পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

একদিন রাত্রে বারাকপরের বাড়িতে যে লোকটি আমায় কবিতা শনিয়েছিল, সেই কুন্ড মশায় আমাকে নিভৃতে ডেকে তার নতুন লেখা কবিতা শোনালে। গৌর কলর দোকানো বসে অলপক্ষণ গলপ করি। এসব জায়গায় আসিনি আজ চার মাস-সেই জ্যৈষ্ঠ মাসের ছটির পর আর আসিনি। এসব জায়গায় যেন বারাকপরের জ্যৈষ্ঠ মাসের গরমের ছটির আবহাওয়া মাখানো, খকু মাখানো, বকুলতলা মাখানো-আমার হাট করে নিয়ে যাওয়া, “ও খকু হাট নিয়ে যা, খড়ীমা কোথায় ?” সেই সব দিনের শত সমিতি জড়ানো গৌর কলার দোকানের সঙ্গে। ফিরবার পথে গাজিতলায় ভাঙনের ধারে গিয়ে কতক্ষণ বসে রইলাম। ওই দরে বনাসিমতলার ঘাট, কে একটি ছোট মেয়ে যেন এখনও সন্নান করে ভিজে চলে ভিজে কাপড়ে বনসিমতলায় ঝোপের পাশ দিয়ে যেতে যেতে একবার চকিত নয়নে পিছন দিকে চাইলে। বনগাঁয়ে ফিরে সাব্বজনীন পাজার আরতি দেখতে গিয়েচি প্ৰফল্লিদের বাড়ি। আজ দাবেলাই খকুদের বাড়ি যাইনি। একটা পরে ভিড়ের মধ্যে খকু এসে দাঁড়াল, চারিদিকে চেয়ে দেখলে—তারপর চৌকির ওপর উঠে দেখতে লাগল। আর মাঝে মাঝে এদিকে চাইচে। বেজায় রাগ করেচে। আজ সারাদিন যাইনি বলে। পরদিন সকালে ভয়ানক অনাযোগ ও অভিমানের পালা । তারপর একদিন নকফােল হরিপদ চক্রবতীর বাড়ি নৌকো করে নিমন্ত্রণ খেতে গেলাম-আমি, মন্মথদা, বিভূতি। আমাদের ঘাটে নেমে গটকেকে ডাকতে গেলাম, আমি বিভূতি ও মন্মথন্দা। গটিকে ইন্দর ছেলে, গরীব বাপ, ভাবলাম নিয়ে যাই, ভালো-মন্দটা খেতে পাবে এখন। গিয়ে শনি তার জবর। সন্ধ্যার সময় নকফল থেকে যখন ফিরচি, তখন দেখি দেব একখানা নৌকো। থেকে বলচে-ও বিভূতিদা!.দজনেই বেড়াতে বার হয়েচে মহাস্টমীর দিনটা! বনগাঁতেই ছিলাম। খয়রামারির মাঠে বেড়াতে যৌতুম। একদিন গিয়েছিলাম চালকী। নরেনদা এসে নিমন্ত্রণ করেছিল। অজস্র বন-তারার ফল ফটেচে বনে ঝোপে, ছাতিম ফল ফটেচে—বলিট থেমে যাওয়ার দরবন পথঘাট খাটা খট করচে শকনো, বেশ লাগল। চালকীতে খেয়ে দেয়ে গেলাম বারাকপাির। আমার রোয়াকে চেয়ার পেতে বসলাম সেই জ্যৈষ্ঠ মাসের পরে। মনে হল এক্ষনি খকু যেন অচিল উড়িয়ে আসচে পাশের বাড়ির শিউলিতলা থেকে। আর তার সঙ্গে ওভাবে জীবনে কখনই হয়তো দেখা হবে না। আর কোনদিন সে অচিল উড়িয়ে পাশের উঠোনের পথটি বেয়ে আসবে না। আগের মত। মনে পড়ল ওদের উঠোনের ওই বড় শিউলি গাছটার ফল ফাটত এই পজোর সময়-আমি বসে বসে এইখানে 'আইভানহো’র অন্যবাদ করতুম, আমার কাছে রোজ সন্ধে-বেলা আসাই চাই ওর--ভোরের গাড়িতে নানা ছতো করে আমার বনগাঁ থেকে আসা—সেসব দিনের কথা কোনদিন ভোলা যাবে না। তারপর ঘাটের ধারে গাটকের সঙ্গে মাছ ধরা দেখতে গেলাম। সত্যুকাকা, ইন্দ, শ্যামাচরণদা। মাছ ধরচে। ইন্দ গলপ করতে করতে পাকা রাস্তায় এল। বেলা তিনটে পর্যন্ত বাড়িতে শয়ে থেকে মন্মথন্দার বাড়ি এসে চা খেলাম। তারপর ক্ৰমে ক্ৰমে ওখানে খােব আডা হত। সন্ধ্যাবেলা খকুদের বাড়ি যে,তুমিও গ্রামোফোন বাজালে একদিন। আমার জন্যে জরদার কোঁটাে এনে বল্লে-পারতি "খাবেন ? পারতি ? তারপর গত শনিবারে বনগাঁ থেকে চলে এলমে কলকাতা এবং সেইরাত্রেই প্ৰঘাটশীলা রওনা হই। ঘাটশীলার বাড়িটা বেশ হয়েচে। কমল খাব যত্ন করলে। যেদিন সকালে গেলাম ঘাটশীলা—সেদিনই দর্পরের গাড়িতে গালডি গেলাম নীরদবাবদের বাড়ি। শ্যামবাবার সঙ্গে গেলাম আর বছর যে ঘরে জবর হয়ে পড়ে থাকতুম, সেই NG