ্যর পত্র পেয়েচি। সে লিখেচে-বাবা, আপনি একবাজ এখানে চলে আসন। লিখতে লিখতে মেঘটা অতি অপরােপ রাঙা রং ধরেচে। বারাক পরে এবার অতি সন্দর কাটচে—তবে ঝড়-বাণিটি অতি কম-কদিন তো বেশ গরম গেল । আমি আর কালী কুঠীর গাছে ডমর পাড়লাম। তারপর বেলডাঙা যেতে যেতে ভীষণ কালবৈশাখীর ঝড় পেলাম। ঘোষেদের দোকানের মধ্যে আমি, কালী, আইনন্দির নাতি আর দোকানদার মন ঘোষ। ঝড়ের বেগে দোচালা জীণ ঘর উড়ে যায়। আর কি-সবাই মিলে বাঁশ ধরে থাকি-তবে রক্ষা হয়। তারপর দেখি বড় অশবত্থ গাছটা পড়ে গিয়েচে । আমার নারকোল গাছটাও পড়েচে। খকুৱা নারকেল কুড়িয়ে রেখেচে সব। খকু সন্ধ্যার সময় আমায় লন্ঠন ধরে ওদের বাড়ি নিয়ে গেল। বল্লে, আজ খব ভালো গলেপার দিন। যাবেন না। আমাদের বাড়ি ? ও রোজ সন্ধ্যার সময় আমায় নিতে আসে-ছতো করে নদিদিদের বাড়ি আসে আমায় নিয়ে যেতে। যাবার সময় বলে--যাবেন না কি ? আজ বিকেলের দিকে অপব্ব কাজল মেঘ করে এল—থমকে রইল, বান্টি হয় না। খাৰু আজ সকাল থেকে কতবার যে এল! আমি বেলেডাঙ্গায় বেড়াতে গেলাম, পালের এধারে ঘাসের ওপরে বসি। খেজর গাছে কাঁদি কাদি খেজর, শিমল, বাঁশি বনের মাথায় কালো কাজল মেঘ (খরকুকে দাপরে বলছিলাম আমতলায় যখন সে দিলীপ রায়ের ‘তরঙ্গ রোধিবে কে ?” বইখানা দিতে এল-তুই বলতিস-কা-লো-কাজল মেঘ) সব সন্ধি মিলে বড় অপব্ব লাগল। এই পল্লীগ্রামের যে জীবনযাত্রা, শতাব্দীর পর শতাব্দী এই রকম, এই বাঁশি শিমল বনে অপরাজেয় শোভা এমনি ধারা দেখা যায়—বিঙে ক্ষেতে এমনি ফােল ফোটে-কত বনাসিমতলার ঘাট, কত গ্রাম্য মেয়ে, কত হাসি কান্না প্রেম বিরহ-এই রকম চলবে। এদের নিয়ে একটা বড় উপন্যাস লিখব। আজ মাথায় এসেছে। পথিবীর উদ্ধের্ব এই শ্যামল মেঘ-সন্তােপ যেমন শান্ত, স্থির তেমনি নিবিবর্তকার। মহাকাল যেন এই উপন্যাসের পটভূমি—নায়ক-নায়িকা গ্রাম্য নরনারী। Da Vinci-র শেষ জীবনের মত গম্ভীর তার আকতি। সন্ধ্যায় সন্নান করে ফিরে এলম—খকু মনোরমার মার সঙ্গে বাঁশতলার পথে ঘাটে যাচে । তাকেও এই উপন্যাসের মধ্যে সস্থান দেব। আজ দিনটি সব দিক দিয়ে ভারী চমৎকার। বেশ মেঘ করে এল, ঘন আমতলায় চেয়ার পেতে বসে দাওয়ার কোণে দন্ডায়মানা খাকুর সঙ্গে কথা বলাচি। দর্পরের পর ইন্দ, আমি, গটকে কুঠীর মাঠের পথ দিয়ে মোল্লাহাটি গেলাম। ইন্দ গেল। আমডোবে। আমি ও গটকে মোল্লাহাটি কুঠী ও নীলের হাউজঘর দেখি এতকাল পরে। কি সন্দির শ্যাম শোভা, অনান্নত খেজর গাছ, জলি ধানের ক্ষেত পথের দ পাশে, একটা সমাধি দেখলাম। বাঁওড়ের ধারে মোল্লাহাটিতে। ফিরবার পথে খািব জামরাল পাড়লাম দাধারের গাছ থেকে। বেলা পাঁচটার সময় ফিরে রোয়াকে এসে বসেচি, খকু এসে অনেকক্ষণ গলপ করলে । ܦܬܬ দিনলিপি-৬/উৎকণ-৭