পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আজ সকালে নদীর ধারে বেড়াতে গিয়েচি, অপরােপ নীল মেঘ ওপারের চরের ওপরে ঝলে পড়েচে। তাড়াতাড়ি এসে খকুকে ডাকলাম-খাঁরকু, খাকু, উঠে মেঘের অপব্ব রােপ দেখে যা-ও ঘােম ভেঙে উঠে ঘািম-চোখে মশারীর বাইরে মািখ বার করে বলল, আজ এত কাল পরে বর্ষা নামল বোধ হয়। পথেঘাটে কালো এত ধলো— যে একখানা গরর গাড়ি গেলে ধলোয় সব্বাঙ্গ ভরে যায়। শেষ জ্যৈষ্ঠে এমন শকিনো খটখিটে রাস্তা, এমন ধলো কখনো দেখিনি। আজও ধলো ভেজেনি পথের। এ বভিটতে দিনটা ঠান্ডা হল মাত্র। এবার গ্রীল্ডেমর ছটির প্রতিদিনটি যে আনন্দ বহন করে আনে, তা মনের আয়কে যেন বাড়িয়ে দিয়েচে। দেহের যৌবনের ন্যায় মনের একটা যৌবন আছে, মনের যৌবন চায় নব আনন্দ, নব নব ভােবরাজি, আশা, উৎসাহ, সৌন্দয্যময় চিন্তা, কলপনা, ভক্তি, বিরাটত্বের স্বরপ উপলব্ধি। এবারকার মত সোঁদালি ফলের মেলা, তুতি ফলের ও বিলবপন্ডেপর সগন্ধ অন্যবার দেখা যায় নি, কারণ এবার ঝড়-বান্টি বাদলা নেই বল্লেই হয়—খকু এখানেই আছে, সে সব্বদাই আসচে, গলপ করচে, গোপালনগরে বারোয়ারীর যাত্রা হবে, আমার বাল্যবন্ধ কালী অনেকদিন পরে গ্রামে এসেছিল, এই সব নানা কারণে গ্রীল্ডেমর ছটিতে এমন আমোদ অনেক দিন হয় নি। খকু এই সবে নদিদির ঘর খােলবার ছতো করে এসে গলপ করে গেল উঠোনে দাঁড়িয়ে। এই সব বিরাট আকাশের তলে, বন-গাছের ছায়ায় যেসব সখদঃখের ক্ষদ্র প্রবাহ চলেচে-তার সঙ্গে অলপ দিনের মধ্যেই আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পড়েচি যেন, ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করে না। ১৯২৯ সালের গ্রীল্ডেমর ছটিতে প্রথম আসি বারাকপরে, এটি ১৯৩৯ সাল। এই এগারো বছর কি চমৎকার কাটল! কত বিষার শ্যামল-মোদর আকাশ, কত হেমন্ত জ্যোৎসনা রাত্রি, কত শীতের অপব্ব সন্ধ্যা নানা অনভূতিতে মধর হয়ে উঠল। আমার জীবনের ১৯২৯-১৯৩১ সাল পৰ্যন্ত এই যে সময়টা চমৎকার সময়। ছটি ফরিয়ে এল। আর দশ-এগার দিন। কিন্তু এবার যেমন বান্টি একদিনও হয়নি-ব্যাঙ-ডাকানি বর্ষা, সারারাত ধরে বন্টি-বড় ; সে সব হয়নি বা নাইবার সময়ে ঘাটের পথে খাপরা কুচির ওপর দিয়ে জলের তোড় চলে যায়-কে চোর দল জলে বকে হেটে যায়। এ-ও এবার হয়নি। মাস ফরিয়েচে। হাজারী পাগলার মাকে সেদিন পৰ্যন্ত আমবাগানে আম কুড়তে দেখোঁচ-আজকাল আর দেখিনে। কদিন বারোয়ারির আসরে গোপালনগরের গণেশ অপেরা পাটির গান হল। রোজ শািনতে যৌতুম—-একদিন তো বনগাঁ থেকে নাটার ট্রেনে নেমে যাত্রা শনে রাত দটােতে ফিরি। শেষদিন যাত্রা হল হাজারি প্রামাণিকদের বাড়ি। সাধনীরদা, জিতেন, আমি-তাস খেলা হল সন্ধ্যাবেলা। কারণ খাব মেঘ ছিল আকাশে, টিপ, টিপ বষ্টি হচ্ছিল বলে যাত্রা আরম্ভ হতে পারেনি। ছটি শেষ হয়ে এল। প্রায়। বাঁশবনে পিপল লতার বন দেখা দিয়েছে। ভেদলা ঘাসের কুচো সাদা ফল মাঠে অজস্র ফািটতে শার করেচে। কোকিলের ডাক অনেক কমে এসেচে—তবে বৌ-কথা-কও ডাক চে বেশী। এই যে লিখচি, জানালার উপরে বসে-হরি রায়ের বড় খেজর গাছটা থেকে ডাঁসা খোঁজরের মিলিট গন্ধ ভেসে আসছে। আজ ও বেলা খাকুকে একটা কবিতা লিখে শোনালােম সকালে। আজও সকালে বাঁওড়ের ধারের বট-অশবখ গাছের ছায়ায় ছায়ায় বেলেডাঙ্গা পয্যন্ত গিয়েচি। ছতোর ঘাটার কাছে দেখি, রাখাল বাঁড়িয্যের সত্ৰী সনান করে আসচেন। বল্লম, ও খড়ীমা, আপনার ভাই চলে গিয়েচে ? উনি বল্লেন, সে তো সেদিনই গিয়েচে । আমিও যাব। এদেশে আবার মানষ বাস করে ? বল্লম, কেন, এদেশের ওপর হঠাৎ ଈକ୍