পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পথে বীরেশ্ববরবাবার সঙ্গে দেখা রাণাঘাট গেটের কাছে-আমি ডাকলাম, তিনি চাইলেন, কথা হল না। মন্সেফ সস্ত্ৰীক মোটরে ফিরে যাচ্চে-চেয়ে হাসলে। সপ্রভার পত্ৰখানা কাল রাত্রে লিখেছিলাম-বনগাঁ থেকে টিকিট কিনে সকালে পোস্ট করেচি ওবেলা। কাল ইউনিভাসিটি থেকে কাগজ আনিব। সেদিন ইউনিভাসিটির মিটিংএ অজয় ভট্টাচায্যের সঙ্গে আলাপ হল। প্রমথ, বিজয়, পরিমল, গোপাল হালদার আমরা সব একসঙ্গে বেরিয়ে একটা চায়ের দোকানো বসে আড়া দিতে দিতে চা খাই। সেই দিনই রাত ন’টায় কমলরাণীর নিমন্ত্রণে ওদের সঙ্গে বিশ বছর আগে” দেখে এলাম রঙমহলে। মন্মথ রায়ও একদিন “কুমকুমা দেখবার নিমন্ত্রণ করেছিলেন। অনেক ঘটনা ঘটে গিয়েচে এই দেড় মাসের মধ্যে। সপ্রভার সঙ্গে দেখা করতে ঈসন্টারে শিলং গেলাম। সেখানে জত্তিজনা ও সেবা প্ৰথমে বল্লে, সপ্রভা ছটিতে মিরালী চলে গিয়েচে। তারপর হাসতে হাসতে সপ্রভা এল। ক'দিন খাব বেড়ানো গেল। ওখান থেকে চলে আসার কিছদিন পরে ঘাটশীলা গেলাম-এবং সেখান থেকে এসে ঢাকা গেলাম রেডিওতে বক্তৃতা দিতে। রত্না দেবীর বাবার বাড়ি গিয়ে উঠলাম। বেশ কাটল সেখানে। ইতিমধ্যে সপ্রভার বিবাহ হয়ে গেল। গত ১৫ই বৈশাখ। আমি গত শনিবারের সাহিত্য-বাসর উপলক্ষে মন্সেফবাবর বাড়িতে গেলাম। মায়া ও কল্যাণী ছাড়লে না-ওদের বাড়িতে রইলাম। রাত্রে ওদের ছাদে গলপা। পরদিন আমাদের পরোনো বাসায় গেলাম। সেই জানলার ধারে দাঁড়াই। পাঁচী এসেচে, দেখা ठूल्न । আজ দেশ থেকে ফিরলাম। ঘাটশীলা যাব, গ্রীন্মের ছটি প্রায় শেষ হয়ে গেল। খাঁকু বনগাঁয়ে এসেছিল অনেকদিন পরে, ওর সঙ্গে দেখা হল দতিনদিনের জন্যে। কল্যাণী খাব সেবাযত্ন করেছিল। গ্রীল্ডেমর ছটিটা এবার কি আনন্দেই কাটল! রোজ নদীজলে নাইতে নেমে সে কি আনন্দ! বিশেষ করে একদিন অনেক রাত্রে বনগাঁ খাঁকুদের বাড়ি থেকে ফিরে। আর একদিন কুঠীর মাঠের আঘাটার পাশে নেমে। সেই রকম আম কুড়চ্চে পাগলার মা, হাজারী-আজও দেখে এসেচি। এখনও খাব আমি । এবার আদৌ বান্টি হয়নি। আজ আষাঢ় মাস, দেশের পথে সব্বত্র ধলো, খানা-ডোবা সব শকিনো, ভীষণ গরম, এমন কখনো দেখিনি। সপ্রভা লকিয়ে পত্র লিখেছিল, বেলেডাঙ্গার আইনন্দির বাড়ির পিছনে বসে তা পড়েছিলাম—আর চিঠি লিখেছিল। জডিজ না। কাল নাদি চলে গেল গোপালনগর সেন্টশনে কলকাতার গাড়িতে, খাকুর সঙ্গে ওরা যাবে মানকুন্ড। কাল খকুও চলে গেল বনগাঁ থেকে। পরশ সাবডেপটি অজিত বস, মন্সেফ হরিবাব, সবাই গিয়েছিলেন। আমার বাড়িতে। আমাদের ভিটেতে গিয়ে মায়ের কড়াখানা দেখলে। তেতুিল গাছের ওপর আমায় বসিয়ে ফটাে নিলে। বাবার সন্মতিস্তম্ভ সম্পবন্ধে কথাবাত্তা হল। কাল সন্ধ্যায় জ্যোৎস্নালোকে বেলেডাঙ্গা থেকে বেরিয়ে আসবার পর কুঠীর মাঠের আঘাটায় সন্নান করে ফিরচি, আমাদের বাড়ির পেছনের বাঁশবনে কোথাও জ্যোৎস্না, কোথাও জোনাকির ঝাঁক জৰলচে—থমকে দাঁড়িয়ে রইলাম। কতক্ষণ । এক অদম্পটি অনভূতি! আবার যেন আমি বালক হয়ে গিয়েচি, এইমাত্র ভরতদের সঙ্গে সলতেখাগি আমতলাটার ময়না গাছের ধারে আম কুড়িয়ে ফিরচি-সারা গাঁ আমার শৈশবের